বৃহস্পতিবার ● ১১ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » ডুমুরিয়া ১০টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নাবালক শিশুকে নারকেল গাছে তুলে দেয়ার অভিযোগ। ৩জনকে আসামী করে মামলা দায়ের
ডুমুরিয়া ১০টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নাবালক শিশুকে নারকেল গাছে তুলে দেয়ার অভিযোগ। ৩জনকে আসামী করে মামলা দায়ের
অরুণ দেবনাথ, ডুমুরিয়া প্রতিনিধি
কে নেবে এই শিশুটির দায়িত্ব ! কে করবে তার দেখভাল। ডুমুরিয়ার রোস্তমপুরে ১০টাকার প্রলোভন দেখিয়ে জিহাদ নামে ১২বছরের এক শিশুকে নারকেল গাছে তুলে দেয়ায় গাছ থেকে পড়ে তার জীবন এখন বিপন্নের পথে। জমিজমা সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে প্রায় ১০লক্ষ টাকা ব্যয় করলেও এখনও শিশুটির মাজা হতে পায়ের তলা পর্যন্ত অকেজো হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সে গরীব পিতার মাথার বোঝা হয়ে পড়েছে। ডাক্তার দেখানোর মত কোন সঙ্গতি তার নেই। স্বামী স্ত্রী পরের জমিতে এক বেলা কাজ না করলে তাদের পেটে ভাত জোটে না। অথচ জিহাদ গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার পর বিবাদী পক্ষ তার চিকিৎসা বাবদ সকল ব্যয়ভার বহন করার অঙ্গীকার করলেও এখনও পর্যন্ত তারা কোন অর্থ দেননি বলে জানা যায়। নিজের সন্তানকে বাঁচানোর জন্য নিরুপায় হয়ে জিহাদের পিতা বাদী হয়ে খুলনা অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৩জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
প্রাপ্ত মামলার বিবরণে জানা যায়, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ থাকার কারণে ২০১৮সালের ২৭সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়া উপজেলার রোস্তমপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম গাজীর পুত্র জিহাদ গাজী (১২)কে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে যোগসাজসে ১০টাকার প্রলোভন দেখিয়ে শিশুটি নাবালক জেনেও আসামী পক্ষ জোরপূর্বক নারকেল পাড়ার জন্য নারকেল গাছে তুলে দেয়। কচি শিশু জিহাদ মাত্র ১৫ফুট উপরে ওঠা মাত্রই মাথা নিচু অবস্থায় চিৎকার দিয়ে গাছ থেকে পড়ে যায়। এতে তার বাম হাত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। একটি হাড় মাথার ভিতরে ঢুকে যায়। মাথার ভিতর থেকে রক্ষ হলুদ মেশানো মগজ জাতীয় এক প্রকার গাড় তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পিঠের হাড়, মাজার হাড় ও দুই পায়ের হাড় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এলাকাবাসী চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে অচেতন মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ২দিন চিকিৎসা করানোর পর অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত গাজী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে ৯দিন চিকিৎসা করানোর পর উন্নত চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট ও ভিসা প্রস্তুত করে গত ২০১৯সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারী ভারতের ভেলোরে সিটি স্ক্যানিং/এম আর আই করানো সহ প্রায় ৩মাস ভেলোরে তাকে চিকিৎসা করিয়ে প্রায় ১০লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু শিশুটি গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার পর আসামী পক্ষ গ্রামবাসী মাধ্যমে বসাবসি করে জিহাদের চিকিৎসা বাবদ সকল ব্যয়ভার বহন করার কথা থাকলেও সামর্থ্য থাকার সত্ত্বেও তারা আজও পর্যন্ত কোন টাকা খরচ করেনি বা দেয়নি। একারণে দিনমজুর কামরুল তার সকল সহায় সম্বল বিক্রয় করে চিকিৎসার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বর্তমানে শিশুটির মাজার অংশ থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত অকেজো হয়ে পড়েছে। গরীর পিতার আর্থিক সংগতি না থাকার কারণে বিনা চিকিৎসায় তাকে বিছানার উপর পড়ে থাকতে হচেছ। নিরুপায় হয়ে এলাকাবাসীর নির্দেশে নাবালক শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য তার পিতা কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে রোস্তমপুর গ্রামের মৃত আব্দুর জব্বার সরদারের পুত্র ফজলুর রহমান সরদার(৫২), ফজলুর রহমান সরদারের পুত্র এসএম মাসুদ সরদার(২৮) ও আসাদুজ্জামান সরদার(৩০) এর নাম উল্লেখ করে খুলনা অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৩জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।