বুধবার ● ৯ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » রাজনীতি » মুক্তিযোদ্ধাদের যারা কাফের বলেছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্মই ভাস্কর্যবিরোধিতা করছে — তথ্যমন্ত্রী
মুক্তিযোদ্ধাদের যারা কাফের বলেছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্মই ভাস্কর্যবিরোধিতা করছে — তথ্যমন্ত্রী
এস ডব্লিউ নিউজ :
‘মুক্তিযোদ্ধাদের যারা কাফের বলেছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্মই ভাস্কর্যবিরোধিতা করছে’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদ।
আজ রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে শেখ ফজলুল হক মনির ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে মন্ত্রী একথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী এসময় বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘একজন মেধাবী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে অস্ত্রধারণ করে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের পর বীরবেশে বাংলাদেশে স্বাধীনতার লালসূর্যকে ছিনিয়ে আনতে অসামান্য অবদান রেখেছিল, তাদেরকে সংগঠিত করে দেশ গঠনের জন্য তার নেতৃত্বেই যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, শেখ ফজলুল হক মনিকেও তার অন্তসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজুমনি-সহ সেদিন হত্যা করা হয়।’
ড. হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও তাদের ভাবধারা-নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী পরবর্তী প্রজন্ম চায় না দেশ এগিয়ে যাক। ১৯৭১ সালে তারা ফতোয়া দিয়েছিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছে তারা সবাই কাফের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করা ইমানের বরখেলাপ। পাকিস্তান ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সামিল। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হচ্ছিল, তখন তার স্বপক্ষে এই ফতোয়াও দেয়া হয়েছিল যে, এরা ‘গণিমতের মাল’, তাদেরকে ভোগ করা যাবে। যারা সেই ফতোয়া দিয়েছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্মই আজকে ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে, একটি শ্রেণিকে উস্কে দিচ্ছে, ভাস্কর্য ভাঙচুর করছে।’
এই দেশে শতশত বছর ধরে বহু ভাস্কর্য আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমলে বহু ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ইতিহাসকে ধারণ করার স্বার্থে বহু ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। তখন কেউ কথা বলেনি। যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিভিন্ন জায়গায় নির্মিত হচ্ছে, তখন তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। এটি রহস্যজনক।’
ড. হাছান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানেই মুক্তিযুদ্ধ। যারা দেশটা চায়নি, যারা মুক্তিযুদ্ধকে গন্ডগোলের বছর বলে, তারা বঙ্গবন্ধুকেও পছন্দ করেনা। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ফতোয়া দিয়েছিল মুক্তিবাহিনীর সব সদস্য কাফের, তারাই আজকে বলছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা সঠিক হচ্ছে না। তারা এটিকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আবার বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দুই-চার কথা বলার চেষ্টা করে। এ হচ্ছে ছলচাতুরী, তাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের অপকৌশলের অংশ, সেটা সবাইকে বুঝতে হবে। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে যে মৌলবাদী অপশক্তিকে পরাভুত করে, যে ধর্মান্ধগোষ্ঠীকে পরাভুত করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-সহ সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে রচিত বাংলাদেশে তাদেরকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়া যায় না’, বলেন তিনি।
পাতা-২
‘ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলেছেন-এটি আমার কাছে কোনো ইস্যু নয়’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী তারেক রহমানকে কিভাবে দেশে ফেরত আনা যায়, দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কিভাবে করা যায় আর খালেদা জিয়ার হাঁটুর ব্যথা, পায়ের ব্যথা হচ্ছে উনার কাছে ইস্যু।’
বিএনপি’র উদ্দেশ্যে ড. হাছান বলেন, ‘আপনারাতো জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য সারা দেশে বানিয়েছেন, আপনাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুন, এই অপশক্তির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিন, এই বক্তব্য দিতে আপনাদের এতো লজ্জা কেন? অন্যথায় আপনারা এর পেছনে ইন্ধনদাতা হিসেবে জনগণের কাছে চিহ্নিত হবেন।’
ভাস্কর্যবিরোধীদেরকে চোখ মেলে ইসলামি বিশ্বের দিকে তাকানোর অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবে ভাস্কর্য মিউজিয়াম আছে, রাস্তায় রাস্তায় ঘোড়ার-উটের এমনকি মানুষের মুখাবয়বের ভাস্কর্য আছে। আরব রাষ্ট্রগুলোতে সেখানকার বাদশা-সুলতানদের মুখাবয়বসহ ভাস্কর্য আছে। আরব আমিরাতের মিশনপ্রধান আমার সাথে দেখা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, তাদের দেশে শতশত বছর ধরে কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অংশ হয়ে থাকা ভাস্কর্যগুলো অপরিবর্তনীয়। আর তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ঘোষণা দিয়েছেন, তারা এখানে কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য নির্মাণ করবেন। যারা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তারা সেখানে এরদোগানের ভাস্কর্যগুলো বা যারা আরব আমিরাত থেকে অর্থ নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালান, তারা আরব আমিরাতের ভাস্কর্যগুলো দেখেন না!’
ভাস্কর্যবিরোধীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী, ‘ভাস্কর্য নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। আাপনারাও বিভ্রান্তির হাত থেকে মুক্ত হোন এবং চোখ মেলে সারা পৃথিবীর দিকে তাকান। অন্যথায় দেশের মানুষ যেভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এই বিক্ষোভের আগুন আপনাদের গায়ে লাগবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি বলতে চাই, আমরা এই ধরণের বক্তব্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা কোনোভাবেই বরদাশত করবো না। দেশের সমস্ত সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে আহ্বান জানাই মাঝেমধ্যে এ ধরণের বক্তব্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবসময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা লায়ন চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সাংবাদিক শাবান মাহমুদ, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম, কণ্ঠশিল্পী এস ডি রুবেল, স্বাধীনতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন টয়েল প্রমুখ।