সোমবার ● ৪ মে ২০২০
প্রথম পাতা » সর্বশেষ » মোংলা কাচাবাজার সিন্ডিকেট চক্রের নিয়ন্ত্রনে।
মোংলা কাচাবাজার সিন্ডিকেট চক্রের নিয়ন্ত্রনে।
মোঃএরশাদ হোসেন রনি, মোংলা।
সিন্ডিকেট চক্র নিয়ন্ত্রন করছে মোংলা কাঁচা বাজার। মাহে রমজান ও করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও সাধারণ মানুষের রেহাই মিলছে না মোংলা কাঁচাবাজারের এই সিন্ডিকেট চক্রের কবল থেকে। করোনা প্রাদুর্ভাবে শ্রমিক অধ্যুষিত এখানকার মানুষগুলো যখন কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে, তখনই মোংলার প্রধান কাঁচা বাজারের পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্থানীয়রা আরো অসহায় হয়ে পড়েছেন। সিন্ডিকেট চক্রের বেপরোয়া বাজার নিয়ন্ত্রণই ভোগাচ্ছে তাদের। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। বরং এতে সিন্ডিকেট চক্র আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, মোংলা শহরের অন্তত ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিন কাঁচা বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে রোজার কয়েকদিন আগে কাঁচা বাজারটি স্থানীয় প্রশাসন স্থানান্তরিত করে শহরের হ্যালিপ্যাড মাঠে। বাজারটি সরিয়ে আনার আগে কাঁচা পণ্যের দাম কিছুটা সহনশীল থাকলেও সম্প্রতি তরিতরকারির দাম বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে এই রমজান ও করোনা দুর্যোগের সময় ক্রেতা সাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে।
করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষায় সরকারি নির্দেশনায় মোংলা বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় দোকানপাট ছাড়া অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাণিজ্যিক জাহাজ, ইপিজেড ও শিল্প-কারখানায় কমে গেছে কর্মসংস্থান। লবণ পানি অধ্যুষিত মোংলায় সবজি চাষ না হওয়ায় রমজান ও করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে বিশেষ করে কাঁচা তরিতরকারির অতিরিক্ত বাড়তি দামের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে গরীব আর মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো।
ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, কাঁচা বাজার কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ১৩ সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারাও সিন্ডিকেটের বেঁধে দেওয়া দামের বাইরে কোন খুচরা ব্যবসায়ী কাঁচামাল বিক্রি করতে পারে না। বর্তমান সময়ে প্রান্তিক চাষীরা সবজির তেমন দাম না পেলেও অভিযোগ উঠেছে মোংলার ১৩ জনের সংঘবদ্ধ দু’টি পৃথক সিন্ডিকেট আড়ৎদার চক্র ক্রয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী দামে মোংলার প্রধান বাজারে কাঁচা পণ্য খুচরা দোকানদারদের কাছে বিক্রি করছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারীর সদস্যদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সিন্ডিকেট চক্র পণ্য ক্রয়ের মূল রশিদ পরিবর্তন করে বেশী দাম লেখিয়ে ডুপলিকেট স্লিপ তৈরী করে থাকে বলেও অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ সিন্ডিকেট চক্রের অন্যতম সদস্য হলো রফিক, কামরুল, জাহিদ, সুমন, বাদল, জামাল, নাসির, কবির, ফিরোজ, আলু শাজাহান, মান্নান, আঃ গণি, কালু। কেজি প্রতি কোন কোন পণ্যে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য করছে খুচরা ব্যবসায়ীদের। যার ফলে খুচরা দোকানদের হাত ঘুরে ক্রেতাদের সে পণ্য কিনতে হচ্ছে আরো বেশী দামে। রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী ওইসব সিন্ডিকেটের হোতারা দেখাচ্ছেন নানা অজুহাত। অল্প দিনের ব্যবধানে এ চক্রের সদস্যরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন।
সাধারণ ক্রেতা ও খুচরা দোকানদাররা অভিযোগ করে বলেন, কয়েকজন পাইকার মিলে সিন্ডিকেট করে খুলনা থেকে কাঁচামাল এনে অনেক বেশী দামে তাদেরকে তা কিনতে বাধ্য করে। ফলে পণ্যের ক্রয়মূল্য অনেক বেশী ও তাদের সামান্য লাভ মিলিয়ে অন্যান্য স্থানের চেয়ে এখানে কাঁচা সবজির দাম বেশী পড়ে যায়।
খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, খুলনা থেকে পেশী শক্তির জোরে প্রভাবশালী এ সিন্ডিকেট চক্র সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাঁচা পণ্য কিনে আনতে দেয় না। তাদের বেঁধে দেয়া দামেই খুচরা দোকানদারদের পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়। এনিয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। বরং এতে সিন্ডিকেট চক্র আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে পাইকারী আড়ৎদাররা অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা খুবই স্বল্প পরিমাণ লাভ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্য বিক্রি করেন। আড়ৎদারদের মধ্যে কোন সিন্ডিকেট নেই বলে তারা দাবি করেন।
এ ব্যাপারে মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাহাত মান্নান মোংলা বাজারে কাঁচা বাজারের তরি তরকারির দাম বেশি -এমনটা স্বীকার করে বলেন, মোংলা বাজারে নিত্য কাঁচা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার কেন্দ্রিক সিন্ডিকেট চক্রটি যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তা চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।