শুক্রবার ● ৪ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জীবন জীবিকা রক্ষায় বাজেট পেশ
৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জীবন জীবিকা রক্ষায় বাজেট পেশ
এস ডব্লিউ নিউজ: করোনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট। টাকার অঙ্কে এই বাজেট চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) মূল বাজেটের চেয়ে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি। এবারের বাজেটে প্রাধিকার পেয়েছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবারের বাজেটটি করা হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থবছরের পুরো সময় জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট এটি। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামের এবারের বাজেটটি প্রস্তুত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে কম সংখ্যক সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে দেশের ৫০তম বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মানতে হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। গতকাল দুপুর ৩টায় বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে দুপুরে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এর অনুমোদন দেয়া হয়। দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম বস্নকের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এতে অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেন। পরে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে খয়েরি ব্রিফকেস হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই ব্রিফকেসেই ছিল আগামী ২০২১-২০২২ সালের প্রস্তাবিত বাজেট। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা রংয়ের পাঞ্জাবি, ওপরে কালো মুজিব কোট। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সংসদে প্রবেশ করেন তিনি। এর আগে বৈঠকে যোগদান ও সংসদে বাজেট উপস্থাপন করতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ ভবন এলাকায় পৌঁছান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বেলা ১২টায় বৈঠক শুরুর আগেই প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনে প্রবেশ করেন। এর পর শুরু হয় বিশেষ বৈঠক। সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে সীমিতসংখ্যক মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এর আগে গত বুধবার বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন বসে। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় নতুন অর্থবছরের (২০২১-২০২২) প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কোভিড পরিস্থিতির কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ অধিবেশন চালানো হয়েছে। গত বছরের মতো এবারের অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হবে। নতুন বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। বাজেট উপস্থাপনের শুরুতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কোভিড-১৯-এর দীর্ঘতর প্রভাব এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সৃষ্ট ক্ষতি পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এবং বিশেষভাবে স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভূত প্রয়োজন মেটানো এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। কোভিড-১৯-এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যবস্থা প্রস্তাবিত বাজেটে রাখা হয়েছে।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ : বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মানবসম্পদ (শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) খাতে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ, সার্বিক কৃষি খাতে (কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, পানিসম্পদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) ২১ দশমিক ৭ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১২ দশমিক ১ শতাংশ, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে (সড়ক, রেল, সেতু এবং যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট ঘাটতি : ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এই হার গত বাজেটে ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস হতে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সংগৃহীত হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক-বহির্ভূত খাত হতে আসবে ৩৭ হাজার এক কোটি টাকা।
ব্যয় কাঠামো : বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পাদিত কাজের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী কাজগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো- সামাজিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো ও সাধারণ সেবা খাত। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ; এর মধ্যে মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত) বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। ভৌত অবকাঠামো খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ; যার মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৭৪ হাজার ১০২ কোটি; যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৬৯ হাজার ৪৭৪ কোটি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। সাধারণ সেবা খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ; সুদ পরিশোধ বাবদ প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ; নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ১০৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ।
মধ্যমেয়াদি নীতি-কৌশল : বিগত এক দশকে বাংলাদেশের ক্রমাগত উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন কোভিড-১৯-এর প্রভাবে সাময়িক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে করোনাভাইরাসের কারণে তা হরাস পেয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কোভিড-১৯ এর প্রভাব হতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হবে ধরে নিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। কিন্তু এ মহামারীর প্রভাব দীর্ঘতর হওয়া এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং পুনরায় লকডাউন ঘোষণার কারণে অর্থনেতিক কর্মকা-ে শ্লথ অবস্থা বিরাজমান এবং রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরে পায়নি। তবে প্রবাসী আয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়া এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকার ঘোষিত বৃহৎ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ পরবর্তী উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। মধ্যমেয়াদে প্রবৃদ্ধির প্রধান উৎস হলো- শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা। অন্যদিকে সরবরাহের দিক থেকে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে।
আয়ের ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে : প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর ২০১০ সাল থেকে কর আরোপ করা হয়েছিল। তবে মামলার কারণে তা আদায় হয়নি। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় এখন নতুন করে কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রযোজ্য সাধারণ করহার হরাস করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজ থেকে উদ্ভূত আয়ের ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করা হয়েছিল। মহান এ সংসদে আমি এ করহার অর্থ আইনের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।
ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ?২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। নারী করদাতা, সিনিয়র করদাতা, প্রতিবন্ধী করদাতা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত এই আয়ের সীমা আরো বেশি। তিনি বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের করহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতার জন্য বিদ্যমান করহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করছি। ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতার জন্য বিদ্যমান এই করহার তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাতের জন্যও প্রযোজ্য ছিল। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের সামাজিক আত্তীকরণের লক্ষ্যে বিশেষ বিধান চালুর পাশাপাশি তাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।
বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা বর্তমানে ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের করহার বাড়ছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল মানি ট্রান্সফার সেবা দানকারী এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অতিরিক্ত সাড়ে ৭ শতাংশ কর ভার চাপানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও প্রচলিত অন্য কোনো খাতের এবার কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি। উল্টো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত সিংহভাগ কোম্পানির করহার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ঘোষিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন, আগামী অর্থবছরে পাবলিক ট্রেডেড নয়, অর্থাৎ শেয়ারবাজারে কেনাবেচা হয় না এমন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের করহার হবে ৪০ শতাংশ। বর্তমানে এসব কোম্পানির করহার অন্য সাধারণ খাতের অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মতো সাড়ে ৩২ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী তার এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে পাবলিক ট্রেডেড বা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমএফএস কোম্পানির ক্ষেত্রে অবশ্য করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছেন। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। বর্তমানে দেশের প্রধান শীর্ষ মোবাইল মানি ট্রান্সফার সেবা প্রদানকারী হলো ব্র্যাংক ব্যাংকের সহযোগী কোম্পানি বিকাশ। এর পরের অবস্থানে আছে নগদ। এর বাইরে আরো ১৪ কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে, যার বেশিরভাগ ব্যাংকের মালিকানাধীন।
‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যে কর অব্যাহতি : ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় আবারো অঙ্গীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী। এজন্য ১০ বছর কর ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশে মেগা শিল্পের বিকাশ এবং আমদানি বিকল্প শিল্পোৎপাদনকে ত্বরান্বিত করার স্বার্থে মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে অটোমোবাইল-থ্রি হুইলার এবং ফোর হুইলার উৎপাদনকারী কোম্পানিকে শর্তসাপেক্ষে ১০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি এবং আরো কিছু শর্ত সাপেক্ষে আরো ১০ বছর কর অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করছি। এছাড়া কতিপয় হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সেস পণ্য এবং হালকা প্রকৌশলশিল্পের পণ্যের উৎপাদনকারী কোম্পানিকে শর্তসাপেক্ষে ১০ বছর মেয়াদি কর অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করছি। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশীয় উৎপাদকরা উৎসাহিত হবেন।
তৈরি পোশাক খাতে রফতানি প্রণোদনা ১ শতাংশই : বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্প খাতে রফতানি প্রণোদনা ১ শতাংশ অব্যাহত থাকছে। বিগত অর্থবছরেরও এ খাতে এই ১ শতাংশ প্রণোদনা ছিল। করোনার কারণে তৈরি হওয়া বিরূপ পরিস্থিতিতে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে নতুন করে প্রণোদনার ঋণের আবেদনে সাড়া দেয়নি সরকার। বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বিদ্যমান বিভিন্ন রফতানি প্রণোদনার সঙ্গে ১ শতাংশ হারে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেয়া শুরু হয়, ফলে উক্ত খাত করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর প্রভাব সফলভাবে মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ ধারা অব্যাহত রাখার ফলে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়ায় এবং বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আশানুরূপ রফতানি অর্জন করে। এ কারণে আগামী অর্থবছরেও এই অতিরিক্ত রফতানি প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।
করোনা মোকাবিলায় এবারো ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল : আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকার যে বাড়তি ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে, তার সিংহভাগই হবে করোনা মহামারীর প্রভাব মোকাবিলায়। এর অংশ হিসেবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত সংকট মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরেরও ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিপুল বরাদ্দ রেখেছিলাম। এ ছাড়া যে কোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রেখেছিলাম। তবে প্রথম প্রাদুর্ভাবের পর বছর ঘুরে এলেও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ভয়াবহ প্রকোপ এখনো বিদ্যমান রয়েছে। কাজেই আমি বিগত বাজেটের ন্যায় এবারো অঙ্গীকার করছি এ মহামারী মোকাবিলায় যা করণীয় তার সবকিছুই সরকার করে যাবে। সে কারণে আগামী অর্থবছরেও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য পুনরায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছিল। জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটটিও প্রণয়ন করা হচ্ছে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান একটি ক্রান্তিকালে। যখন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাইরাসের দ্বিতীয় এবং কোথাও কোথাও চলছে তৃতীয় ঢেউ। বৈশ্বিক এ প্রাদুর্ভাবের ভরকেন্দ্র সামপ্রতিক সময়ে এশিয়া মহাদেশ, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে সরে আসছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তিনি বলেন, তবে আশার কথা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক উভয়ই বাংলাদেশের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। আইএমএফ-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ২০২১ সালে ৬ শতাংশ ও ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এর বিপরীতে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হলো ২০২১ সালে ৫ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ ও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতে, বাংলাদেশ ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে। এ সময়ে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হবে মর্মে আশা করছি।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে : ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধা খাতে ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বাজেটে ১০ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা : করোনা মহামারীর মধ্যেও ২০২১ সালের মধ্যে আরো ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে এরমধ্যেই আইসিটি খাতে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে আরো ১০ লাখ কর্মসংস্থান হবে। দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের অধিক তরুণ, যে হারে উন্নত বিশ্বে ২০-২৫ শতাংশের বেশি নয়। এছাড়া প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ আমাদের শ্রম বাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে, চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দেশে-বিদেশে দক্ষ জনশক্তির জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। পাশাপাশি ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা’, ‘ভিশন ২০৪১’ এবং ‘পেল্ট প্ল্যান ২১০০’ এর বাস্তবায়ন কার্যক্রম দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানে পারদর্শী মানুষের বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সরকারের সঠিক নীতি ও ফলদায়ী কর্ম পরিকল্পনার ফলে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে এররূপ আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থানের সুবিধা ভোগ করছে।
রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত : কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাস থেকে আয় এসেছে ২২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রবৃদ্ধির ৪০ দশমিক ১ শতাংশ বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রবাস আয় বাড়াতে বাজেটে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ঘোষিত প্রবাস আয়ের উপর ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখা এবং অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজীকরণ করার ফলে প্রবাস আয়ের ক্ষেত্রে এ ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। কোভিড মহামারীকালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাজনিত কারণে রফতানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা যখন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তখন প্রবাস আয়ের এ অভাবনীয় সাফল্য আমাদের স্বস্তির মধ্যে রেখেছ। সামগ্রিক বাস্তবতায় এবং বৈধ প্রবাস আয় পাঠানো বা রেমিট্যান্সে উৎসাহিত করতে আগামী অর্থবছরেও এখানে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাস আয় প্রবাহ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ‘প্যাকেজ কর্মসূচি’ চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী হচ্ছে ২০ হাজার টাকা : বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। এতে বরাদ্দ বাড়বে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা।
গ্রামে বাড়ি বানাতে কর দিতে হবে : বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে শহরে বা গ্রামে যে কোনো জায়গায় বাড়ি করতে হলে টিআইএন নিতে হবে। এতে বাড়ির মালিক করের আওতায় আসবেন। এছাড়া যে কোনো সমবায় সমিতির নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, করজাল সমপ্রসারণে বাড়ির নকশা অনুমোদন ও সমবায় সমিতির নিবন্ধনে টিআইএন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রস্তাব করছি। এছাড়া বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের নিয়ে কোনো সমবায় সমিতি করলে সেটার নিবন্ধন নিতে হলেও টিআইএন নিতে হবে।
এদিকে বাজেটকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারছেন। দেশ-বিদেশ থেকে ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ প্রেরণ করা যাবে। প্রাপ্ত সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময় এবং পরে তা কার্যকর করা হবে।