সোমবার ● ১ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » পশ্চিম সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদে বাঘের আতঙ্ক
পশ্চিম সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদে বাঘের আতঙ্ক
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ পশ্চিম সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাঘের ভয়ে গ্রামবাসী সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করছে। বিশেষ করে রাতে তারা বিনা কারণে বাড়ির বাইরে থাকছে না। তাদের ধারণা যেকোনো সময় বাঘ জনপদে ঢুকে মানুষ অথবা পোষা প্রাণীদের ওপর হানা দিতে পারে। ভয়ঙ্কর সুন্দর সুন্দরবন। আর বনে যেমন রয়েছে বাঘের ভয়, তেমনি রয়েছে বাঘ সম্পর্কে জানার রোমাঞ্চ। ভয় আর রোমাঞ্চ ভরা সুন্দরবনের বাঘ সম্পর্কে জানতে আগ্রহের শেষ নেই। তাই বাঘ নিয়ে সবার রয়েছে ভয় ও কৌতুহল।
গত ১৯ জানুয়ারি শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কলবাড়ির বিপরীতে একটি বাঘকে জঙ্গলের একটি খালে ভাটার সময় পার হতে দেখে। এরপর তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন। মূহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। এর পর থেকে সুন্দরবনের জনপদগুলিতে বাঘ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর বনবিভাগ পুরো এলাকায় মাইকিং করে বাঘের আনাগোনার কথা জানিয়ে গ্রামবাসীকে সতর্ক করে। ফলে মানুষের মনে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় মানুষজন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ বাজার, হরিনগর বাজার, কলবাড়ি বাজারসহ আশপাশের সব বাজারঘাটে ভিড় কমে গেছে। ব্যবসায়ীরাও সতর্ক হয়ে গেছেন। এমনকি বনজীবীরাও নৌকায় এবং জঙ্গলে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করছে। সন্ধ্যার পর কোনো কারণে বের হতে হলে গ্রামবাসী হাতে লাঠি ও টর্চলাইট এমনকি হুইসেল নিয়ে কয়েকজন একসঙ্গে চলফেরা করছে। তবে গ্রামবাসী বলছে, কয়েক বছর আগে এ এলাকায় বাঘ দেখা গিয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত কোনো বাঘ তাদের নজরে আসেনি।
এর আগে গত ৯ জানুয়ারী রাতে সুন্দরবন থেকে একটি বাঘ বাগেরহাটের স্মরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। বাঘটি ঐ গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ো বিচরণ করে আবার সুন্দরবনে ফিরে যায়। গ্রামের ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, নদীর চরে বাঘের পায়ের অসংখ্যক ছাপ পড়ে রয়েছে। এর ৩ মাস আগে ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর আরও একটি বাঘ ভোলা নদী পার হয়ে বাটেরহাটের স্মরণখোলা উপজেলার ধামসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামে ঢুকেছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবনের কদমতলি ফরেস্ট স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, আমরা বিভিন্ন টিমের মাধ্যমে মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করেছি। এখনও করে যাচ্ছি। তবে বাঘের খাল পারাপারের যে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে সেটি বেশ আগের। এটি বর্তমান সময়ের কেনো ভিডিও নয়। তিনি আরও বলেন, বাঘ সচরাচর শীত মৌসুমে পানিতে নামে না। আরও কিছুদিন পর প্রজননের সময় এলে শিকার এবং মিষ্টি পানির খোঁজে বাঘ বনভূমি থেকে জনপদে এসে থাকে। এ ব্যাপারে সুন্দরবন সুরক্ষায় নিয়োজিত ওয়াইল্ডি টিম ও ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) সদস্যরা গ্রামের মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঘের বিচারণ ক্ষেত্রের সঙ্কট, খাদ্যাভাব, বাঘের বিচারণ ক্ষেত্রের একাধিক বাঘের সমাগম ঘটলে আধিপত্য নিয়ে বাঘের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। তখন অনেক সময় বাঘ নিজস্ব এলাকার খোঁজে এলাকা ছেড়ে লোকালয়ের দিকে ঢুকে পড়ে। তাছাড়া শীত কালে সুন্দরবন সংলগ্ন খাল ও নদীতে পানি কম থাকায় বাঘ নদী পার হয়ে লোকালয়ে চলে আসে।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, জানুয়ারীতে মুন্সিহঞ্জ ফরেষ্ট ষ্টেশনের পাশে একটি বাঘের আনাগোনা দেখা যায়। বাঘ গ্রামে আসেনি। বাঘ বনে রয়েছে। শ্যামনগর ও বুড়িগোয়ালিনি ফরেষ্ট ষ্টেশনের সদস্যরা বাঘের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। লোকালয়ে বাঘের পায়ের ছাপ পড়েছে কিনা তা দেখার জন্য সদস্যরা পায়ে হেঁটে হেঁটে খোঁজ নিচ্ছে। তাছাড়া সুন্দরবন সুরক্ষায় নিয়োজিত ওয়াইল্ডি টিম ও ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) সদস্যরা গ্রামের মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।