সোমবার ● ২১ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » বিবিধ » “ঘোল নেবে ঘো…ল, ভাল ঘোল”—গ্রামের মেঠো পথে পঞ্চানন ঘোষ
“ঘোল নেবে ঘো…ল, ভাল ঘোল”—গ্রামের মেঠো পথে পঞ্চানন ঘোষ
অরুন দেবনাথ, ডুমুরিয়া ।
“ঘোল নেবে ঘো…ল, ভাল ঘোল” গ্রাম বাংলায় ঘোল ওয়ালাদের কাঁধে বাঁশের বাক ও মাটির পাতিলে ঘোল নিয়ে এ হাঁকডাক এখন তেমন শোনা যায় না। তবুও বাপ-দাদার পেশা আজও ধরে রেখেছেন পঞ্চানন ঘোষ। ঘোল বিক্রি করেই চলে তার জীবন জীবিকা। তবে স্বল্প পুঁজি ও বার্ধক্য তার প্রধান অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে তার সাথে
আলাপ কালে এমনটি জানান তিনি। তিনি জানান নাম তার পঞ্চানন ঘোষ। বয়স ৮১ বছর। বর্তমান ঠিকানা ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের চহেড়া গ্রামের গুরুপদ ঠাকুরের বাড়ী। তার আদি বাড়ী সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার সরুলিয়া ঘোষ পাড়ায়। সে ওই গ্রামের মৃত সূর্য্যকান্ত ঘোষের ছেলে। প্রায় ৩০/৩৫ বছর পূর্বে পঞ্চানন ঘোষের সহধর্মিনী বিল্লু রানী স্বামী-সন্তান রেখে অন্যের হাত ধরে পাড়ি জমায় ভারতে। এরপর অভাবের কারনে পৈত্রিক ৫ শতক ভিটে বাড়ী বিক্রি করে চলে আসেন একমাত্র ছেলে মৃনাল ঘোষের শ্বশুরের ভিটা শোলগাতিয়া গ্রামের হাজরা ঘোষের বাড়ীতে। ৫/৭ বছর বিয়াই বাড়ী থেকে ঘোল বিক্রি করে উপার্জিত টাকা ছেলের সংসারে দিলেও পুত্রবধু আর বিয়াই-বিয়েনের খারাপ আচরনে বেশীদিন টিকতে পারেনি পঞ্চানন ঘোষ। পরবর্তিতে তিনি আশ্রয় নেন পাশের গ্রাম চহেড়ার গুরুঠাকুরের পরিত্যক্ত গোয়াল ঘরে। এরপর বৃদ্ধ বয়সে শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। বয়সের ভারে অন্য কোন কাজ করতে না পারায় বাপ-দাদার পেশায় চলছে তার জীবন জীবিকা। বাড়ীর মালিকের কাছ থেকে মাত্র ২ শত টাকা কর্জ নিয়ে তিনি শুরু করেন ঘোল বিক্রির কাজ। প্রতিদিন গ্রাম থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে ৪ কেজি দুধ কিনে ৬/৭ কেজি ঘোল তৈরী করে ৫ টাকা গ্লাস বিক্রি করে তাতে লাভ হয় মাত্র ১’শ টাকা। আর এ একশত টাকা লাভ করতে হলে তাকে উপজেলার খর্ণিয়া, শোলগাতিয়া, মিকশিমিল, হাসানপুর, শাহপুর, ভরতভায়না বাজারসহ পায়ে হেঁটে প্রতিদিন রোদ, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে “ঘোল নেবে ঘো…ল, ভাল ঘোল”বলে গ্রামের মেঠো পথে ঘুরতে হয়। যা লাভ হয় তা দিয়ে চাল, আলু কিনে নিজেই রান্না করে খেয়ে না খেয়ে জীবন চালিয়ে আসছে। সেদিন ছিল বুধবার জৈষ্ঠ্যের এ খরা দুপুরে হাসানপুর বাজারে কথা হয় ঘোল ওয়ালা পঞ্চাননের সাথে। ডাকতেই তিনি বলেন বাবা ঘোল খাবেন মাত্র এক গ্লাস আছে দাম পাঁচ টাকা। তার এমন আকুতি শুনে তাকে ডেকে নিলাম হাসানপুর বাজারস্থ একটি গাছ তলায়। এসময় তিনি তার ঘোল তৈরী ও বিক্রির ইতিহাস তুলে ধরেন এবং নিজেকে বড় অসহায় দাবী করে বলেন, বয়স এখন ৮১ বছর চলে আর কত বয়স হলে আমি বয়স্ক ভাতা বা সরকারী অনুদান পাবো বাবা ? শুনেছি ৬৫ বছর বয়স হলে নাকি সরকার অসহায় হত দরিদ্রদের ভাতা দেন কিন্তু আমি তো অসহায় আমি তো পাই না। চেয়ারম্যান, মেম্বরদের কত বলেছি কেউ আমার দিকে তাকাই না। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল খোকন বলেন, ওয়ার্ড ভিত্তিক বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিব›িদ্ধদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বররা করে থাকেন। পঞ্চানন’র বিষয়টি আমার জানা ছিলনা, তবে আশু তার বিষয়টি আমলে নেয়া হবে।