বুধবার ● ১ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » সৌন্দর্য হারাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদকুঁড়ের মসজিদ
সৌন্দর্য হারাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদকুঁড়ের মসজিদ
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা, খুলনাঃ
অযত্ন ও অবহেলায় সৌন্দর্য হারাতে বসেছে খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদিগকে ইউনিয়নের মসজিদকুঁড়ের ঐতিহাসিক প্রাচীন মসজিদকুঁড় মসজিদটির।
সাত ফুট চওড়া চুন-সুরকির গাঁথুনির নান্দনিক ইটের দেয়াল। দেড় হাজার বর্গফুট আয়তনের মসজিদের ভেতরে মাত্র চারটি পাথরের খুঁটির ওপর ৯টি সুদৃশ্য গম্বুজ। রয়েছে চার কোণে ৪টি গোলাকার টারেট। বাইরের দেয়াল পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা অলংকৃত। তবে চমৎকার এসব স্থাপত্যশৈলী লবণাক্ততায় গ্রাস করছে ধীরে ধীরে। খসে পড়ছে সুদৃশ্য চিত্রফলক। দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দক্ষিণ বাংলার এ প্রত্নসম্পদ মসজিদকুঁড় মসজিদ সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।
খুলনা শহর থেকে প্রায় ৮৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কয়রা উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের সবুজে ঘেরা মসজিদকুঁড় গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরে নয়ানাভিরাম এ মসজিদটি অবস্থিত। প্রচলিত আছে, নির্মাণকালের প্রায় তিনশ বছর পর জলদস্যুদের অত্যাচারে এ অঞ্চল জনমানবশূন্য হলে সেখানে ঘন জঙ্গলে পরিণত হয়। এতে মসজিদটিও ঝোপঝাড় ও মাটির নিচে অর্ধেক ঢাকা পড়ে যায়। ১৯৪৭ সালে মসজিদটির সন্ধান মেলে। ঘন জঙ্গল কেটে ও মাটি খুঁড়ে এ মসজিদ আবিস্কার হওয়ায় নাম দেওয়া হয় মসজিদকুঁড় মসজিদ। সেই থেকে মসজিদের নামেই গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে মসজিদকুঁড় নামে।
ধারণা করা হয়, ১৪৫০ সালের দিকে হযরত খানজাহান আলীর (রহ.) বিশ্বস্ত সহচর বুড়া খাঁ ও তার ছেলে ফতেহ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ নদ ও অন্য তিন পাশে পরিখা খনন করা ছিল। যার দুই পাশে বর্তমানে ভরাট করে বসতি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে মূল চত্বরের জমিও দখল হয়ে যাওয়ায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে মসজিদটি। এক সময় টেরাকোটা দিয়ে সজ্জিত ছিল এটি। এর অনেকটাই এখন খসে পড়েছে, নয়তো খোয়া গেছে। এছাড়া নদীভাঙনের ফলে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানটির অস্তিত্ব নেই এখন। স্থানীয়রা জানান, কবরস্থানটিতে মসজিদ নির্মাণকারীদের বংশধরের কবর ছিল।
গ্রামের বাসিন্দা জুলফিকার আলী বলেন, মসজিদকুঁড় মসজিদটি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় থাকায় এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাদের। বর্তমানে মসজিদটি অবহেলা ও অযত্নে সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।
দর্শনার্থী আশরাফুল আলম বলেন, মসজিদটির দেয়ালের অনেক শিল্পকর্ম খসে পড়ছে। লবণাক্ততায় এর ইটও ক্ষয়ে যাচ্ছে। এতে মসজিদটি ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
মসজিদের বর্তমান ইমাম মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, শূন্য দশমিক ৪৫ একর জমির ওপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত। এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের। তবে তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী এখানে নেই।
খুলনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, খুলনা বিভাগের সব পুরাকীর্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপাতত জনবল সংকটে মসজিদকুঁড়ের মসজিদটি দেখভালের জন্য সেখানকার খাদেম ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।