মঙ্গলবার ● ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » রাজনীতি » মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনে হতে বাধা কোথায়
মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনে হতে বাধা কোথায়
মোঃএরশাদ হোসেন রনি, মোংলা
মোংলা পোর্ট পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারী। সে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন মোংলা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর মেয়াদে তিনিই মেয়র হিসাবে পৌরসভার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখনো পর্যন্ত এ পৌরসভায় আর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। মোংলার সর্বত্র আলোচিত বিষয় এখন পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা কোথায়? সময় মতো নির্বাচন না হওয়ার জন্য মেয়রকেই দায়ী করছেন অনেকে । ক্ষমতায় বহাল থাকতে তার অনুগতদের দিয়েই উচ্চ আদালতে নির্বাচনের আগে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন বলে অভিযোগ বর্তমান মেয়র জুলফিকারের বিরুদ্ধে।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারী মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপি ও চার দলীয় সমর্থিত প্রার্থী এবং মোংলা পৌর বিএনপির সভাপতি জুলফিকার আলী ৭হাজার ৯শ ৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ আব্দুস সালাম। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বর্তমান পৌর মেয়রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ওই বছর ১ ডিসেম্বর আদালতের আদেশে মোংলা পোর্ট পৌরসভার নিবার্চন স্থগিত করে নিবার্চন কমিশন। মোংলা পোট পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড ও মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের বিদ্যারবাওন ও ভাটারাবাদ এলাকার সীমানা নির্ধারণ ও তিন সহস্রাধিক ভোটার নিয়ে জটিলতা তৈরী হয়। এ এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে দীর্ঘ দিন যাবৎ পৌর কর আদায় করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঐ এলাকাটি বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পৌর মেয়র ও জেলা প্রশাসকসহ নয় জনকে বিবাদী করে উচ্চ আদালতে রিট করেন বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালামসহ তিনজন । ওই বছর ১৮ নভেম্বর রুলের আদেশ দেন হাইকোট । তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার উপ সচিব মহসিনুল হকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘোষিত তফসিল ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মামলা ও প্রশাসনিক জটিলতায় মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি। মোংলা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সহকারী কমান্ডার ইস্রাফিল ইজারদার গত মঙ্গলবার বাগেরহাট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানান, বিএনপির মেয়র জুলফিকার আলী তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্যে নিজ সমর্থকদের দিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করে নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, চলতি বছর আবারো মামলা করে নির্বাচন বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছেন। সেজন্যে দ্রুত মোংলা পোর্ট পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। এছাড়া তিনি মেয়রের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করার জন্যে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সুশাসনের জন্যে নাগরিক-সুজন মোংলা শাখার সভাপতি শিক্ষাবিদ ফ্রান্সিস সুদান হালদার বলেন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে এবং নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। তা না হলে মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহে ভাটা পড়বে, সেই সাথে দেখা দিবে হতাশা। তিনি সব জটিলতা নিরসন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র ও বিএনপির পৌর সম্পাদক জুলফিকার আলী বলেন, ‘পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের তিন সহস্রাধিক ভোটার ও সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কয়েক বছরের বেশী সময় ধরে বিতর্ক চলে আসছে। ওই এলাকার ভোটাররা এ বিষয়ে মীমাংসার জন্যে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন। আদালত একটি আদেশ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত করেছে। এখানে আমার কি করার আছে? আর আমি নিজেও ও এই মামলার বিবাদী। তারা যদি আমার অনুসারী হতো তাহলে তো আমি এই মামলার বিবাদী বা আসামী হতাম না। তিনি আরো বলেন, আমি গনতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস করি। আমিও চাই দ্রুত এ বিষয়ে নিষ্পত্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ঘোষণা করুক। বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজির আহম্মেদ জানান, সীমানা সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের কাজ। সীমানা নির্ধারণ শেষে গেজেট আকারে তা প্রকাশিত হলে তখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের তফসিল ঘোষণা করতে পারবে। সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় এখনো করেনি। তাই মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, মোংলা বন্দর পৌরসভার সীমানা নির্ধারন নিয়ে বেশ কয়েক বছর যাবত মামলা চলে আসছে। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে আমরা মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) কে এই বিষয়ে দায়িত্ব দেই। তারা গনশুনানি করে সীমানা নির্ধারণ করার পর আমরা তা মন্ত্রনালয়ে পাঠাই। মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। কবে নাগাদ হতে পারে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন।