শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » সুন্দরবন পর্যটন শিল্প; সমস্যা ও সম্ভবনা
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » সুন্দরবন পর্যটন শিল্প; সমস্যা ও সম্ভবনা
১২০৬ বার পঠিত
বুধবার ● ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সুন্দরবন পর্যটন শিল্প; সমস্যা ও সম্ভবনা

 

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

 প্রাকৃতিক সম্পদের লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভবনা। অর্থনৈতিক একটি খাত পর্যটন। অপিমেয় সৌন্দর্যের এ দেশে বিদেশীদের ভ্রমনে আকৃষ্ট করে বিভিন্ন ধরণের সেবা ও সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বৈদেশীক মুদ্রা অর্জনে উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। সুন্দরবন হতে পারে দেশ তথা বিশ্বে অন্যতম পর্যটন শিল্প।
২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস। জাতি সংঘের অধিনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ববধায়নে ১৯৮০ সাল থেকে সকল সদস্য দেশ এই দিবসটি পালন করে আসছে। দিবসটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পর্যটন কেন্দ্রের সাথে সেতু বন্ধন গড়ে তোলা। বিশ্বের নানা দেশের মত বাংলাদেশও দিবসটি পর্যটন মন্ত্রাণালয়, ট্যুরিজম বোর্ড, পর্র্যটন কর্পোরেশন, এনজিও সহ বিভিন্ন সংগঠন দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যাসিক সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্যাসিক সব সম্পদ সমূহের আলকচিত্র, তথ্যচিত্র তুলে ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমনে আকৃষ্ট করতে র‌্যালী, সভা সেমিনার সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
অপরিময় সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে এদেশে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে লীলাভূমি। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে বাঁচাতে ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প কাজ চলমান। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার মোট ৩৯টি উপজেলা ঘিরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। সুন্দরবনের ওপর আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল।  সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।আমাদের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভবনা থাকারপরও নানা সমস্যার কারণে পর্যটন শিল্প বিকশিত হতে পারছে না। পর্যটনের জন্য যাতায়াত সুবিধা, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়গুলি খুব জরুরী। অথচ রহুমুখী সমস্যার আবর্তে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সঙ্কটাপন্ন। পর্যটন শিল্পে বিদ্যমান সমস্যা সমূহ সমাধান করতে পারলে এবং উপযুক্ত পর্যটন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হতে পবে।

সুন্দরবন হতে পারে দেশ তথা বিশ্বের অন্যতম পর্যটন শিল্প। সুন্দরের রাণী সুন্দরবন ক্ষণে ক্ষনে তার রুপ বদলায়। খুব ভোরে এক রুপ, দুপুরে অন্যরুপ, পড়ন্ত বিকাল আর সন্ধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন রুপে সজ্জিত হয়। মধ্য ও গভীর রাতে অন্যএকরুপ। আমাবশ্যায় ভয়াল সুন্দর আবার চাঁদনী রাতে নানান রুপ ধারণ করে সুন্দরী সুন্দরবন পর্যটকদের বিমহিত করে। বনের ভয়ংকরতা, বাঘের গর্জন, হরিণের চকিত চাইনি। বানর আর হরিণের বন্ধুত্ব, কুমিরের কান্না, পাখ পাখালির কলতান, শ্রবণ সুখ, বনের বিভিন্ন বৈচিত্র আর প্রাকৃতিক সুন্দর্য আর নৈস্বর্গিক দৃশ্য। আবার অশান্ত পানির বুকে উত্তাল ঢেউয়ের উন্মাদ নৃত্য অবলোকন করে পর্যাটক উল্লাসিত, বিমোহিত ও আপ্লাতু হয়। বিশ্বের একক বৃত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। জগত সেরা ও জীববৈচিত্রের আধার এ বন। সুন্দরবন বিশ্ব  ঐতিহ্য বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাসভুমি এই সুন্দরবন। বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি ও প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য নির্বাচনের পর থেকে সুন্দরবন নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী সহ বিশ্ববাসীর সুন্দরবন দেখার আগ্রহের শেষ নেই। যার ফলে দেশি, বিদেশী প্রকৃতি প্রেমীদের পদচারণে মুখরিত হচ্ছে সুন্দরবন। এর ফলে সুন্দরবন হতে পারে বিশ্বের অন্যতম পরিবশে বান্ধব পর্যটন শিল্প।
বনের মোট আয়তন, ১০ হাজার ২ শ ৮০ বর্গকিলোমিটার এর মধ্যে বাংলাদেশে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমটিার। দেশের মোট আয়তনের ৪.২ শতাংশ এবং বনাঞ্চলের ৪৪ শতাংশ। এই বনে রয়েছে সুন্দরী, পশুর, গেওয়া, কেওড়া, গরাণ, বাইন সহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবল এবং ১৩ প্রজাতির অর্কিড সুন্দরবনে আছে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতল হরিণ, বানর, শুকর, গুইসাপ, পাইথন ও বিভিন্ন প্রজাতির সাপ সহ ৩৭৫ প্রজাতি। এরও বেশি প্রজাতির বন্য প্রাণী। বন মোরগ, গাংচিল, মদনটাক, মাছাল সহ বিভিন্ন প্রজাতির ৩০০ এর বেশি পাখি। জালের মত বিছানো প্রায় ৪৫০টি ছোট বড় নদী ও খাল। এতে কুমির, হাঙ্গর, ডলপিন, ইলিশ, ভেটকি সহ প্রায় ২৯১ প্রজাতির মাছ আছে। প্রাণি ও বৃক্ষের বৈচিত্রময় সমাহারে এ বন বৈজ্ঞানিক নৃতত্ব ও প্রত্মতাম্বিক বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীব বৈচিত্রের কারণে পর্যটকদের কাছে এটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় স্থান। ভয়াল সৌন্দর্যের প্রতিক সুন্দরবন। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা উপেক্ষা করে প্রতি বছরই সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য অনেক আগেই পর্যটন নীতিমালা করা হয়েছে। সুন্দরবন ও কক্সবাজারের জন্য নেয়া হযেছে মহাপরিকল্পনা। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে পর্যটকদের অকৃষ্ট করতে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়েছে। এটির কাজ শেষ হবে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে, ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বন বিভাগের ২৮টি নতুন ক্যাম্প ও দুটি রেঞ্জ অফিস নির্মাণ। সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মাধ্যমে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে করমজল, কটকা, কচিখালী, দুবলা, হারবাড়িয়া, কলাগাছিয়ার উন্নয়নসহ পাশাপাশি নতুন চারটি পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এই নতুন চারটি  পর্যটনকেন্দ্র (ইকোট্যুরিজম) হচ্ছে আন্দারমানিক, আলীবান্দা, কালাবগি ও শেখেরটেক। এছাড়া সুন্দরবনের আশপাশের লোকালয়ে বন বিভাগের যেসব জায়গা রয়েছে, সেখানে সামাজিক ও ম্যানগ্রোভ বনায়ন করা। এই বনায়ন থেকে স্থানীয় মানুষের জ্বালানিসহ কাঠের চাহিদা পূরণ হবে। ফলে সুন্দরবনের কাঠ কাটা বন্ধ হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনসংলগ্ন ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা ও আড়ুয়াবেড় নদী এবং ভুরা ও খরমা খাল পুনর্খনন করা হবে। পর্যটকদের দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ থেকে সুরক্ষা দিতে দ্রুতগতির নৌযান কেনা  হয়েছে। বিদেশি পর্যটক ও রাষ্ট্রীয় অতিথিদের ভ্রমণের জন্য এবার সুন্দরবনের নৌবহরে যুক্ত হয়েছে ছয়টি অত্যাধুনিক জলযান। এর মধ্যে রয়েছে আবাসন সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন দুইটি লঞ্চও। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের জন্য এম ভি বন বিহারিনী আর সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের জন্য এম ভি বনমালা লঞ্চ দুইটি হস্তান্তর করা হয়েছে।

  ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষনা করে। বিশ্ব প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য নির্বাচনের পর থেকে সুন্দরবন নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমি সহ বিশ্ব বাসীর সুন্দরবন দেখার আগ্রহের শেষ নেই। যার ফলে দেশী-বিদেশী প্রকৃতিপ্রেমিদের পদাচারণে মুখরিত হচ্ছে সুন্দরবন। এর ফলে সুন্দরবন হতে পারে বিশ্বে অন্যতম পরিবেশ বান্ধব পর্যটন শিল্প। বিশ্বের প্রকৃতি প্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে সুন্দরবন। সুন্দবন হতে পারে বিশ্বসেরা সম্পদ। এর ফলে বনের সুরক্ষার কাজ হবে শক্তিশালী। উপকুল এলাকার লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অবহেলিত জনপদে প্রানঞ্চাল্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। বিকশিত হবে পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার যে সুযোগ আমাদের হাতের নাগালে রয়েছে সেগুলো কাজে লাগানো জরুরী। যদি এটি সম্ভব হয়, তাহলে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে বদলে যাবে আমাদের দেশের অর্থনীতি। বিশ্বের পর্যটকদের আগমনে বৃদ্ধি পাবে বৈদেশিক মুদ্রা যাহা দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

লেখক ঃ সংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ