মঙ্গলবার ● ৯ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » সারাদেশ » ডুমুরিয়ায় অবশেষে ইউএনও’র হস্তোক্ষেপে স্বস্তি ফিরো পেলো হাজারো যাত্রী
ডুমুরিয়ায় অবশেষে ইউএনও’র হস্তোক্ষেপে স্বস্তি ফিরো পেলো হাজারো যাত্রী
অরুন দেবনাথ, ডুমুরিয়া, খুলনা:
খুলনার ডুমুরিয়ায় নদীর নাব্যতা হারিয়ে পলি ভরাট হয়ে দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা কাঞ্চননগর খেয়া ঘাটটি অবশেষে সচল হতে যাচ্ছে। গত ৬ বছর আগে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দে আধুনিক মানের পাকা ঘাট নির্মান করা হলেও এর সুফল পাইনি কেউ। অরক্ষিতভাবে পড়ে থাকা ঘাটটি অবশেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তোক্ষেপে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে বিকল্প ভাবে মানুষ যাতায়াতের উপযোগি করে তোলা হচ্ছে।
জানা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার সংযোগস্থলে কাঞ্চননগর-পারবটিয়াঘাটা খেয়া ঘাট। এই ঘাট পারাপার হয়ে দু’পারের মানুষ দ্রুত যাওয়া-আসাসহ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সহজে আনা-নেওয়া করতো। মানুষের জীবনযাত্রার মান আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে এলজিইডি’র বাস্তবায়নে ৬ বছর আগে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দে ঘাটটি আধুনিকভাবে পাকাকরণে উন্নিত করা হয়। ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঘাটটির শুভ উদ্বোধন করেন খুলনা-৫ সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। কিন্তু বছর গড়াতে না গড়াতেই সালতা নদীর নাব্যতা হারিয়ে ডুমুরিয়ার অংশে ব্যাপকভাবে পলি ভরাট হয়ে পড়ে। ক্রমন্বয় ঘাট থেকে নদী পর্যন্ত প্রায় ১’শ ফুটের বেশি পলি ভরাট হয়ে যায়। একপর্যায়ে ঘাটটি পারাপারের একেবারই অনুপোযোগি হয়ে পড়ে। যার ফলে ৩ কিলোমিটারের পথ ৩০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয় দু’পারের মানুষের। সীমাহিন বিপদের মধ্যে পড়ে স্কুলগামী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও। তাদের সঠিক সময় বিদ্যালয় পৌঁছাতে বিঘœ সৃষ্টি হয়। নদীতে কখন জোয়ার আসবে সেই অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। কারণ, জোয়ার হলেই পন্য পারাপার করতে হয়। ঘাটটি অচল থাকায় বেশি বিপাকে পড়ে এলাকার সবজি ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় পবিত্র মন্ডল, দিলীপ রায়সহ অনেকেই বলেন, পলি পড়ে ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। এ ঘাটে জোয়ারে পার হওয়া যায়। ভাটা হলে কাঁদায় নামতে হয়। এরমধ্যে মাঝে মাঝে খেয়া থাকেনা। ফলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জেলের নৌকায় পার হতে হয়।
এ প্রসঙ্গে ওই খেয়া ঘাটের পাটনি গৌর পাটনি বলেন, আমি ৪৪ বছর এই (কাঞ্চননগর-পারবটিয়াঘাটের) খেয়া ঘাটের পাটনি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ঘাটে পলি এতো পরিমানে পড়েছে যে ঘাট ধুতে ধুতে আর পারিনি। নদীর ডুমুরিয়ার অংশে ব্যাপক ভরাট হয়ে গেছে। জোয়ারে দুই একজন হয়, ভাটায় কোন লোক হয়না। কারণ অনেকদুর কাঁদায় হাটতে হয়। যার ফলে আয়-রোজগার নেই। কিভাবে যে সংসার চালাবো এই দুশ্চিন্তায় আছি আমি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিমাংশু বিশ্বাস বলেন, ঘাটটি একদম বেহাল অবস্থা। পলি ভরাট হয়ে মানুষ চলাচলের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর আগে ৫০ লাখ টাকা ব্যায় সরকারি বরাদ্দে ঘাটটি নির্মান হয়। কিন্তু মানুষ ঘাটের সুফল ভোগ করতে পারেনি। দেখতে না দেখতেই নদীতে পলি পড়ে ঘাটটি অকেজো হয়ে যায়। ইউএনও স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মানুষ চলাচলের জন্য আশু বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হচ্ছে। এটি হলে মানুষ স্বস্তি ফিরে পাবে। তারা নির্বিগ্নে পারাপার হয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ মেটাতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহনাজ বেগম বলেন, পলি পড়ে ঘাটের অবস্থা একেবারই বেহাল হয়ে গেছে। ৩ কিলোমিটারের পথ ৩০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয় দু’পারের মানুষের। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান মহোদয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলি। তিনি বলেন, স্থায়ীভাবে পলি অপসারণের কাজ করতে সময় সাপেক্ষের ব্যাপার। যেহেতু জনগণের জীবনযাত্রার বিঘœ ঘটছে। তাই আমরা আপাতত সাঁকো বানিয়ে জনগনের চলাচলের উপযোগি করার চেষ্টা করছি। যাতে জোয়ার কিংবা ভাটায় মানুষ নির্বিগ্নে চলাচল করতে পারে। তিনি আরো বলেন, অনেকেই বিভিন্ন স্কুল বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। তারা কিন্তু সঠিক সময় যেতে পারছে না। যার কারণে বিকল্পভাবে যাত্রীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছি।