শনিবার ● ৩১ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » ৩দিনের টানা বৃষ্টিতি সব্জী চাষীদের মাথায় হাত
৩দিনের টানা বৃষ্টিতি সব্জী চাষীদের মাথায় হাত
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা,
গত ৩ দিন ধরেই শ্রাবণের আকাশে নেমেছে একটানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি। কখনো কখনো বাড়ছে বৃষ্টির বেগ, সাথে দমকা হওয়া। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে নেই রোদের দেখা। বিশেষ করে নিচু ক্ষেতে পানি জমে ক্ষতির কবলে পড়েছে সব্জী চাষী। আর এতেই কপাল পুড়েছে গ্রীস্মকালীন টমেটো, ঢেড়শ, হলুদ, বেগুন, ওল, কচু, মরিচ, পটল, করলা, লাউ, সিম, বরবটি, ধুন্দুলসহ এই অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন সব্জী চাষী। ইয়াসের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই টানা বৃষ্টিতে কৃষকের সব্জী ফসল, মৎস্য ঘের তলিয়ে ও চলতি আমন মৌসুমের বীজতলা পানিতে ডুবে গিয়ে কয়রার বর্ষা মৌসুমে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বিধায় বারবার সৃৃষ্ট প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেড়শ, হলুদ, বেগুন, ওল, কচু, মরিচ, করলা, লাউ, বরবটি, সিম, ধুন্দুলসহ বিভিন্ন প্রকার সব্জী চাষ হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন এসব সব্জী ক্ষেতে পানি জমে আছে। অন্যদিকে নদীতে বাঁধ, নেট, পাটা দেওয়া থাকায় পানি নিষ্কাশন ঠিকমত না হওয়ায় ঘের, আমন ধানের বীজতলা সহ সব্জী ক্ষেত তলিয়ে গেছে। উপজেলার ৪ নং কয়রা গ্রামের সব্জী চাষী গোপাল সরদার বলেন, কয়েকদিন আগেও তরতরিয়ে বেড়ে উঠেছিল সব্জীর চারাগাছ। কিন্তু চলমান একটানা বৃষ্টিতে একেবারেই নেতিয়ে পড়েছে ক্ষেত। এবার লাভের মুখ দেখার সময় বৃষ্টির পানিতে সব শেষ করে দিল। এখন পাম্প লাগিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গোপাল আরো বলেন, এবার ১ বিঘা জমিতে টমেটো, ১ বিঘা জমিতে ঢেড়শ, ১০ কাটায় বেগুন ও মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন দিন থেকে টানা বৃষ্টিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো ও ঢেড়শ ক্ষেত সহ বিভিন্ন সব্জী ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় কাদা কাদা হয়ে গেছে। সব্জী তুললেই ক্ষেতের আরো ক্ষতি হবে। আবার ঢেড়শ না তুললে পেকে যাবে।
এছাড়া সূর্য না উঠাই অথ্যাৎ রোদ না থাকায় এবং পানি কম যাওয়ায় অনেক গাছ হলুদ হতে শুরু করেছে এবং কিছু মরিচ গাছ মরে গেছে। ২ নং কয়রা গ্রামের রবীন্দ্র নাথ ঢালী বলেন, তিনি ১ বিঘা হলুদ ও ১০ কাঠায় বেগুন ও ধুন্দুল চাষ করেছেন। কিন্তু টানা বৃষ্টি পাতের ফলে ক্ষেতের অধিকাংশ গাছ মরে গেছে। সে সব জমিতে পানি জমে আছে। টানা বৃষ্টিতে সব্জী ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির এই বিরুপ আচরণে নিয়ন্ত্রণ নেই তাদের। কয়েকদিন আগেও তরতরিয়ে বেড়ে উঠেছিল সব্জীর চারাগাছ। কিন্তু চলমান বৃষ্টিতে একেবারেই নেতিয়ে পড়েছে ক্ষেত। ক্ষেত স্যাতস্যাতে হওয়ায় গোড়া পচে মরেও যাচ্ছে চারাগাছ । বাড়তি লাভের আশায় ধার-দেনা করে সব্জী চাষে নেমে ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খুব বিপদে পড়ে গেলাম কিভাবে ধার-দেনা শোধ করবো চিন্তা করে পচ্ছিনা।
৬নং কয়রা গ্রামের সব্জী চাষী চন্দনা রাণী বলেন, ৫কাঠা যায়গায় সিম ও বরবটি চাষ করেছিলাম কিন্তু ৩দিনের টানা বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গেল সংসার নির্বাহের মোটা অংশ আসে সব্জী থেকে এখনতো সংসার চালানোই কষ্ট হয়ে যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেন, এই মহুর্ত্বে সমুদ্রে বিরাজ করছে নিম্নচাপ। এরই প্রভাবে খুলনা সহ দেশ জুড়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আরো কয়েকদিন নাগাত নিম্নচাপ থাকতে পারে। নিম্নচাপ কেটে গেলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। সরেজমিন গবেষণা বিভাগ বৈজ্ঞানিক সহকারি জাহিদ হাসান জানান, কৃষকের মাঠে গিয়ে পানি অপসারন করার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পানি নিস্কাশন করতে পারলে ৫০ ভাগ সব্জী গাছ বাচানো সম্ভব।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়রায় এবার ২৫ হেক্টর জমিতে সব্জী চাষ হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ হারুনর রশিদ বলেন, ক্লাইমেট চেঞ্জ এর প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলছে একটানা বৃষ্টি। এর ফলে ধানের বীজতলা সহ নষ্ট হয়েছে সব্জীর ক্ষেত। এমনিতে এ সময় সব্জী কম থাকে তার উপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব। ফনি আম্পান, ইয়াস, অনাবৃষ্টি. অতিবৃষ্টি এ যেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী।