শুক্রবার ● ৩ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » বিবিধ » শ্রমিক ধর্মঘটে অচল সারাদেশ
শ্রমিক ধর্মঘটে অচল সারাদেশ
এস ডব্লিউ নিউজ।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যানবাহন ভাঙচুরের প্রতিবাদে ধর্মঘট করছে পরিবহন শ্রমিকরা। বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে ডাকা এই ধর্মঘটের কারণে অচল হয়ে পড়েছে সারাদেশ। দূরপাল্লার কোনও বাস ছেড়ে না যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
শুক্রবার ( ৩ আগস্ট) সকাল থেকে টাঙ্গাইল থেকে সব জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। টাঙ্গাইল জেলার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় শত শত যাত্রী বাস টার্মিনালে এসে বাড়ি ফিরে গেছেন। অনেকে বিকল্প হিসেবে ট্রেনে ঢাকায় যাতায়াত করছেন।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, এমন ভোগান্তিতে তারা বিরক্ত নয়। বরং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তাদের।
টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বাস ও চালকের নিরাপত্তাজনিত কারণ ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকার যদি নিরাপত্তা দিতে পারে তাহলে গাড়ি চলবে। যে পর্যন্ত নিরাপত্তা দিতে না পারবে সে পর্যন্ত গাড়ি চলবে না।’
যানবাহনের নিরাপত্তাজনিত কারণে দ্বিতীয় দিনের মতো ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা রুটে কোনও ধরনের বাস ছেড়ে যায়নি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
ময়মনসিংহ জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির বাস বিভাগের সম্পাদক বিকাশ সরকার বলেন, ‘রাস্তায় বের হলেই শিক্ষার্থীরা ইচ্ছামতো বাস ভাঙচুর করছে। এতে মালিকরা লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই নিরাপত্তার অভাবে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকামুখী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়।’ তবে বিকাল থেকে আবার বাস চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার কথা জানান তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার সারাদিন বাস চলাচল বন্ধ থাকার পর মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সন্ধ্যা ৭টার পর ঢাকার উদ্দেশে বেশ কয়েকটি বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ছাত্রদের আন্দোলন কর্মসূচী অব্যাহত থাকায় শুক্রবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে চট্টগ্রামের সঙ্গে বিভিন্ন জেলার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। দীর্ঘক্ষণ কাউন্টারে অপেক্ষা করে অনেক যাত্রী বাসায় ফিরে গেছেন। কোন ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এভাবে বাস চলাচল বন্ধ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি কফিল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কোনও ধর্মঘটের ডাক দিইনি। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তবে সকাল থেকে কিছু গাড়ি চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের মহাসচিব রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি আমাদের কোনও কর্মসূচি না। পরিবহন শ্রমিকরা নিরাপত্তার স্বার্থে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাস চালকরা বাস চালাবেন না।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নিরপত্তাজনিত কারণে রংপুর থেকে আন্তঃজেলা ও ঢাকাগামী সব রুটের বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। এতে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে আন্তঃজেলার ৪৮টি রুটেই বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে ঢাকা কোচস্ট্যান্ড থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
শ্রমিকরা বলছেন, গাড়ি চললেই দুর্ঘটনা ঘটবে, এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। এ জন্য যেভাবে আমাদের ওপর জুলুম শুরু হয়েছে সে কারণে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে আকস্মিক বাস ধর্মঘটের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী লোটাস জানান, তার পরীক্ষা আছে শনিবার। হঠাৎ করে টার্মিনালে এসে শোনেন বাস বন্ধ। এভাবে আগে থেকে কোনও ঘোষণা ছাড়া বাস চলাচল বন্ধ রাখা অমানবিক।
এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কোনও বাস ধর্মঘট আহ্বান করিনি। এ ধরনের কোনও কর্মসূচি আমাদের নেই।’
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, আন্তঃজেলা ও ঢাকাগামী সব রুটেই বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু কাদের নির্দেশে এ অঘোষিত ধর্মঘট সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।