শনিবার ● ২৬ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » উপকূলীয় নদ-নদীতে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে বাগদা ও পারশের পোনা আহরণ; বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস
উপকূলীয় নদ-নদীতে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে বাগদা ও পারশের পোনা আহরণ; বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা ॥
সুন্দরবন সহ উপকূলীয় নদ-নদীতে নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে নির্বিচারে পারশে ও বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ অব্যহত রয়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও শত শত জেলে নেট ও বেন্দী জাল দিয়ে পোনা ধরছে জেলেরা। এ নেট-জালের অতি ক্ষুদ্র ফাঁস থেকে ডিমসহ মৎস্য প্রজাতির কোন পোনা রেহাই পায় না। একটি বাগদা পোনা সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রায় ১৫০ টি অন্যান্য চিংড়ি, ৩৬ টি সাদা মাছের পোনা, ৫৫৪ টি জুপ্ল্যাাংকটন নষ্ট হচ্ছে। এতে মৎস ভান্ডারখ্যাত সুন্দরবনসহ উপকূলীয়ঞ্চলের মৎস সম্পদ ও জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর উপকূল এলাকার শত শত নারী-পুরুষ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী, খালে নিষিদ্ধ নেট জাল দিয়ে পোনা আহরণ করে থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছের পোনা ধরতে আসা জেলেরা উপকুল সংলগ্ন নদীর তীরে মৌসুম ভিত্তিক অস্থায়ী বসতী গড়ে তোলে। পাইকগাছার বিভিন্ন নদ-নদীতে প্রতিদিন দেড়শতাধিক ঠেলা নেটজাল দিয়ে জেলেরা বাগদা ও পারশের পোনা আহরণ করছে। সুন্দরবন সংলগ্ন পুশুর, শিবসা, ভদ্রা, খোল পেটুয়া নদীর বাজুয়া, পাইকগাছা, কয়রা, নলীয়ান সহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন কয়েক শত নেট জাল দিয়ে বাগদা ও পারশে পোনা আহরণের করেই চলেছে। মৌসুমী জেলেরা নদী, খালে নেটজাল ফেলে ও নদীর কুলে টানা নেটজাল দিয়ে পোনা ধরছে। এর ফলে সুন্দবনের নদ-নদীর খালে বাগদা, গলদা, হরিনা, ঘুসা, মটকা, রসনাই, চাপদা, চটকা, চাকা সহ নানা প্রজাতির চিংড়ি, সাদা মাছ যেমন- ভেটকি, টেংরা, পারশে, ইলিশ, পাঙ্গাস, দাতনা, ভাঙাল, মাগুর, বাইন, চেলা, পুঁটি সহ নানা প্রজাতির কাঁকড়ার পোনা নষ্ট হচ্ছে। বাগদা ও পারশে পোনা ব্যবসায়ীরা জানান, এ অঞ্চলের মৎস্য ঘেরগুলোতে নদ-নদীর পারশে ও বাগদার পোনা চাহিদা বেশি। বর্তমানে সুন্দরবনের পারশের পোনা ২৪শ টাকা হাজার ও নদীর পোনা ২ হাজার টাকা হাজার দরে বিক্রি হচ্ছে। আর হ্যাচারির বাগদার পোনা সাড়ে ৪শ টাকা থেকে ৫শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য অধিক লাভের জন্য জেলেরা সুন্দরবন সহ উপকূলের বিভিন্ন নদ-নদী থেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পারশে ও বাগদার পোনা আহরণ করেই চলেছে।
বাংলাদেশ মৎস গবেষনা ইনস্টিটিউটের পাইকগাছা নোনা পানি গবেষনা কেন্দ্রের তথ্য মতে, খুলনার পাইকগাছা এলাকায় একটি বাগদা পোনা আহরণে ১১৯ টি অন্যান্য চিংড়ি, ৩১ টি সাদামাছ ও ৩১২ টি জুপ্ল্যাাংকটন ধ্বংস হচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরা এলাকায় একটি বাগদা পোনা আহরণে ১৫০ অন্যান্য চিংড়ি, ৩৬ টি সাদামাছ ও ৫৫৪ টি জুপ্ল্যাাংকটন ধ্বংস হচ্ছে। এর ফলে সুন্দরবনে নদী-খালে মাছের অভাব দেখা দিয়েছে ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সাগর মোহনা ও সুন্দরবন উপকুলে নদ- নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে পোনা আহরণে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জেলেরা তার পরোয়া না করে পোনা আহরণ করে চলেছে। আহরনকৃত পোনা উপকূলীয় বিভিন্ন চিংড়ি ঘেরে বিক্রি হচ্ছে। আহরণকৃত পোনা উপজেলার সোলাদানা ঘাট, আলমতলা, বাইনতলা ঘাটে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ভোরে শত শত ব্যবসায়ীরা এসকল হাট থেকে ড্রাম ও হাড়িতে করে পোনা ক্রয় করে পাইকগাছা সহ পাশ্ববর্তী উপজেলায় বিক্রি করছে। এ বিষয়ে পাইকগাছার ঘের মালিক রেজাউল ইসলাম, আব্দুল করিম, নজরুল ইসলাম জানান, হ্যাচারীর পোনা থেকে নদীর পোনা ঘেরে ছাড়লে চিংড়ি উৎপাদন বেশী হয় এবং ভাইরাস সহ অন্যান্য ঝুঁকি কম থাকে। এজন্য এলাকার নদীর পোনা হ্যাচারীর পোনা থেকে অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে। আর দাম বেশী হওয়ায় জেলেরা নিষিদ্ধ নেটজাল দিয়ে নির্বিচারে নদ-নদীর মোহনা থেকে পোনা আহরণ করে চলেছে। পাইকগাছার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রেজাউল খান জানান, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নেটজাল দিয়ে কেউ যাতে পোনা আহরণ করতে না পারে তার জন্য পাইকগাছার বিভিন্ন নদ-নদীতে নৌ-পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে পারশে ও বাগদার পোনা আহরণ করতে না পারে তার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও নজরদারী জোরদার করা হয়েছে। প্রতিদিন উপকূল এলাকার নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য লার্ভি বিনষ্ট হওয়ায় প্রাণীকুলের খাদ্যের বিরাট অংশ ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। খাদ্যে বিচিত্রময় না থাকায় বিভিন্ন প্রাণীদের সুষ্ঠ বর্ধন ব্যহত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে তাদের প্রজজন ও ডিম দেওয়ার ক্ষমতা। অন্যদিকে বিনষ্ট হচ্ছে জলজ প্রাণীদের বিচরণ ক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞাদের মতে, জীববৈচিত্র ও উপকূলীয় অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত উপকুলীয় মোহনা নদ-নদী থেকে পোনা আহরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।