রবিবার ● ২৭ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » খেলা » জমি বেঁচে পতাকা তৈরি করেছেন মাগুরার আমজাদ
জমি বেঁচে পতাকা তৈরি করেছেন মাগুরার আমজাদ
এস আলম তুহিন, মাগুরা :
প্রতি চার বছর পর পর শুরু হয় বিশ্বকাপ ফুটবল । আর এ ফুটবল উন্মাদনায় মেতে উঠে সারা বিশ্ব । বিশ্বকাপ ফুটবলের এ উন্মাদনায় বাংলাদেশের দর্শরারা মেতে উঠে নানা রঙ্গে নানা আয়োজনে । সেই আয়োজনকে আরো সুন্দর ও মনোমুগ্ধ করতে এবার মাগুরা সদরের ঘোড়ামারা গ্রামের আমজাদ হোসেন তৈরি করেছেন সাড়ে পাচঁ কিলোমিটার জার্মানীর পতাকা । যা ইতি মধ্যে মাগুরা জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে । তার পতাকাটিদেখতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়ীতে ।
জার্মান ভক্ত আমজাদ হোসেন জানান,ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আমার খুব ভালোবাসা । বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই আমি খেলার দেখতে ছুটে যেতাম বিভিন্ন স্থানে । জার্মানীর খেলা খুব আমার খুব ভালো পছন্দ বিধায় আমি জার্মানীর পক্ষে অনেক আগে থেকেই । কারণ তাদের খেলার ধরণ ও কৌশল খুবই চমৎকার ।
পতাকা সর্ম্পকে তিনি বলেন, আমি সামান্য একজন কৃষক । কৃষিকাজ করে আমি জীবিকা নির্বাহ করি । আমার সংসারে ১০ সন্তানের জনক । তার পরেও ফুটবলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর জার্মান দেশকে ভালোবাসি বিধায় আমি ২০১৪ সালে নিজের ৩০ শতক জমি বিক্রি সাড়ে তিন কিলোমিটার পতাকা তৈরি করেছিলাম ।সেই পতাকাটি আমি যখন মাগুরা শহরের প্রর্দশিত করি তখন ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলাম । সেই সময় এ পতাকাটি তৈরি করতে আমার খরচ হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা । আর ২০১৪ সালে যখন ব্রাজিলের মাঠে জার্মানী বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো তখন আমি নিজেকে সার্থক মনে করলাম । জার্মানীর এ চ্যাম্পিয়নে আনন্দে উচ্ছাসে নেচে গেয়ে আমরা জার্মান ভক্ত জেলার মানুষকে জানিয়েছিলাম । ২০১৪ সালে আমার এ পতাকা তৈরির খবরটি যখন মিডিয়ায় প্রকাশ হলো তখন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির হাই কমিশনার ড.ফারদাভান ওয়াসির নজরে পড়ল তখন তিনি আমাকে তলব করলেন ঢাকাতে । আমি ঢাকায় গিয়ে তার তার সাথে দেখা করলাম । তিনি আমাকে স্বাগত জানালেন । তিনি বললেন, আমি তোমার এ খরবটি আমার দেশে জানিয়ে দেব । আমি তাকে আমার জেলা মাগুরাতে আসার আমন্ত্রন জানালাম ।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে জার্মান রাষ্ট্রদূত আমার আমন্ত্রনে মাগুরা স্টেডিয়ামে আসলেন । সেই সময় এক সংর্বধনা অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে একটি সম্মাননা ক্রেস প্রদান করলেন । আর বললেন ,আপনাকে জার্মান ফুটবল এসোসিয়েশনের ফ্যান ক্লাবের সদস্য করা হয়েছে । পরবতীতে সেই ফ্যান ক্লাবে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে ।
এবারের আসন্ন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন সম্পর্কে বলেন, আমি এবার জার্মানীর পতাকাটি আরো ২ কিলোমিটার বৃদ্ধি করেছি। এখন পতাকাটির দৈর্ঘ্য দাড়িয়েছে সাড়ে পাচঁ কিলোমিটার । আগামী ৫ জুন আমি সদরের নিশ্চিতিপুর হাইস্কুল মাঠে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারের পতাকাটি জনসম্মুখে উন্মুক্ত করবো । এবারও তিনি পতাকা তৈরি করেছেন নিজের ফসলাদি বিক্রি করে ।এবার বাড়তি ২ কিলোমিটার এ পতাকা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা । ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জেতার জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা কামনা করেছেন ।
সদরের ঘোড়ামারা গ্রামের এক ফুটবল ভক্ত নাসির হোসেন বলেন , আমজাদ ভাই আমাদের গ্রামের একজন ফুটবলপ্রেমী মানুষ । তিনি নিজের জমি পতাকা করেছেন ।যেটি আমাদের জেলায় সব সারাদেশে আলোড়িত হয়েছে । আবার অনেকে তাকে পাগলও বলেছেন । কারণ ফুটবলের প্রতি তার এ ভালোবাসা আসলে অকৃত্রিম ।
মাগুরার বিশিষ্ট ফুটবল ক্রীড়া সংগঠক বারিক আনজাম বারকি বলেন, একজন মানুষের ফুটবলের প্রতি যে এতো তার প্রমাণ আমজাদ ভাই । নিজের জমি বিক্রি করে তিনি যে পকাতা তৈরি করেছেন তা বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে । আমরা দোয়া করি তার কষ্ট ও চেষ্টা সফল হোক ।
মাগুরার অন্যতম জাতীয় ক্রীড়া ধারাভাষ্যকর প্রদ্যুত কুমার রায় বলেন, তিনি পতাকাটি তৈরি করে শুধু নিজে সম্মানিত হননি মাগুরা জেলাকে অনেকে সম্মানিত করেছেন । আমি আশা রাখছি এবারও জার্মানী চ্যাম্পিয়ন হয়ে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করুক ।