বুধবার ● ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » উপকূল » উপকূলী অঞ্চলের লবনাক্ত জমিতে কেওড়ার ফল:অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনা
উপকূলী অঞ্চলের লবনাক্ত জমিতে কেওড়ার ফল:অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনা
প্রকাশ ঘোষ বিধান ॥
উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে।কেওড়া দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাছ। এর গড় উচ্চতা ২০ মিটার। এ গাছের পাতা চিকন, ফল আকারে ছোট ও গোলাকার। কেওড়া সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান বৃক্ষ। সুন্দরবনে নদী ও খালের তীর এবং চরে এ গাছ বেশি জন্মায়। এর পাতা সুন্দরবনের তৃণভোজী প্রাণীর প্রধান খাদ্য। ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ঔষধী গুনাগুন রয়েছে। কেওড়া গাছ প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময়ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার চরভরাটি জমিতে ব্যাপক হারে কেওড়া গাছ লাগানো হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক ভাবে কেওড়া চাষ সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার অর্থনীতির জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিকল্পিত কেওড়া চাষ এ অঞ্চলের দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম সফল উদ্দ্যেগ হতে পারে ।
চলতি মৌসুমে সুন্দরবন সহ উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ফলে ভরে গেছে প্রতিটি গাছ। কেওড়া গাছ মুলতো সুন্দরবন কেন্দ্রিক বৃক্ষ হলেও লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় উপকূলীয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা সহ সুন্দরবন সংলগ্ন বিস্তিৃর্র্ন এলাকার নদীর চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির গাছের সাথে কেওড়া গাছের চারা লাগানো হচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলার শিবসা, ভদ্রা, মিনহাজ, কড়ুলিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে কেওড়া গাছের চারারোপন করা হয়েছে। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন স্লুইচ গেটের ধারে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো বড় বড় কেওড়া গাছ রয়েছে। কেওড়া বর্ধনশীল হওয়ায় গাছে দ্রুত ফল ধরে। ফাগুনে ফুল ফটে, চৈত্র-বৈশাখে ফল ধরে, আর আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এক একটা গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। এতো বেশি ফল ধরে যে, ফলের জন্য গাছের পাতা দেখা যায় না। এসময় এলাকার হাট-বাজার গুলোতে কেওড়া ফল কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি কেওড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। কেওড়া ফল এলাকার মানুষের কাছে অত্যান্ত প্রিয় একটি ফল। এর স্বাদ টক । চিংড়ি দিয়ে কেওড়ার চাটনি রান্না খুব সুস্বাধু হয়। কেওড়া ফলে রয়েছে প্রায ১২% শর্করা,৪% আমিষ,১.৫% ফ্যাট, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ এবং এর ভেরিভেটিভসমুহ। কেওড়া ফল পলিফেনল,ফ্লাভানয়েড,এ্যান্থোসায়ানিন,অ্যাণ্টিঅস্কড্যান্ট ও আনস্যাচুরেটেড ওমেগা ফ্যাটি এসিডে পরিপূর্ন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, কেওড়া উপকূলীয় অঞ্চলের সুপরিচিত একটি ফল। ফলটির রয়েছে প্রচুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কেওড়া গাছ ও ফল অত্যান্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষ করলে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষের জীবন যাত্রায় অর্থনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে বলে তিনি জানান। উপজেলা বনকর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন, কেওড়া চাষ অত্যান্ত লাভ জনক। এ গাছ দ্রুতবর্ধনশীল হওয়ায় ৩/৪ বছরের মধ্যে ফল ধরে এবং প্রথম বারই ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত ফল হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর ফল বাড়তে থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চরভরাটি জমি রয়েছে। জোয়ার-ভাটা হয় এমন চরভরাটি জমিতে যদি বাণিজ্যিকভাবে কেওড়া চাষ করা হয় তাহলে একদিকে বাঁধ ও পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এর কাঠ জ্বালানি ও ফল বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। কেওড়া চাষে তেমন কোন পরিচর্যা লাগে না এবং লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় এর উৎপাদন খরচও অনেক কম। এ জন্য অধিক হারে কেওড়া চাষ করার মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন সহ উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতি গতিশীল করা সম্ভব বলে তিনি জানান। উপকুলীয় এলাকার লবনাক্ত অনাবাদি জমিতে কেওড়া ফলের জন্মানোর ব্যাপক উদ্যেগ নিলে প্রান্তিক জনগনের বাড়তি আয়ের উৎস হবে তেমনি নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সহ উপকুলীয় পরিবেশের গুনগত মানের উন্নয়ন হবে বলে ধারনা করেছেন পরিবেশবিদরা।