বৃহস্পতিবার ● ১২ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » ডুমুরিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মধুমাখা তাল পাতার পাখা
ডুমুরিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মধুমাখা তাল পাতার পাখা
অরুণ দেবনাথ,ডুমুরিয়া।
খুলনার ডুমুরিয়ায় তাল পাতার পাখা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে সাজ্জাত আলী শেখ (৬০) নামের এক ব্যাক্তি। গত ৪০ বছর এ পেষায় নিজেকে আত্ম নিয়োগ করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট সংসার পরিচালনা করে আসছেন তিনি। কিন্তু ২/৩ বছর ধরে ভাল দিন কাটছে না তার। দিনে দিনে যেন এ পেষায় নেমে আসছে ভাটা। কুমছে চাহিদা,মিলছে না কাঁচা মাল,তার উপর মিলছে না উপযুক্ত মূল্য। নেই আধুনিক প্রশিক্ষন,নেই পর্যাপ্ত পুঁজি। সব মিলে ভাল নেই সাজ্জাত মিয়ার পরিবার এমনটি জানিয়েছেন তিনি।সে দিন ছিল ২৫শে চৈত্র। লোক মূখে খবর পেয়ে দুপুরের খরা উপেক্ষা করে ছুটে গেলাম সাজ্জাত মিয়ারকুঠিরে।ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় শোভনা কাউন্সিল সড়কের পাশে ছোট্র একটি কুড়ে ঘরে বসে আপনমনে কাজ করছেন সাজ্জাত মিয়া। কিছুক্ষন পাশে বসে কাজ দেখার পর তার নিকট থেকে একটু সময় চেয়ে নিলাম।এরপর তিনি তুলে ধরেন জীবন যুদ্ধের অনেক কাহিনী । তিনি জানান শোভনা বাঁজাদার পাড়া এলাকার মৃত শরিয়তুল্লার এক মাত্র ছেলে তিনি। বাবার পেষা ছিল তাল পাতার পাখা তৈরী। তাই উত্তরাধীকার সূত্রে তিনি বেছে নিয়েছেন এ পেষা। ৪০ বছর ধরে এ পেষায় তিনি মোটা ভাত-কাপড়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু এখন সে গুড়ে বালি ২/৩ বছর হল ভাল দিন কাটছে না তার। এ পেষায় নেমে আসছে ভাটা। কুমছে চাহিদা,মিলছে না কাঁচা মাল,তার উপর মিলছে না উপযুক্ত মূল্য। নেই আধুনিক প্রশিক্ষন, নেই পর্যাপ্ত পুঁজি। তিনি অভিযোগ ও অভিমান করে বলেন এক সময় তাল পাতা পাখার ব্যবহার ছিল বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। গ্রীস্মের দুপুর ও রাত কাটতো পল্লী গীতি,ভাটিয়ালী,জারি সারি ও তাল পাতার মধু মাখা বাতাস খেয়ে। কিন্তু সে সব দিন এখন আর নেই।প্লাস্টিকের পাখা,ইলেক্ট্রিক ফ্যাান,এসি কেড়ে নিয়েছে মধু মাখা তাল পাতা পাখার স্থান। ফলে কুমছে চাহিদা,আর হ্রাস পাচ্ছে মূল্য। তিনি তার কর্ম বিবারনী দিতে গিয়ে বলেন গ্রাম ঘুরে তাল পাতা কিনতে হয়,তাও এখন আর সে ভাবে মিলছে না। প্রথমত দিন ব্যাপি ঘুরে প্রতিটি পাতা ৫ টাকা ও কুঞ্চি বা বাঁশ কিনতে হয়। এরপর ৩ জন লোকের শ্রমে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টি পাখা তৈরী করা যায়।যার তৈরী মুল্য প্রায় ১২‘শ টাকা। আর বিক্রি ২৮‘শ টাকা।একেতো সিমিত লাভ তারপর মাঝে মধ্যে বাজারে বাজারে নিয়ে ঘুরে বিক্রি করা লাগে। এর আগে পাখা তৈরী করে পারতাম না,বাড়ী থেকে পাইকেড়রা চড়া মূল্যে কিনে নিয়ে যেত। লাভ ভালহত। মোটা ভাত-কাপড়ে জীাবকা নির্বাহ করতাম।কিন্তু এখন সে গুড়ে বালি।বাপ-দাদার আদি পেষা তাই আজও ধরে রেখেছি। তিনি আরো জানান যদি আধুনিক প্রশিক্ষন, সরকারি উদ্যোগে ঋন সহেতা পেতাম তাহলে হয়তো প্রতিযোগিতা বাজারে টিকে থাকা যেত। কিন্তু এ দিকে কেউ তো নজর রাখে না, তাই আদি পেষা ছেড়ে হয়ত অন্য পেষায় পা রাখতে হবে।এ বিষয় নিয়ে কথা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুরের সাথে।তিনি জানান পাখা নির্মান পরিবারের সংখ্য খুবই কম।সংখ্যয় বেশী হলে তাদের বিষয়টি ভেবে দেখা যেত।তারপরও তাদের বিষয়টি মাথায় থাকলো দেখি তাদের জন্য কতটা করা যায়।