শুক্রবার ● ১৬ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » কৃষি » পাইকগাছায় লবণ পানির ঘেরের আইলে ড্রাগণ চাষ করে সফল কৃষক সবুর মোড়ল
পাইকগাছায় লবণ পানির ঘেরের আইলে ড্রাগণ চাষ করে সফল কৃষক সবুর মোড়ল
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা।
উপকূলের লবণ পানির মৎস্য ঘেরের আইলে ড্রাগণ চাষ করে সফল হয়েছে কৃষক সবুর মোড়ল। ঘেরের আইলে লাগানো গাছে ব্যাপক পরিমাণ ড্রাগণ ফল ধরেছে। লোনাপারির ঘেরের আইলে ড্রাগণ চাষে যেমন সফল হয়েছে তেমনি উচ্চ মূল্যে ফল ও চারা বিক্রি করে লাভবান হয়েছে সবুর মোড়ল। ইতোমধ্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও জেলা কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ সবুর মোড়লের ড্রাগণ ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন।
ড্রাগন এক ধরণের ফণীমনসা (ক্যাকটাস) প্রজাতির ফর। এ ফল একাধিক রঙ্গের হয়ে থাকে। ড্রাগণ ফল দুই রকমের হয়ে থাকে। টক স্বাদের ও মিষ্টি স্বাদের। মিষ্টি স্বাদের ড্রাগণ ফল ৩টি প্রজাতি রয়েছে, বাউ ড্রাগণ ফল লাল বা পিতায়া। বাউ ড্রাগণ ফল ২ সাদা। এছাড়া হলুদ ও কালচে রঙ্গের ড্রাগণ ফল রয়েছে। সব ধরণের জমিতে ড্রাগণ ফল চাষ করা যেতে পারে। পানি জমে না এমন উচু জমিতে এ ফলের চাষ করা হয়। উচ্চ জৈব পদার্থ-সমৃদ্ধ বেলে দোঁয়াশ মাটি এ ফল চাষের জন্য উত্তম। বাড়ীর ছাদে টবে চাষ করা যায়। কাটিং করে চারা লাগালে তাড়াতাড়ি ফল ধরে। লাগানো ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে শিকোড় গজায়। রোপন করার ১২ থেকে ১৮ মাসপর ফল ধরতে শুরু করে। এ ফলের উৎপত্তি স্থান আমেরিকায়। গণচীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে ব্যাপক পরিমাণ চাষ হয়। আমাদের দেশে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে চারা আমদানী করা হয়েছে বলে জানাযায়। এ ফল এপ্রিল মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত গাছে ফুল ধরে ও নভেম্বর পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। এটি গ্রীষ্মকালের ফল। এই ফল খেতে হালকা মিষ্টি ও দারুণ পুষ্টিকর। ফলের ভিতরের অংশ লাল ও সাদা হয়। শাঁসের মধ্যে ছোট ছোট নরম কালো রঙ্গের বীজ থাকে। ভিতরের শাঁস নরম ও ফলের মিষ্টি গন্ধ আছে। ক্যালরি খুব কম থাকার কারণে ডায়াবেটিকস ও হৃদরোগীরা অনায়াসেই খেতে পারে। ড্রাগণ ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকার কারণে এই ফল খেলে শরীরে পানি শূন্যতা সহজে দূর হয়।
উপকূল এলাকার পাইকগাছার পুরাইকাটী গ্রামে কৃষক সবুজ মোড়লের বাড়ী। সে এ এলাকার একজন সফল কৃষক হিসাবে ব্যাপক পরিচিত। ইতোপূর্বে তিনি লবণাক্ত মাটিতে স্টবেরী ও ড্রাগণ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। আর এ বছর লবণ পানির মৎস্য ঘেরের আইলে ড্রাগণ চাষ করেও সফল হয়েছেন। তিনি জানান, ১ বিঘা মৎস্য ঘেরের আইলে প্রায় ১৮০টি গাছ লাগানো আছে। প্রতিটি গাছের জন্য একটি করে সিমেন্টের খুঁটি লাগানো হয়েছে এবং গাছগুলো খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গাছে এ বছর ৫ থেকে ১৫টি করে ফল ধরেছে। প্রতিকেজি ফল তিনি ৬শ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এক একটি ফল দেড়’শ গ্রাম থেকে ৬শ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়েছে। তার ঘেরের আইলে লাগানো ড্রাগণের চারা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা দরে এবং টবে রাখা চারা ১শ থেকে দেড়’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছরে তিনি ড্রাগণ ফল ও চারা বিক্রি করে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা আয় করেছেন। তার ক্ষেতে ৬ থেকে ৭ হাজার চারা রয়েছে। যা বিভিন্ন স্থানের ক্রেতারা এসে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। সবুর মোড়লের ড্রাগণ চাষ দেখে এলাকার অনেক কৃষক ঘেরের আইলে ড্রাগণ চাষ শুরু করেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, ড্রাগণ ফল পুষ্টিকর ও দামী ফল। কৃষক সবুর মোড়ল লবণাক্ত মাটিতে আবাদ করে সফল হয়েছেন। এ বছর তিনি ঘেরের আইলেও আবাদ করে সফল হয়েছে। তিনি আরো জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে গদাইপুর, দেলুটি ও লতা ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় ঘেরের আইলে ৩০টি ড্রাগণের বাগান তৈরী করা হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য লবণাক্ত এলাকায় ড্রাগণ চাষ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে ড্রাগণ আবাদে কৃষকদের নানা তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।