রবিবার ● ২৭ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মডেল হিসাবে বিবেচ্যঃ প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মডেল হিসাবে বিবেচ্যঃ প্রধানমন্ত্রী
এস ডব্লিউ নিউজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা পুরোপুরি কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন উভয় দেশ ভবিষ্যতেও সহযোগিতার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের কৌশলগত বন্ধুত্বকে অপরাপর বিশ্বের জন্য ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিতে পারি যে, উভয় দেশ সহযোগিতার এই মনোভাব ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে।’
এখানে ২৫ মে শুক্রবার বিকেলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যৌথভাবে নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন সুদৃঢ় এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো জোরদার হবে।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে এটি ছোট এক টুকরো বাংলাদেশ, যেখান থেকে বাংলাদেশের চেতনা প্রতিপালিত হবে। রবীন্দ্রনাথের এই প্রভাব নিজস্বভাবেই অনন্য হয়ে উঠবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ভবন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রতীক হয়ে উঠবে। তিনি শান্তিনিকেতনে আসার জন্য এবং তার সঙ্গে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের সুযোগ লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর কেশরিনাথ ত্রিপাঠি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সবুজ কলি সেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা এবং সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, কবি, গায়ক এবং শিল্পীসহ উভয় দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে একত্রে চলতে চায় এবং এ লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যকার সব সমস্যার নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে আমাদের এখনো কিছু সমস্যা রয়েছে, যা আমি এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে এখানে তা উত্থাপন করতে চাই না। অবশ্য আমি বিশ্বাস করি যে বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে যে কোন সমস্যার সমাধান করা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বাংলাদেশকে তাঁর হৃদয়ে ঘনিষ্ঠভাবে ধারণ করে রেখেছিলেন। তিনি তার জীবনের কিছুদিন বাংলাদেশের পতিসার, শিলাইদহ এবং শাহাজাদপুরে কাটিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ এসব জায়গায় তাঁর জমিদারী পর্যবেক্ষণের জন্য সফর করেন। তিনি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকতেন এবং সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকতেন।’
তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ধরে ১৯৬১ সালে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশত বার্ষিকীতে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীনরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বন্ধের উপর নিকৃষ্ট পদক্ষেপ নেয় এবং রবীন্দ্রনাথে সব কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়। আমাদের দেশের জনগণ এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাটি জীবন ক্ষুধা দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বিশ্বাস করতেন সমাজে বৈষম্য দুর না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ব কখনোই উন্নতি লাভ করবে না। তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রতিপাদ্য ছিল ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই নীতি প্রণয়ন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এই দু’দেশের জনগণের মধ্যে অভিন্ন ঐতিহাসিক, সামাজিক, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং আবেগঘন সম্পর্ক রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার পর ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধি তাঁকে এবং তাঁর বোন শেখ রেহানাকে আশ্রয় দেয়ায় ভারতের জনগণের প্রতি তিনি ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের জনগণ এই সমর্থন কখনো ভুলবে না। বাসস।