বৃহস্পতিবার ● ৮ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » সারাদেশ » আশাশুনি সদরের মূল বাঁধ আটকানো হলেও অভাব-অনাটনসহ নানা সমস্যা চরমে
আশাশুনি সদরের মূল বাঁধ আটকানো হলেও অভাব-অনাটনসহ নানা সমস্যা চরমে
আহসান হাবিব, আশাশুনি : আশাশুনি সদরে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আর অভাব অনাটন অসহায় পরিবারগুলোর মধ্যে ভেতরে ভেতরে কুরে কুরে খাচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় একটি বছর তাদের বাঁধ ভাঙ্গার পর থেকে কষ্টকর অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ তাদেরকে হতাশার সৃষ্টি করছে। সরজমিনে ঘুরে জানাগেছে, সদর ইউনিয়নের মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের আঁকড়ে ধরে আছে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন পাউবো’র বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে এলাকাকে তছনছ করে দিয়েছে। অসংখ্য মানুষের ভিটে বাড়ি, চাষের জমি ও মৎস্য ঘের নদী গর্ভে বিলীন করে দিয়েছে। হাজার হাজার একর জমি নদীর কাছে নতি স্বীকার করে ছেড়ে দিয়ে ভূমিহীন, সহায় সম্বল হারা কিংবা চাষের জমি হারা হয়ে অনেকে ভবিষ্যৎকে সংকুচিত করতে বাধ্য হয়েছেন। জমি নদীর কবলে যাওয়ার পর জমি নিয়ে এলাকাবাসীকে দ্বন্দ্ব-ফাসাদের মত বিশৃংখলায় জড়াতে বাধ্য করা হয়েছে। এমন পরিনতির মধ্যে থাকা মানুষ যখন নিজেদেরকে গুছিয়ে নিতে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই ২০ মে’২০ ভয়ঙ্কর সাইক্লোন আম্ফানে আশাশুনিকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাসেও ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নির্মান করা সম্ভব হয়নি। রিং বাঁধ নির্মান করে প্রায় ৪০/৪৫টি পরিবার ভাঙ্গনের বাইরে রেখে দিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে ঠেকানো হয়। কিন্তু, গত ৩০ মার্চ আবারও প্লাবনের শিকার হয় গোটা এলাকা। দীর্ঘ ৯ মাসে অনেকে ঘরবাড়ি গুছিয়ে নিয়ে নতুন করে চাষাবাদ, মৎস্য চাষে সর্বস্ব বিনিয়োগ কিংবা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বিধি বাম, তাদের সবকিছু আবারও নদীর জলে ভেসে গেছে। ঘরবাড়ি ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির সাথে সদর ইউনিয়নের ৩৬০ হেক্টর জমির ৩১৫টি মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। ফলে ইউনিয়নের মানুষের গায়ে সাদা কাপড় পরে বেশ ভূষন ঠিক রেখে, গতানুগতিক চাল-চলন দেখা গেলেও ভেতরে ভেতরে ঋণের জালে দেউলিয়া হয়ে অনেকেই পথে বসেছে।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান স.ম সেলিম রেজা মিলন জানান, গত ২৯ মার্চ যখন বাঁেধর অবস্থা শোচনীয়, তখন রাতে নিজস্ব অর্থে রিং বাঁধ রক্ষায় কাজ করান হয়। পরদিন সকালে পুনরায় কাজ করায়েও শেষ রক্ষা হয়নি। দুপুরে রিং বাধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পাউবো কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে ৩১ মার্চ ২৭৬ শ্রমিক, ১ এপ্রিল ৩ শত টাকা মজুরির ঘোষণা দিয়ে ৩৮৭ জন শ্রমিক, রাতে ৫০ জন শ্রমিক এবং পরদিন আরও ১৭৫ শ্রমিক ৩ শত টাকা মজুরির বিনিময়ে কাজ করান হয়। আল্লাহর রহমতে বাঁধ টিকে যায়। এরপর পাউবো’র মূল বাঁধে ঠেকাদার ক্লোজারে কাজ শুরু করে মঙ্গলবার ক্লোজার চাপান সম্পন্ন করেন। বর্তমানে বাঁধের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। বাঁধ রক্ষা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে আমরা চিন্তিত হয়ে পড়েছি। ইতোমধ্যে প্লাবনের শিকার ৩৫০ পরিবারকে ৭ কেজি করে চাউল ও সুপেয় পানি কিছুটা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু আম্ফানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় আঘাত করে পুনরায় বিপর্যস্ত করে ফেলানো মানুষদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। তাদেরকে পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা, আর্থিক সহযোগিতা করার প্রয়োজনীয় অনস্বীকার্য। মাছের ঘেরে ৩ কিস্তিতে মাছ ছাড়া ও বেশ কিছু জমিতে ধান রোপন করা হয়েছিল। যখন মাছ বিক্রয় যোগ্য ও ধান কাটার সময় হয়ে উঠে, ঠিক সেই সময় আম্ফানের ন্যায় এবারও তারা সমুলে ধ্বংস হয়েছে। না আছে আয়ের সুযোগ, না আছে বসবাসের সুষ্ঠু পরিবেশ, না আছে স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা, না আছে ঋণের টাকা পরিশোধের উপায়। তারপর না পারছে চাইতে, না পারছে কাজের সুযোগ পেতে। তারপর আবার ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ বিভিন্ন এনজিও ঋণের কিস্তি না দিতে পারায় পালিয়ে বেড়াতে দেখা গেছে। কিছুদিন এনজিও কর্মীরা চেপে থাকলেও এখন প্রতিনিয়ত তাদের বাড়ী বাড়ী কিস্তি আদায়ে চাপ প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছে বলে বানভাষি মানুষ অভিযোগ করেন। আমি এসব দুরাবস্থার কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছি। সাথে সাথে টেকসই বেড়ী বাঁধ নির্মানের ব্যবস্থা করা, ভেঙ্গে যাওয়া সড়ক নির্মান, গ্রামের মধ্যের ছোট রাস্তার সংস্কার করার দাবীও জানিয়েছি। এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনজিও গুলোকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এ দিকে বাঁধ আপাতাত ঠেকাদার জিও ব্যাগে বালি ঢুকিয়ে আটকালেও আগামী ভারী গোনে গতানুগতিক বিগত বছরের ন্যয় পানি বৃদ্ধি ও চাপে ‘বালি বাঁধ’র ন্যয় আটকানো পুনরায় নদী গর্ভে বিলিন হতে পারে বলে এলাকার সচেতন মহলের আশঙ্খা। এত উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খাঁন বলেন, বাঁধ রক্ষার কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। মানুষের অসুবিধার কথা জেনেছি। বিষয়টি মাথায় নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।