শনিবার ● ৫ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » কয়রায় বিষমুক্ত ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড বেগুন চাষে গোপালের সাফল্য
কয়রায় বিষমুক্ত ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড বেগুন চাষে গোপালের সাফল্য
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা:
কয়রায় ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড বেগুন চাষ করে ভাগ্যর পরির্বতন ঘটিয়েছে কৃষক গোপাল সরদার। আর তার ভাল ফলন দেখে স্থানীয় কৃষকরা ঐ বেগুন চাষে ঝুঁকে পড়ছে। এতে করে কয়রার মানুষের সব্জী হিসাবে বেগুন পাচ্ছে হাতের নাগালে। স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে অধিক ফলন ও জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহার করায় ভিএনআর-২১২ বেগুন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কয়রার কৃষকরা। আবার এই জাতের বেগুনের উৎপাদন যেমন খরচ অনেক কম, তেমনি বাজারে এর দামও ভালো। কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক তত্বাবধানে ও তাদের নির্দেশনায় ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড জাতের এই বেগুন চাষ করে অনেকেই এরই মধ্যে লাভবান হয়েছেন। এ জন্য ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বেগুন চাষের সময় ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমনে ৭০-৮০ ভাগ বেগুন মাঠেই নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য প্রতি বছর ১৭-২০ লাখ মেট্রিক টন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। ফলে বেগুন চাষের খরচ বেড়ে যায় এবং কৃষকরা এ থেকে লাভবান হতে পারেন না। তাছাড়া প্রচুর পরিমানে কীটনাশকের ব্যবহার মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর। আর এ থেকে সহনীয় হিসেবেই জৈব বালইনাশক পদ্ধতিতে ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড জাতের বেগুনে ডগা ও পোকা আক্রমণ করতে পারে না। ফলে বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন সম্ভব হয়। কয়রা উপজেলার ৪নং কয়রা গ্রামের বেগুন চাষী গোপাল সরদার বলেন, ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড বেগুন পরিবেশ বান্ধব। এতে কোনও ধরনের বালাইনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন পড়ে না। এটি জৈব বালাইনাশক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। উপজেলা উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অনুতাপ সরকারের অনুরোধে ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড বেগুনের চাষ শুরু করি। ৫/৬ মাস আগে বীজতলা ফেলে চাষ শুরু করি রোপনের দেড় মাস পর থেকে বেগুন তোলা শুরু হয়। এখন প্রতি সপ্তাহে ২ বার বেগুন তুলতে পারছি, প্রতিবার ১৫০ থেকে ১৮০ কেজি বেগুন তুলতে পেরে তা বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরজ চালিয়ে যাচ্ছি। মাত্র আড়াই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করে বর্তমানে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পেরেছি। এখনও বেগুন তোলা অব্যাহত রয়েছে। ৩নং কয়রার কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন গোপালের ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড বেগুন চাষ দেখে আমিও শুরু করেছি। তবে ভাল ফল পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন তিনি। গোপালের স্ত্রী টুম্পা রানী সরদার বলেন, আগে বেগুন চাষ করলে কীটনাশক কিনতে গিয়েই অনেক টাকা খরচ হয়ে যেত। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে নিজেদের জমিতে কীটনাশক ছাড়াই জৈব বালাইনাশক পদ্ধিতে ভিএনআর-২১২ হাইব্রিড বেগুন চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আনতে পেরেছি। আগামীতে অধিকহারে এই বেগুন চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি অফিসার অনুতাপ সরকার বলেন, প্রথম অবস্থায় কৃষকদের বেগুন চাষে আগ্রহী করতে বেগ পেতে হয়েছে। গোপালের বেগুন চাষে কৃষি অফিস থেকে সার্বিক তদারকির পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তার বেগুন চাষে উৎপাদনে সাফল্য দেখে উপজেলার অন্য কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। উপজেলা সহকারি কৃষি সম্প্রসারন অফিসার এস এম নজরুল ইসলাম বলেন,কয়রায় বিভিন্ন ধরনের সব্জী চাষে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছে। তাদেরকে উৎসাহ যোগাতে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।