শুক্রবার ● ৫ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » ফিচার » হাসি শরীর ও মন ভাল রাখে
হাসি শরীর ও মন ভাল রাখে
প্রকাশ ঘোষ বিধান ।।
মানুষের জীবন থেকে দিন দিন হাসি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। হাসতে গিয়েও হাসতে পারে না। এটা যেমন মনের জন্য খারাপ তেমনি শরীরের জন্যও খারাপ। শরীর ভালো রাখার অন্যতম রসদ হলো হাসি। যে কোনও অসুখের ঔষধ হিসাবে হাসির গুরুত্ব অপরিসীম। শারীরিক কিংবা মানুসিক অসুস্থতায় নির্মল হাসি কাজ করে ঔষধের মতোই।
হাসি মুখের বিকল্প নাই। বিশেষ করে মৃদু হাসি। এই মৃদু হাসির লোকদের অনেকেই শুধু হাসির জন্যই পছন্দ করেন।হাসতে সবাই ভালোবাসেন। প্রতিটি মানুষ হেসেখেলে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। জীবনের কষ্টের মুহূর্তগুলোকে একটি মৃদু হাসি দিয়ে মুছে ফেলতি পারি আমরা। নিজের কাজ যখন অন্যের মুখে হাসি ফোটায় তখন মনে আনন্দ লাগে । মন খুশিতে ভরে ওঠে।
আজ মৃদু হাসির দিন অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড স্মাইল ডে। প্রতিবছর অক্টোবরের প্রথম শুক্রবার বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হয়। হাসির গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম শুক্রবার পালিত হয় মৃদু হাসি দিবস। ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপি মে র প্রথম রবিবার বিশ্ব মৃদু হাসি দিবস পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ কমেডি ক্লাব ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম দেশব্যাপি হাসি দিবস পালন করে। বাংলাদেশ কমেডি ক্লাব সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সারা বছর ব্যাপি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড এবং স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো’র মাধ্যমে মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী হারভে রোজ বল হলুদ রঙ্গের বৃত্তের মধ্যে দুটো চোখ আর একটা অর্ধচন্দ্রাকৃতির ছবি আঁকেন। এটি স্মাইলি হিসাবে পরিচিতি পায়। তার প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সাল থেকে মে মাসের প্রথম রবিবার ওয়ার্ড স্মাইল ডে হিসাবে পালিত হচ্ছে। হাসি দিবসের দুই বছর না পেরুতেই একটা দুঃখের ঘটনা ঘটে যায়। ২০০১ সালে হাসি দিবাসের প্রবর্তক হারভে বেল মারা যান। তবে মারা যাবার আগে তিনি নিজের নামে একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। এই ফাউন্ডেশনের কাজ হলো হাসি দিবসের উদ্দেশ্য সবার মাঝে পৌচ্ছে দেওয়া।
হাসিতে মনের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। কখনও কখনও একটা হাসি পুরোটা দিনকে উজ্জ্বল করে দিতে পারে। হাসলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে। হাসি বদলে দিতে পারে আপনার চারিপাশ। এটি একারনে ইতিবাচক শক্তি সঞ্চার করে। গবেষকরা জানিয়েছেন, হাসলে মস্তিস্কে এক ধরনের হরমন তৈরি হয়। যাহা শরীরও মন ভালো রাখে। নির্মল হাসি কমাতে পারে দুশিন্তা। এটি পেশী রিলাক্স করে। হাসলে হৃদপিন্ডে অক্সিজেন সরবরাহ ভালো হয় ও শরীর সুস্থ থাকে। হাসি খুশি থাকলে স্টোকের ঝুঁকি কমে। হাসি একটি প্রাকৃতিক ব্যায়াম যা সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরী। দুঃখ, রাগ কিংবা অভিমানের মত আবেগ নিমেষেই দূরে ঠেলে দিতে পারে হাসি। সম্পতি এক রিপোর্টে জানা গেছে, নিয়মিত হাসলে মন টেনশন মুক্ত হয় এবং শরীর রিল্যাক্স হয়। সুগার প্রেসারের রোগীরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে মন ভরে হাসলে অনেকটাই রোগ মুক্তি পায়।
পৃথিবীর ১০৫ টিও বেশি দেশে বর্তমানে শরীর মন ঠিক রাখতে হাসির ক্লাব রয়েছে। আমরা কখনও মুচকি হাসি, কখনও প্রাণখুলে হাসি আবার অট্টহাসিতেও হাসি। আমরা হাহা হিহি আবার হোহো করে হাসি। সঠিক জায়গায় সময় মত হাসতে পারি না। সঠিক জায়গায় হাসিকে উপস্থাপনা করতে পারলে মনও হাসিতে ভরে ওঠে। চলচিত্র, নাটক, গল্প, কবিতায় নানা ধরনের হাসি দেখি ও শুনি। সুকুমার রায় কবিতা নানা ধরনের হাসি কথা লিখেছেন।
হাসছি কেন কেউ জানে না।
পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই।
আমরা যেমন বলি হাসি চেপে রাখতে পারছি না পেটের ভিতর থেকে হাসি গুলিয়ে উঠছে। উঠছে হাসি ভসভসিয়ে সোডার মতো পেট থেকে।
নানা কারণে আমাদের মুখে হাসি ফুটছে না। হাসতে গেলেও হাসতে পারছি না। এটা যেমন স্বাস্থ্য ও মনের উপর প্রভাব ফেলে। যার প্রভাব সামাজিক জীবনযাত্রার উপর প্রতিফলিত হয়। তাই আমাদের শত দুঃখ-কষ্টকে উপক্ষো করে মন ভরে হাসতে হবে। এর ফলে মন ভাল ভাল হবে। এতে সমাজের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যা একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ গড়তে সাহায্য করবে।
লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট