বৃহস্পতিবার ● ১৪ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বনবিবি দিবস উদযাপন বন্ধ হোক: সুন্দরবনের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় বিশ্বাস সুরক্ষিত থাকুক
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বনবিবি দিবস উদযাপন বন্ধ হোক: সুন্দরবনের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় বিশ্বাস সুরক্ষিত থাকুক
এস ডব্লিউ নিউজ ঃ একশন এইড বাংলাদেশ নামে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ৩১ মার্চ বনবিবি দিবস উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদের বনবিবি মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ, সুন্দরবন ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সুধীজনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছর জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে ১লা মাঘ (পঞ্জিকা মতে) বনবিবি’র পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত করে সুন্দরবন ভিত্তিক পূজা বনবিবিকে নিয়ে ৩১ মার্চ বনবিবি দিবস উদযাপন করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়েছে।
ফেসবুকে বনবিবি দিবস ২০১৯ নামে একশন এইড এর পেজ থেকে জানা গেছে, সুন্দরবনের জঙ্গলে বসবাসকারী জনগোষ্টীরা বনবিবিকে পূজা দিয়ে থাকে। ধারনা করা হয় যে, বনবিবি সবসময় তাদের সঙ্গে থাকেন। রক্ষা করেন সকল প্রকার বিপদ থেকে। এই ধারনা থেকে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্যমী নারীদের বনবিবি হিসাবে স্বীকৃতি দিতে চায়। ইতিমধ্যে যারা বনবিবি হিসাবে সমাজ পরিবর্তনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে তাদের সামনে আনতে চায়, যাতে অন্যরাও উৎসাহিত হয় বনবিবি হয়ে উঠতে। এই যুক্তির ভিত্তিতে একশন এইড বনবিবি দিবস পালন করার উদ্যোগ গ্রহন করেছে। যা সুন্দরবন ভিত্তিক ইতিহাস ঐতিহ্য ও ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করা হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
বনবিবি বা বনদেবী বা ব্যাগ্র দেবী একই সাথে হিন্দু ধর্মের দেবী ও বন সংলগ্ন মুসলমানদের পীরানি। সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশের আশেপাশের এলাকার জেলে, মাওয়ালী ও বাওয়ালী জনগোষ্ঠী বাঘের আক্রমন হতে রক্ষা পেতে বনবিবির পূজা করেন। সুন্দরবন অঞ্চলের লোকালয়ে বনবিবি হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষে পূজিত হন। বনজীবিদের কাছে স্বমহিমায় পূজিত দেবীর নাম বনবিবি। তিনি অরণ্যের দেবী রূপে পূজিতা। বনজীবীদের ধারনা বাঘ ও ভুত-প্রেতের মত অপশক্তির উপর কর্তৃত্ব করেন বনবিবি। তাই গভীর বনে কাঠ, গোলপাতা, মধু ও মোম সংগ্রহ বা মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য বনবিবির উদ্দেশ্যে শিরনি দেন ক্ষীর বা অন্ন। একমাত্র সুন্দরবন কেন্দ্রিক জনপদে বনবিবির পূজা হয়। শুধু বাংলাদেশে নয় ভারতের সুন্দরবন জনপদে ব্যাপক আয়োজনে বনবিবির পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই বনবিবি দিবস নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্যমী নারীদের বনবিবি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা হবে ধর্মের উপর আঘাত ও অবমাননার শামিল। তাই উদ্যোক্তাদের বনবিবির নাম ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছে সুন্দরবন উপকূল অঞ্চলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা গুলিতে প্রতিবছর বনবিবির পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সাতক্ষীরার দেবহাটায় অতিত আর ঐতিহ্যে ভরা বনবিবির বটতলা রয়েছে। প্রায় ২ একর জমি জুড়ে এই বটতলা। প্রতিবছর স্থানীয়দের উদ্যোগে ১লা মাঘ হাজতমেলা ও বনবিবির পুজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে উপকূল অঞ্চলের পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা সাংবাদিক প্রকাশ ঘোষ বিধান জানান, বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বাদাবন থেকে সুন্দরবন আর সুন্দরবন থেকে বিশ্ব ঐতিহ্য। এ বন বিশ্বের বিস্ময়। দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর আর চারিদিকে বিশাল জলরাশী এর মাঝে রহস্যময় সুন্দরবন অবস্থিত। ক্ষনে ক্ষনে এই বনের রূপ বদলায়। এ বন প্রকৃতির সৃষ্টি। সুন্দরবন ঘিরে বনবিবি’র উপখ্যান বনের রাণী বনবিবি ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে তার পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এটা শুধু একমাত্র সুন্দরবন কেন্দ্রিক সুন্দরবনের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস বনে থাকতে দিন। বনবিবি দিবস পালন করলে ধর্মীয় বিষয়ে আঘাত করা হবে। সুন্দরবন ও তার ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের। তাই বনবিবি দিবস পালন না করে, অন্য কোন নামে যেমন বিবি দিবস পালন করার জন্য কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিতে পারেন। সুন্দরবন সুন্দর থাকুক এটা আমাদের সকলের কামনা।