শনিবার ● ১৩ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » স্বাস্থ্যকথা » হ্যাট্রিক কন্যার গল্প
হ্যাট্রিক কন্যার গল্প
এস আলম তুহিন,মাগুরা :
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেশের হয়ে প্রথম হ্যাট্টিক করার গৌরব অর্জন করেছে মাগুরার মেয়ে ফাহিমা। ফাহিমাদের সাফল্যে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে খেলবে। এ সাফল্যে দারুণ খুশি ফাহিমা ও তার পরিবার। ক্রিকেট তাদের মেয়েকে দেশ বিদেশে এমন পরিচিতি দেবে এমনটি ভাবেনি তারা। মাগুরা শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় ফাহিমাদের বাড়িতে বসে একান্ত আলাপচারিতায় ফাহিমার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনের নানা কাহিনী জানালো ফাহিমার বাবা-মা ও ফাহিমা নিজে। ছেলেবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অপরিহার্য্য অলরাউ-ার ফাহিম্র। তারপরও খেলার নেশা তার লেখাপড়ায় বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেনি। বর্তমানে সে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অনার্স শেষবর্ষের পরীক্ষার্থী।
ফাহিমা বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার খেলনার সামগ্রী ছিল ব্যাট-বল। অন্য মেয়েরা যেমন পুতুলের বায়না ধরে আমি তা না করে ব্যাট-বল চাইতাম। বাবা পুলিশের চাকরি করতেন তাই ব্যস্তার কারণে আমার প্রতি এতটা খেয়াল তার ছিল না তার। স্কুল জীবনে আমি ব্যাডমিন্টনে ভালো করতে থাকলাম তাতে বাড়ির সবাই খুশিই হতো। এরপর যখন পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলা শুরু করলাম তখন বাড়ি থেকে খুব উৎসাহ দেয়নি। বরং আমার বড় ভাই এতে বাধা দিত। বাড়ির পাশেই ষ্টেডিয়াম। জানতে পারলাম ওখানে মেয়েদের জন্য ক্রিকেট কোচিং হবে। যোগ দিলাম সে ক্যাম্পে। প্রথম পর্যায়ে পঞ্চাশটা মেয়ে যোগ দিলেও শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলাম আমি একাই। আমি এখনো মাগুরা স্টেডিয়ামে প্র্যাক্টিস করি ছেলেদের সাথে। আমার কোচ সাদ্দাম হোসেনসহ ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা খুব ভালো। তাদের জন্যই এখনো ধৈর্য্য নিয়ে খেলে যাচ্ছি।নেদারল্যান্ডে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে আরব আমিরাতের সাথে হ্যাট্টিক প্রসঙ্গে ফাহিমা বলেন, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলো আর আমি সে দলের একজন সদস্য এটিতো অবশ্যই গর্ব করার বিষয়। সবচেয়ে ভালো লাগে ভাবতে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় আমি আমার শ্রেষ্ঠ খেলাটা খেলতে পেরেছি।
ফাহিমার বাবা আলতাফ হোসেন সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কি আর দশজন পিতার মত আমার চাওয়াও ছিল মেয়ে ভালো পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরি করবে এবং সংসার করবে। ক্রিকেটার হবে এমনটি ভাবিনি। তবে এখন ভালোই লাগে এই ভেবে যে, ও দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। আর পড়াশুনাটাও চালিয়ে যাচ্ছে। কিস্তু পড়াশুনা করে ভালো চাকরি করলেও দেশের জন্য ফাহিমা যে সুনাম বয়েএনেছে তা সম্ভব কিনা জানিনা। মা ফরিদা বেগম বলেন, আমার মেয়ে ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলছে এটা নিয়ে বাইরে বা ভিতরে অনেকে অনেক কিছু বলেছে। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিলো ও এমন কিছু করবে যা সবার জন্য সম্মান বয়ে আনবে।