বুধবার ● ১৪ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকার ঘর পাচ্ছেন দিনাজপুরের দুই প্রতিবন্ধী
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ »
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকার ঘর পাচ্ছেন দিনাজপুরের দুই প্রতিবন্ধী
৪৮১ বার পঠিত
বুধবার ● ১৪ অক্টোবর ২০২০
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকার ঘর পাচ্ছেন দিনাজপুরের দুই প্রতিবন্ধী
এস ডব্লিউ নিউজ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মুজিব বর্ষে বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ এই ঘোষণার আলোকে থাকার ঘর পেতে যাচ্ছেন আরও দুই প্রতিবন্ধী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনা বেগম ও তার প্রতিবন্ধী ভাইকে তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে একটি সেমি পাকা ঘর।জানা গেছে, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মধ্যমপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াহেদের মেয়ে রুবিনা বেগম (৩৬)। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এলাকায় ‘রুবি পাগলি’ নামেই পরিচিত তিনি। ১৫ বছর আগে বিয়ে হলেও দেড় বছরের মাথায় রুবিনাকে ত্যাড় করে তার স্বামী বিদেশ চলে যায়। সেই থেকে গরিব অসহায় বাবার সংসারে থাকেন রুবিনা। বেশ কয়েকমাস আগে বাবাকেও হারান তিনি। বাবা-মা হারা অসহায় রুবিনার ছোট ভাই আশরাফুল আলমও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। ছোট ভাই আশরাফুল আলমকে নিয়ে বাবার রেখে যাওয়া জরাজীর্ণ মাটির ঘরে থাকেন রুবিনা। বর্ষার পানিতে ধুয়ে গেছে মাটির ঘরের দেয়াল। কিছুদিন আগে রান্নাঘরটিও ভেঙে গেছে। বৃষ্টির দিনে ভাঙা টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে ঘরটি।
ঘরটি মেরামত বা নতুন ঘর করার টাকাও নেই রুবিনা-আশরাফুলের। গ্রামে নতুন মানুষ দেখলেই এগিয়ে আসেন রুবিনা। সম্প্রতি এক সাংবাদিককে দেখে রুবিনা বলেন, ‘তোরা কি সরকারি লোক বাহে? তোরা কি এটা (একটা) বাড়ি দিবার পারো হামাক? এ জগতে মোর কেউ নাই। সরকারকে কইয়্যা মোক এটা বাড়ি দে বাহে।’
রুবিনার এই দুর্দশার কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এলে দুস্থ ও দরিদ্র মানুষকে ঘর নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে তাৎক্ষণিকভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনার জন্য ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারের আশ্রায়ন প্রকল্পে ‘আবাসিক ভবন নির্মাণ’ খাতের আওতায় রুবিনা বেগম ও আশরাফুল আলমকে একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণে অর্থও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত ডিজাইন অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে বাড়িটি নির্মাণ করে দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে মুজিববর্ষের মধ্যে সব গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া প্রচেষ্টা চলছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর উপজেলার মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনা বেগমের জন্যও ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণে ইতোমধ্যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। দ্রুততম সময়ে তার জন্য ঘরটি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ‘আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানে মুজিববর্ষের মধ্যে দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়ে ইতোপূর্বে প্রতিটি এলাকা থেকে গৃহহীনদের খুঁজে খুঁজে বের করে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। আশ্রায়ন প্রকল্প ছাড়াও গৃহহীনদের আবাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তহবিলসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে সরকার।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে গৃহহীন হয়ে পড়াদের দুর্দশা দেখে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে “আশ্রয়ন” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পে মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৪০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৪৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন-অসহায়-ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়াও ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫৬ জনকে আয়বর্ধক পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৮টি পরিবারকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
আশ্রায়ন প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে আশ্রয়ন–২ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার ৯৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘর নির্মাণ করে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৩৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সবুজায়নের লক্ষ্যে এসব প্রতিটি প্রকল্পগ্রামে ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষরোপণ করা হয়ে থাকে। ২১ লাখের বেশি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পগ্রামে বসবাসরত উপকারভোগীদের জীবনমান সহজীকরণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।