শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » পরিবেশ » পরিযায়ী পাখি জীববৈচিত্র্যের দুত
প্রথম পাতা » পরিবেশ » পরিযায়ী পাখি জীববৈচিত্র্যের দুত
১১৯৮ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পরিযায়ী পাখি জীববৈচিত্র্যের দুত

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

 

পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় পাখিদের ভূমিকা অপরিসিম। পরিবেশবান্ধব এই প্রাণীরা মানুষের সুস্থ্য জীবনধারাকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। পাখির নাম শুনলে হৃদয় মন জুড়ায়। প্রকৃতির অলঙ্কর এই পাখি। পাখি প্রকৃতির সব থেকে কাছের ও অবিচ্ছেদ্য এক অংশ।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাওর-বাঁওর, নদ-নদী, বিল, পুকুর-জলাশয়ে পরিযায়ী বা অতিথি পাখির আগমন ঘটে। শীত প্রধান দেশের তীব্র শীত ও তুষার পাত থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে খাবারের খোঁজে বাংলাদেশের মত কম শীত প্রধান দেশে পাখির আগমন ঘটে। পৃথিবীর সব দেশে পাঁখি আছে। পৃথিবীতে ১০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার প্রজাতি পাখি পরিযায়ী। পরিযায়ী পাখিদেরকে আগে অতিথি পাখি বলা হতো। কিন্তু নীবিড় গবেষণায় দেখা গেছে যে, এরা অতিথি পাখি নয়, বরং যে দেশে যায় সেখানে ডিম পাড়ে এবং সেই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের হওয়া পর্যন্ত বাস করে। তারা ভীন দেশে কয়েক মাস বসবাস করে। বছরের স্বল্প সময়ের জন্য তারা নিজ দেশে বসবাস করে এবং বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে নিজের দেশ ছেলে বিশেষ প্রয়োজনে অন্যকোন দেশে চলে যায় এবং কিছু দিনপর আবার নিজ দেশে ফিরে আসে। এই জাতীয় পাখিদেরকেই সাধারণত পরিযায়ী পাখি বলে।

প্রতিবছর উত্তর গোলার্ধের শীত প্রধান দেশ সাইব্রেরিয়া, মঙ্গোলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিযায়ী পাখি আসে। শীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদ-নদী, হাওর-বাওর, উপকূল ও জয়াশয় গুলোতে এ পাখি ঝাকে ঝাকে ফিরতে শুরু করে। আবার শীত শেষে একই ভাবে দেশন্তরী হয়। আবহাওয়া পরিবর্তন, খাদ্যের সন্ধ্যান ও প্রজনন সহ নানা কারণে পাখিরা জীবনের ঝুকি নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণ করে। এরা অতিথি নয়, দেশে পাখি পরিবারের একটি অংশ। খাদ্যের অভাব ও পরিবেশ বিপর্যায়ের কারণে মাঝে মাঝে দেশের বাহিরে অবস্থান করে।

---

বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮৫৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি (প্রায় ১৯%)। শুরু ইউরোপ আর এশিয়ায় প্রায় ৬শ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি রয়েছে। এ সব পাখির প্রায় দেড়’শ প্রজাতির পাখি প্রতিবছর বাংলাদেশে আসে। বরফ শুভ্র হিমালয়ে ও উত্তর এশিয়া থেকেই বেশির ভাগ পাখির আগমন ঘটে। এছাড়া ইউরোপ অঞ্চল থেকে এসব পাখি নভেম্বর থেকে আশা শুরু হয় এবং ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিযায়ী পাখির গুরুত্ব অপরিসিম। নদীমাতৃক আমাদের বাংলাদেশ নানা সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পরিযায়ী পাখির কলতান, ডানা ঝাপটানি ও পাখা মেলে উড়ে বেড়ানো প্রকৃতি সৌন্দর্যে যোগ হয় এক নতুন মাত্রা। জীবন বাঁচাতে এসব পাখি ঝাকে ঝাকে আমাদের দেশে আসে। আর এসব পাখিদের আমরা অতিথি পাখি বলে ডাকি। পরিযায়ী পাখি শুধু প্রকৃতি-পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, আমাদের পরিবেশেও উপকার করে। ফসলের ক্ষেতের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে তারা কৃষককে সহায়তা করে। এরা ক্ষতিকর জলজ ও স্থলজ পোকা-মাকড় খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, মাছের খাবার হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে যে সব স্থানে অতিথি পাখির সবথেকে বেশি আগমন ঘটে তাদের মধ্যে অন্যতম সিলেটের হাকালুকি হাওর, বাইক্কাবিল, নীলফামারীর নীলসাগর, ঢাকা মীরপুরের চিড়িয়াখানা, জাতীয় উদ্যান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জলাশয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ জেলার টঙ্গুয়ার হাওর, বরিশালের দুধসাগর, সুন্দরবন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সচারাচর যেসব পাখি দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বালিহাঁস, পাতিসরালি, সাদাবক, দলপিপি, রাজসরালি, পানমুরগী, পানকৌড়ি, ঈগল, বেগুনিকালেম, কাসতেচড়া, কুন্তিহাঁস, নীলশির, লালশির, পাতারিহাঁস, বামনীয়া, ভূটিহাঁস, চকাচকি, কানিবক, ধূসরবক, জলময়ূর, ডুবুরি, খোপাডুবুরি, গঙ্গাকবুতর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

পাখি বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের সৃষ্ট নানা করণে পাখিরা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয় ও খাদ্যের অভাবের কারণে পাখিরা প্রতিবছর শীতকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর ও জলাশয়ে আশ্রয় নেয়। পরিযায়ী পাখির নিরাপদ জীবন যাপন ও পরিবেশ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। শীত মৌসুমে অনেকে শখ মেটাতে পাখি শিকার করেন। আবার অনেকে শীত মৌসুমটাকে পাখি শিকার পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। পাখি শিকারীরা ফাঁদ, বিষটোপ, জালপেতে ও গুলি করে পরিযায়ী পাখি শিকারে মেতে ওঠেন। বাজারেও পাখি বিক্রয় করতে দেখা যায়। অনেকেই রসনা তৃপ্তি মেটাতে পাখি কিনে বাড়ি নিয়ে যান।

কেউ শখের বসেই শিকার করুক, আর কেউ অসচেতনতার কারণে শিকার করুক; পাখি শিকার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি পরিযায়ী পাখি শিকার করেন তাহলে তার সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং একই অপরাধ দ্বিতীয় বার করলে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। এ ছাড়া পরিযায়ী পাখির দেহের কোন অংশ সংগ্রহ, বেচাকেনা কিংবা পরিবহন করলে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন।

পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পরিযায়ী পাখিদের গুরুত্ব অপরিসিম। পাখি প্রকৃতির অলঙ্কর। তাই এদের সংরক্ষণ করা জরুরী। পাখিদের স্বাভাবিক প্রজনন ও তাদের সুষ্ঠু জীবন ধারাকে টিকিয়ে রাখতে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন। নিজেদের ভালোর জন্য ও আইনের প্রতিশ্রদ্ধা রেখে পাখি শিকার করা বদ্ধ করা সকলের দায়িত্ব। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রতিটি নাগরিককে পরিযায়ী পাখি সুরক্ষায় একযোগে কাজ করতে হবে।

 

লেখক ঃ সাংবাদিক

 





আর্কাইভ