শিরোনাম:
পাইকগাছা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » পরিবেশ » পাখি শিকারে অভিনব পদ্ধতি;পাখির নকল ডাকের ফাঁদ
প্রথম পাতা » পরিবেশ » পাখি শিকারে অভিনব পদ্ধতি;পাখির নকল ডাকের ফাঁদ
৫২৬ বার পঠিত
রবিবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পাখি শিকারে অভিনব পদ্ধতি;পাখির নকল ডাকের ফাঁদ

 

 

প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ পাইকগাছায় শীত মৌসুমে পাখি শিকারীরা অতিথি পাখিসহ দেশি পাখি শিকারের উৎসবে মেতেছে। এলাকার বিভিন্ন আমন ক্ষেত, খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের থেকে শিকারীরা এসব অতিথি পাখি শিকার করছে। ইতোমধ্যে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিকারীদের বিরুদ্ধে দু’একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও যথাযথ তদারকি না থাকায় শিকারীরা তৎপর রয়েছে পাখি শিকারে।

উপজেলার বয়রা, কচুবুনিয়া, বাসাখালী, বাইসারাবাদ, তেঁতুলতলা, লতা, হানিমুনকিয়া, বাহিরবুনিয়া, দেলুটি, সোলাদানা, চকবগুড়া, খড়িয়া, অকাইবাসী, ঠাকুনবাড়ী, আমিরপুর, বাইনবাড়ীয়া, কুমখালী ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান ক্ষেত, খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের রয়েছে। এ সব খাল বিলে শীত মৌসুমের শুরুতে কমবেশি অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। সকাল হলেই পাখিরা এসব স্থানে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে। এ সময় ঘেরে এলাকার লোকজন সহ সাধারণ শিকারীরা পূর্ব থেকেই ওই সব স্থানে বিভিন্ন মাছ ও ফড়িং জাতীয় প্রাণীতে বিষ মিশিয়ে রাখে। শিকারীরা পাখি শিকারে অভিনব পদ্ধতি বের করেছে। এসব শিকারীরা সাধারণ মানুষের চোখ ফাকি দিতে রাত ৮টার পরে ধান ক্ষেত বা মৎস্য ঘেরে পাখির ডাকের ফাঁদ পেতে রেখে আসে এবং রাত ৪টার দিকে এ ফাঁদ তুলে আনে। ইন্টারনেট থেকে পাখির ডাক রেকর্ড করে সেই পাখির স্বর ধান ক্ষেতে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে বাজিয়ে পাখি শিকারে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে। সাউন্ড বক্সে পাখির ডাক শুনে অতিথি ও স্থানীয় পাখিরা ফাঁদে গিয়ে ধরা পড়ছে। তাছাড়া দুই/তিন একর জুড়ে বাঁশ পুতে কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে। এভাবেই শিকারীরা প্রতিদিন ফাঁদ ও বিষ টোপ দিয়ে পাখি শিকার অব্যাহত রেখেছে।

পাখি শিকার যা দন্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দন্ডের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত। একই অপরাধ ফের করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে।

---এছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি অতিথি পাখির মাংস ও দেহের অংশ সংগ্রহ করে দখলে রাখে কিংবা বেচা-কেনা করে। তবে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে পরিযয়ী পাখিরা তুলনামূলক যে দেশে শীত কম সে দেশে চলে যায়। তাছাড়া তীব্র শীতে খাবারেরও অভাব দেখা যায়। অধিকাংশ সময় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। সেই সাথে তুষারপাত। সব মিলিয়ে পাখিদের থাকা ও খাবার সংগ্রহ করা তুলনামূলক অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এসব পাখি আসে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও হিমালয়ের আশপাশের কিছু এলাকা থেকে।

বাড়িতে অতিথি আসলে যে কেউই খুশিতে থাকে। অনটন থাকলেও বাঙালি সর্বোচ্চ চেষ্টায় থাকে অতিথি আপ্যায়নে। তবে অতিথি পাখিদের সাথে ঘটে তার উল্টোটা। বন্দুকের গুলি, বিভিন্ন রকম ফাঁদ, বিষটোপ দিয়ে আমরা আপ্যায়ন করি অতিথিদের। আমরা অতিথি পাখি বললেও তারা মূলত আসে জীবন বাঁচাতে। অপর দিকে আমরা তাদের বাঁচতে না দিয়ে শিকারে মত্ত হই। প্রাণ বাঁচাতে এসে কিছু অসাধু ব্যক্তির হাতে প্রাণ হারাচ্ছে।  

সামান্য মুনাফার লোভে কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে পাখি নিধনে মত্ত হয়ে ওঠে। বাজারে পাখির প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। কোনোভাবে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়না। ২’শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত এসব পাখি বিক্রি হয়ে যায়।এক ধরনের অসাধু ব্যক্তি মুনাফার আশায় আইনকে উপেক্ষা করে এসব কাজ করে চলেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য এসব আইন থাকলেও কার্যকর খুব কম দেখা যায়।

এ ব্যাপারে পাইকগাছা থানার ওসি মোঃ জিয়াউর রহমান জানান, থানা পুলিশ পাখি শিকার বন্ধে সবসময় তৎপর রয়েছে এবং পাখি শিকার করলে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাখি শিকার বন্ধে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য সচেতন এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান থানা পুলিশের এ কর্মকর্তা।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসীম। পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভা বর্ধনই করে না, ভারসাম্যও রক্ষা করে। পোকামাকড় খেয়ে এরা কৃষকের উপকার করে। তাই অতিথি পাখি শিকার রোধে প্রচলিত আইন জোরদার করা জরুরি। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশানকেও তৎপর থাকতে হবে।  

 





আর্কাইভ