রবিবার ● ২৫ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » সর্বশেষ » দুই মাস পানিতে ভাসছে কয়রার গাঁতীরঘেরী ও দশহালিয়া’র শতাধিক পরিবার
দুই মাস পানিতে ভাসছে কয়রার গাঁতীরঘেরী ও দশহালিয়া’র শতাধিক পরিবার
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা:
খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাঁতীরঘেরি ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের ১৩০টি পরিবার। আজ দুই মাস ধরে জোয়ারভাটায় ভাসছে তারা। ঐ দু’টি গ্রাম-সংলগ্ন এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত না হওয়ায় এমন দুরাবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন তারা। এ অবস্থায় অনেকেই উঁচু রাস্তার ওপর ঝুপড়ি ঘর তুলে বাস করছেন। আবার বেশ কিছু পরিবার পানির মধ্যে কাঠের পাটাতন তুলে বসবাস করছেন। গ্রামবাসী জানান, ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় বসতঘর ও চিংড়িঘের। পরে অন্য সব স্থানে বাঁধ মেরামত করা হলেও ঐ দুই স্থানে বাঁধ মেরামত সম্ভব হয়নি। স্বেচ্ছাশ্রমে কয়েক দফায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। এদিকে পাউবো ঐ বাঁধ মেরামতে দায়িত্ব নিচ্ছে না। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে পানিবন্দি পরিবারগুলোর।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পাউবোর বাঁধের ওপর অস্থায়ী ঝুপড়ি ঘর বেঁধে পরিবার নিয়ে বাস করছেন গাঁতিরঘেরী গ্রামের বাসিন্দারা। এসব ঝুপড়ি ঘরে পরিবারের সব সদস্য মিলে কষ্টে রাত কাটাতে হয়। পুরুষ সদস্যরা দিনের বেলায় কাজে চলে গেলে একটু স্বস্তি পান অন্যরা। সেখানে খাবার পানির ব্যবস্থা নেই, স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।
গাঁতিরঘেরী গ্রামের অলোকা রানী বলেন, ‘ইয়াসের রাতে বাঁধ ভাঙার পরেত্বে ইকেনেই আছি। রাতে বর্ষা আসলি পলিথিন মুড়ি দে বসি থাকতি হয়। দিনের বেলাও তাই। গত দু’মাস ধইরে যে কী কষ্ট করতিছি, তা বইলে বোঝাতি পারব না!’
তার পাশের ঘরের বাসিন্দা মজিদা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, ‘গত দু’মাস ধুরে ভাসি বেড়াতিছ, কেউ খবর নিতিও আসে না। আমরা ইকেনে থাকপো না চলি যাব তাও কেউ বলতেছ না। শুনতি পাই সব জাগার বান বানধা হুুুয়ে গেছ। খালি আমাগের বেলায় যত অজুহাত। ছাওয়াল-মাইয়ে নিয়ে যে কি কষ্টে আছি তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।’
একই অবস্থা দশহালিয়া গ্রামের। ওই গ্রামের ভেঙে যাওয়া দুটি স্থানের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বাঁধটি স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা হয়েছে। গ্রামের মাঝ বরাবর পাকা রাস্তার দক্ষিণ পাশের বাঁধটি মেরামত করা হয়নি। ফলে রাস্তার দক্ষিণ পাশে ৫০টি পরিবার দুই মাস ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
ঐ গ্রামের বাসিন্দা মতি মোড়ল বলেন, ‘বড় ভাঙন বানতি গিয়ে এমপি সাহেবের সাথে মানুষ ক্ষোভে খারাপ আচরণ করার পরেত্বে আর কেউ আসেনি। আমাগে চেয়ারম্যানেরও বান বান্ বান্দারও গা নি। সেই সমাত্বে আমরা একেনে কয়েক ঘর মানুষ বাস করি। আমাগের পক্ষেও এত বড় ভাঙন বান্দা সম্ভব হয়নি। সেই অবধি জোয়ারভাটার মধ্যি আছি। কেউ খবর রাখে না।’
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন লাভলু বলেন, ঐ বাঁধটি মেরামতের ব্যাপারে পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাবে বলে জানান। এদিকে ঠিকাদার আজ পর্যন্ত কাজ করেনি। ফলে কয়েকশ বিঘা জমির চিংড়িঘের ও গ্রামের একাংশ নদীর পানিতে তলিয়ে আছে।
একই অভিযোগ করেন উত্তর বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম। তিনি পাউবো কর্মকর্তাদের দোষারোপ করে বলেন, তারা অপেক্ষাকৃত ভালো জায়গায় জরুরী ভিত্তিতে এলাকার ভাঙন মেরামতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বারবার ঠিকাদার নিয়োগের অজুহাতে কালক্ষেপণ করছেন তারা। ফলে ঐ গ্রামের ৮০টির মতো পরিবার চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাঁতিরঘেরী ক্লোজার মেরামতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কাজ হওয়ার কথা। আর দশহালিয়ার একাংশের বাঁধ মেরামতে যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তিনি শুস্ক মৌসুমে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।