শনিবার ● ১১ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » আবহমান গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য তেলের ঘানি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে
আবহমান গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য তেলের ঘানি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে
এম. আব্দুল করিম, কেশবপুর (যশোর): আউল বাউল লালনের দেশ, শহীদ গাজী আউলিয়ার দেশ, পীর মুর্শিদের বাংলাদেশ, আমার সোনার বাংলাদেশ। এই আবহমান গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য তেলের ঘানি কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আজ থেকে প্রায় ১’শ বছরেরও আগে থেকে মানুষের রান্না বান্না ও গায়ে মাখার জন্য যে তেল ব্যবহার হতো, তা তৈরীর এক মাত্র উপায় ছিল কাঠের তৈরী ও গরুর কাধে ঘুরানো ঘানি মেশিন। আর এই ঘানি মেশিনে যারা সরিষা মাড়াই করে তেল বের করে তাদেরকে বলা হয় কলু। এই কলুরাই এক সময় গ্রামবাংলা এমনকি শহরের মানুষের জন্যেতো বটে আগের কালে রাজা বাদশাদেরও তেলের চাহিদা মেটানোর একমাত্র উপায় ও মাধ্যম ছিলো। তাই তাদের কদরও ছিল সীমাহীন। গ্রামবাংলার মানুষেরা যখন কোন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো তখন ১০ থেকে ১৫ দিন আগে কলুদের কাছে অর্ডার করতে হতো তেলের জন্য। এক সময় গ্রাম গঞ্জের অধিকাংশ কলু সম্প্রদায়ের এক মাত্র আয়ের উপায় ছিলো ঘানিতে সরিষা মাড়াই করে তেল তৈরী করা। কিন্তু আজ আর তা তেমন একটা চোখে পড়ে না। ঘানিতে এ বারে ৫ কেজি পরিমান সরিষা মাড়াবি করা যায় কলুদের ভাষায় তাকে একটি গাছ বলা হয়। আর একটি গাছ মাড়াই করতে ঘানি ঘোরাতে সময় লাগে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। একাধীক গরু দিয়ে পালাক্রমে ঘোরানো হয়। একটি গরুর চোখে কালো কাপড় বেধে এক টানা দুই থেকে আড়াই ঘন্টা ঘোরানোর পর অন্য গরু দিয়ে ঘোরানো হয় বাকী সময়। বাজারে বর্তমানে ঘানি ভাঙ্গানো তেলের দামও অনেক বেশী। যান্ত্রিক মেশিনে ভাঙ্গানো তেলের দাম যেখানে প্রতি কেজি ১’শ টাকা, সেখানে ঘানি ভাঙ্গানো তেলের দাম প্রতি কেজি ২৫০টাকা থেকে ২৮০টাকায় বিক্রি হয়। যে কারণে এখনো অনেকেই ধরে রেখেছে বাপ দাদাদের এই পেশাকে। এক অনুসন্ধানে জানাগেছে, শুধু যশোরের কেশবপুরের ভালুকঘর, মেহেরপুর, বেগমপুর, সাগরদাঁড়ী, বাদুড়িয়া, সাতবাড়িাসহ ২০টি গ্রামের ৮’শ’র অধিক পরিবার জড়িত ছিল প্রাচীনতম এই পেশার সাথে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকুলতা ও যান্ত্রিক মেশিনের দাপটে এই পেশা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। এখন ২০ থেকে ২৫ পরিবার প্রাচীন এই পেশাকে আকড়ে ধরে আছে। বাদুড়িয়ার ঘানি ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর বিশ্বাস বলেন যান্ত্রিক মেশিনের দাপটে অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। এই গ্রামে অনেকই এই পেশার সাথে জড়িত ছিল বর্তমানে আমরা ৫ পরিবার টিকে আছি। ভালুকঘরের আকাম আলী সরদার বলেন তাদের গ্রামে আগে প্রায় ২০/২৫ পরিবার ঘানি পেশার সাথে জড়িত ছিল, যান্ত্রিক মেশিনের দাপটে এবং সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাবে বর্তমানে অনেকেই ধরে রাখতে পারিনি। বেগমপুরের ইমান আলী বলেন আমাদের গ্রামের ৫ পরিবারের মধে ১টি পরিবার এ পেশায় টিকে আছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘানি এদেশের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য, সরকারী পৃষ্টপোষতা পেতে ঘানি ব্যবসায়ী সমিতি যদি সহযোগিতা চায় সরকার এটাকে টিকিয়ে রাখতে আন্তরিক।