শুক্রবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » দুই দশক পার হলো রাষ্ট্রিয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি
দুই দশক পার হলো রাষ্ট্রিয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি
প্রকাশ ঘোষ বিধান।
১৪ ফেব্রুয়ারী সুন্দরবন দিবস। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সুন্দরবন দিবস পালন করা হয়। ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহনে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারীকে সুন্দরবন দিবস ঘোষনা করা হয়। এরপর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা-জেলা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা, সুন্দরবন বন বিভাগ, পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি পালন করে আসছে। সে হিসাবে এবার পালিত হচ্ছে ২১তম সুন্দরবন দিবস।
সুন্দরবন বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রশস্ত অখন্ড বনভূমি। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভবন সুন্দরবন। এ বনে রয়েছে ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ। সব মিলিয়ে সুন্দরবনে ব্যপক প্রাণী বৈচিত্র্য বিদ্যমান।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসার আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে সুন্দরবন দিবস। শুরু থেকে রাষ্ট্রিয় ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবী উঠেছে। দুই দশক পেরিয়ে গেল দাবি। সময় উপযোগী গুরুত্বপূর্ণ দাবী এখনো রাষ্ট্রিয় ভাবে সুন্দরবন দিবসের স্বীকৃতি পাইনি। আর অপেক্ষা নয়, রাষ্ট্রিয় ভাবে সুন্দরবন দিবস পালন করা হোক। ১৪ ফেব্রুয়ারী খুবই উদ্যম উচ্ছ্বাসের সাথে সারা বিশ্বের মত আমাদের দেশে পালিত হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এদিন আছে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসও। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উৎসাহ উদ্দীপনায় পালন করা হয়। আর সুন্দরবন দিবস পালনে রয়েছে অবহেলা। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবনে যারা ব্যর্থ, তাদের কাছে সুন্দরবন দিবস নিয়ে এতো উদাসীনতা আর এতো অবহেলা।
তিনটি প্রধান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০১ সাল থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারী সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। উদ্দেশ্য তিনটি হলো, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ গুরুত্ব এবং ভূমিকা সম্পর্কে সব মহলে ব্যাপক সচেতনতা ও আগ্রহ তৈরী করা। সুন্দরবন সংরক্ষনে বন বিভাগ ও বেসরকারি উদ্যোগ সমূহকে সহায়তা করা এবং সুন্দরবনের প্রতি নতুন প্রজম্মের ভালোবাসা তৈরি করা এবং তাদের চেতনায় সুন্দরবন ভাবনাকে উজ্জীবিত করা। পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে সুন্দরবন ও তার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সমন্বিত ভাবে ১৮ দফা প্রস্তাবনা ঘোষনা বাস্তবায়নে সরকারি ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ২০০১ সালে আহবান জনোনা হয়।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বিশ্বের সর্ববৃহত ম্যানগ্রোব বনভূমি সুন্দরবন। বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী জেলা ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশপরগনা ও দক্ষিন চব্বিশপরগনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত শ্বাসমূলীয় এই সুন্দরববন। ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ বনের ৬ হাজার ১৭ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশের অংশে। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর, কুমির, ডলপিন, সাপ নানা প্রজাতির পাখিসহ অসংখ্য বন্য প্রাণীর আবাসস্থল এই সুন্দরবন। আর্ন্তজাতিক রামশার কনভেনশন অনুযায়ী ১৯৯২ সালের ২১মে সুন্দরবনকে রামসার স্থান হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে ইউনেক্সো বিশ্ব এতিহ্যের তালিকা সুন্দরবন স্থান পায়। তালিকা নম্বর ৭৯৮। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে। দেশ-বিদেশের অসংখ্যাক পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুন্দরবন ভ্রমনকারীর মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে।
সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা ও অর্থনৈতিক ভাবে সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক দুর্জগে সুন্দরবন দেশ ও দেশের মানুষকে বুক পেতে আগলে রাখে। বিগত কয়েকটি প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবন নিজে বুকে ধারন করে দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই সুন্দরবনকে মায়ের মতন বলা হয়। সুন্দরবনের বানরের চিৎকার-চেঁচামেচি, চিতল হরিণের দল, নানা প্রজাতির পাখি, বন মোরগের ডাক, কুমির, হরিয়াল, ডলপিন, অজগর সাপ, মৌমাছির গুনজন ও বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন- সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক রহস্য ঘেরা সুন্দরবন। তবে শিকারী আর বন খেকোদের আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে।
সুন্দরবন রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশকে রক্ষা করার কোনো উপায় নেই বলে ঐতিহাসিক মন্তব্য করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার প্রধান রক্ষাকবচ হিসাবেও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু বৃক্ষরোপন সপ্তাহ উদ্ভোধন কালে তিনি এসব কথা বলেন।
সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি বিশ্বের একটি বিরল সম্পদ। এই বন আমাদের গর্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সুন্দরবন আমাদের সম্পদ, আমাদের গর্ব। প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ ও ঐতিহ্যের প্রতিক সুন্দরবনকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
লেখকঃ সাংবাদিক