বুধবার ● ১১ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » অপরাধ » পাইকগাছার জিরবুনিয়া সম্মিলনী বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন
পাইকগাছার জিরবুনিয়া সম্মিলনী বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন
এস ডব্লিউ নিউজ ॥
পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের জিরবুনিয়া সম্মিলনী বিদ্যানিকেতন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে আনীত ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার সকালে সরেজমিন গিয়ে তদন্ত সম্পন্ন করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জয়নাল আবদীন। তদন্তকালে বেশিরভাগ অভিযোগের সঠিক কোন জবাব দিতে না পারায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ বেশিরভাগ সদস্যরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও বহিষ্কারের দাবী জানান। এরআগে ১ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য প্রবীর গাইন, চিত্তঞ্জন মন্ডল, আনারুল গাজী ও হরিদাশ মন্ডল পদত্যাগপত্রাকারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন করার মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণার দাবী জানান।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানাযায়, জিরবুনিয়া সম্মিলনী বিদ্যানিকেতন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্রনাথ মন্ডল ম্যানেজিং কমিটিকে উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছেমত স্কুল পরিচালনা করছে। প্রধান সহকারী কুমুদ রঞ্জন জানান, প্রধান শিক্ষক যা বলেন আমাকে তাই করতে হয়, তবে আমার বেশিরভাগ কাজ তিনি নিজের ইচ্ছেমত আমাকে ছাড়া করে থাকেন। প্রধান শিক্ষক অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। বিদ্যালয়ে কোন জাতীয় দিবস সঠিক ভাবে পালিত হয় না বলেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট হতে বেতন ও প্রশ্ন ফি’র টাকা আদায় করে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। উপবৃত্তির সুবিধা দেওয়ার কথা বলে অভিভাবকদের নিকট থেকে ১ হাজার এবং সেলাই মেশিন প্রদানের কথা বলে ২ হাজার ও ডিগ্রী পর্যন্ত ফ্রি লেখাপড়ার সুবিধা দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। অভিভাবক কবিতা রানী শীল, রিংকু মন্ডল ও প্রদীপ মন্ডল জানান, প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে উপবৃত্তির সুবিধা ও সেলাই মেশিন প্রদানের কথা বলে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। কিন্তু আমরা এর কোন সুবিধা এখনো পায়নি। এমনকি উপবৃত্তি সুবিধা ভোগীদের নিকট থেকে যাতায়াত খরচ বাবদ ৫০ টাকা হারে নিয়ে থাকেন বলে শিক্ষার্থী দূর্জয় মন্ডল জানিয়েছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের ল্যাপটপটি নিজের প্রয়োজনে বাড়িতে রাখায় বিদ্যালয়ে বন্ধ হয়ে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস। চলতি বছর একদিনও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হয়নি বলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির জ্যোতি রায় ও ১০ম শ্রেণির ফাতেমা খাতুন জানায়। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পরোক্ষভাবে নিষেধ করা হয়। ১০ম শ্রেণিতে বর্তমানে সায়েন্সের কোন শিক্ষার্থী নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থী পূজা মন্ডল। কমার্সের হিসাব বিজ্ঞানের কোন ক্লাস হয় না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী মাহমুদা খাতুন। আর্থিক হিসাব নিকাশেও রয়েছে ব্যাপক গড়মিল। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আনারুল গাজী জানান, বিগত কমিটিতেও আমি সদস্য ছিলাম, বিগত কমিটির মেয়াদ শেষে স্কুল ফান্ডে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা রেখে দেওয়া হয়। যার কোন হিসাব প্রধান শিক্ষক আজও দিতে পারেনি। এমনকি দুই মাস পরপর মিটিং করার কথা থাকলেও গত ৬ মাসের মধ্যে বিদ্যালয়ে একটি সভাও হয়নি। বুধবার সকালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জয়নাল আবদীন অভিযোগের তদন্তে আসলে বেশিরভাগ অভিযোগের প্রধান শিক্ষক সঠিক কোন জবাব দিতে পারেনি বলে বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্মল কান্তি মন্ডল জানান। সভাপতি নির্মল জানান, প্রধান শিক্ষক কিভাবে অর্থ তছরুপ করতে হয় সেটা তিনি ভাল জানেন। এ জন্য সবসময় স্কুলে লেখাপড়ার দিকে তার কোন দৃষ্টি থাকে না। দৃষ্টি থাকে লুটপাটের দিকে। জাতীয় দিবস গুলোও তিনি পালন করেন না। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্তে আয় ব্যয়ের সঠিক কোন হিসাব নিকাশ দেখাতে পারেনি এবং বেশিরভাগ অভিযোগের সঠিক কোন জবাব দিতে না পারায় আমি সহ ম্যানেজিং কমিটির বেশিভাগ সদস্য তদন্ত কর্মকর্তার নিকট প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও বহিষ্কারের দাবী জানিয়েছি। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আগামী ১০ দিনের মধ্যে অভিযোগের সকল বিষয় নিরসন করার মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির সাথে সমন্বয় করে সুন্দরভাবে স্কুল পরিচালনার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দিয়েছেন।