শনিবার ● ২০ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » বিবিধ » পুলিশ সুপারের আর্থিক অনুদান; সেই বৃদ্ধা মায়ের শারীরিক খোঁজখবর নিলেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার
পুলিশ সুপারের আর্থিক অনুদান; সেই বৃদ্ধা মায়ের শারীরিক খোঁজখবর নিলেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার
ফরহাদ খান, নড়াইল।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামে বাঁশবাগানে ফেলে যাওয়া অসহায় বৃদ্ধা হুজলা বেগমের (৮৬) শারীরিক খোঁজখবর নিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম। বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃদ্ধাকে দেখতে নড়াইল সদর হাসপাতালে যান তারা। এ সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হুজলা বেগমের শারীরিক খোঁজখবর নেন এবং বৃদ্ধার উন্নত খাবারের জন্য পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের হাতে পাঁচ হাজার টাকা দেন। এছাড়া বৃদ্ধা হুজলা বেগমের সুচিকিৎসার ব্যাপারে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। এদিকে, নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে রোগিদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের সুচিকিৎসার খোঁজখবর নেন। একই সাথে দালালরা যেন হাসপাতালে আগত রোগিদের হয়রানি করতে না পারে; সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসন এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে অনুরোধ করা হয়। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডাঃ আসাদ-উজ-জামান মুন্সী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মাহবুবুর রশিদ, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জসিম উদ্দিন হাওলাদার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আ ফ ম মশিউর রহমান বাবু প্রমুখ।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে হুজলাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে এসে সাংবাদিকদের পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। এছাড়া ওইদিন হুজলার হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন এসপি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এদিকে ২৭ সেপ্টেম্বর লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু হুজলার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাঁচ হাজার টাকা দেন এবং প্রতিমাসে ভরণ-পোষণের জন্য তিন হাজার টাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, বয়োবৃদ্ধ মা হুজলার ভরণ-পোষণ দিতে পারবেন না; এমন অজুহাতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে বৃদ্ধা মাকে নড়াইলের কুচিয়াবাড়ি গ্রামে রাস্তার পাশে বাঁশবাগানে ফেলে দেয় তার মেঝো ছেলে বাবু শেখ ও পূত্রবধূ। তবে প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় বাঁশবাগান থেকে উদ্ধার করে ওইদিন (বুধবার) ভোরে হুজলার নাতবউ তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। হুজলা বেগমের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী সামাদ শেখ মারা যাওয়ার পর ছেলে-মেয়েরা আলাদা সংসার শুরু করেন। আর হুজলা বেগম বিভিন্ন সময়ে ছেলে ও মেয়েদের সংসারে জীবনযাপন করে আসছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করে মায়ের ভরণ-পোষণ কে নেবেন, এ বিষয়ে সন্তানদের মধ্যে মত-বিরোধের সৃষ্টি হয়। শেষপর্যন্ত কোনো সন্তানই তার মাকে তাদের সংসারে ঠাঁই দিতে চায়নি। বয়োবৃদ্ধ হুজলাকে বাঁশবাগানে ফেলে দেয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর চিকিৎসার জন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে পুলিশের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে বয়োবৃদ্ধ হুজলা বেগমের। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ আসাদ-উজ-জামান মুন্সী বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে হুজলা বেগমের শরীরে যে ঘা বা ক্ষত ছিল, তা ঠিক হয়েছে। এখন পারিবারিক ভাবে তার সেবা-যতœ প্রয়োজন।