শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
শুক্রবার ● ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » গ্রন্থাগারের গুরুত্ব এবং প্রাসঙ্গিকতা
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » গ্রন্থাগারের গুরুত্ব এবং প্রাসঙ্গিকতা
১১৯১ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গ্রন্থাগারের গুরুত্ব এবং প্রাসঙ্গিকতা

প্রকাশ ঘোষ বিধান=---

অন্তহীন জ্ঞানের উৎস হলো বই। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের সব জ্ঞান জমা হয়ে রয়েছে বইয়ের ভেতরে। আর সেই বইয়ের আবাসস্থল হলো পাঠাগার বা গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগার বা প্রকৃত অর্থে “পাঠাগার” হলো বই, পুস্তিকা ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রির একটি সংগ্রহশালা, যেখানে পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকে এবং পাঠক সেখানে পাঠ, গবেষণা কিংবা তথ্যানুসন্ধান করতে পারেন। বাংলা গ্রন্থাগার শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে গ্রন্থ + আগার পাওয়া যায়। যার অর্থাৎ গ্রন্থাগার হলো গ্রন্থসজ্জিত পাঠ করার আগার বা স্থান।

গ্রন্থাগার হলো সভ্যতার দর্পণ। মানব জাতির শিক্ষা, রুচিবোধ ও সংস্কৃতির কালানুক্রমিক পরিবর্তনের সাথে গ্রন্থাগারের নিবিড় সম্পৃক্ততা রয়েছে। গ্রন্থাগার হচ্ছে অতীত ও বর্তমান শিক্ষা সংস্কৃতির সেতুবন্ধ। শিক্ষার তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ করতে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই।

জাতীয় গ্রন্থাগারে দেশ ও দেশের বাইরের রক্ষিত দেশের সাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার মূলে রয়েছে এদেশের কবি, সাহিত্যিক ও লেখকদের জ্ঞানলব্ধ ধারণার সংগ্রহ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা। তাই জাতীয় গ্রন্থাগার একটি দেশের জন্য অপরিহার্য বিষয়। ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ কারণে ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে।

সাক্ষরতা ও চিন্তার পশ্চাৎপদতা দূরীকরণ, অর্জিত শিক্ষার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি, সহনশীল, পরমতসহিঞ্চু সামাজিক ও গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের সৃষ্টি, সর্বোপরি জনসাধারণের মাঝে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ গ্রন্থাগারের মূল উদ্দেশ্য। জ্ঞানের ইচ্ছা মানুষের একটি আদিম আকাঙ্খা। আর গ্রন্থাগার গড়ে ওঠার মূলে মানুষের এই আকাঙ্খা অন্যতম ভূমিকা পালন করে। মাটির ট্যালি, গাছের ছাল, পাতা ইত্যাদিতে বিভিন্ন সময়ের পন্ডিতদের লিখিত পুঁথি ও পুস্তকের সংগ্রহকে সংরক্ষণ করার প্রয়োজনেই ধীরে ধীরে বহুল ঘটনার প্রবাহে গ্রন্থাগার রূপ লাভ করেছে। মানুষ যখন থেকে জীবনে গ্রন্থ এবং জ্ঞানের তাৎপর্য অনুধাবন করতে শুরু করলো, তখন থেকেই গ্রন্থাগারের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়তে থাকল। তাই সেই প্রাচীনকাল থেকেই মূলত ব্যক্তিগত উদ্যোগে পৃথিবীতে বিভিন্ন গ্রন্থ সংগ্রহশালা গড়ে উঠতে থাকে। ইতিহাসে গ্রন্থাগারের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় ২৬০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ঐতিহাসিক এবং প্রাগৈতিহাসিক যুগের সন্ধিক্ষণে।

পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থাগারটি ব্যাবিলনে প্রতœতাত্ত্বিক খননের ফলে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। প্রাচীন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার গ্রন্থাগার স্থাপনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় তৎকালীন রোমে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগার গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর আগের মিসরে আলেকজান্দ্রিয়ায় গড়ে উঠেছিল তৎকালীন পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রন্থাগার। এছাড়া ভারতবর্ষে নালন্দা এবং তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশ তথা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারের হদিশ পাওয়া গিয়েছে প্রাচীন আসুরবনিপাল গ্রন্থাগার (৬৬৮-৬২৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) থেকে শুরু করে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার (৪২৭-১১৯৩ খ্রি.), বর্তমান যুগের দি লাইব্রেরি অব কংগ্রেস-এ (১৮০০খ্রিষ্টাব্দ) যে সংগ্রহ গড়ে উঠেছে তা মূলত জ্ঞান-পিপাসু মানুষের আকাঙ্খা ও ইচ্ছার ফসল।

আধুনিক পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ”লাইব্রেরি অব কংগ্রেস” -এ রয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিও একটি পৃথিবী বিখ্যাত লাইব্রেরি। ”বডিলন লাইব্রেরি” তে রয়েছে ১ কোটির বেশি সংগ্রহ। এছাড়াও ফ্রান্সের বিবলিথিক ন্যাশনালি লাইব্রেরি, মস্কোর লেলিন লাইব্রেরি ও কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উল্লেখযোগ্য। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিও পৃথিবীর প্রাচীন লাইব্রেরির মধ্যে অন্যতম।

বর্তমান বিশ্ব ডিজিটাল ও ভার্চুয়াল লাইব্রেরির যুগে প্রবলভাবে প্রবেশ করেছে। ভার্চুয়াল লাইব্রেরির মাধ্যমে সময় ও অর্থ খরচ না করে লাইব্রেরির সংগ্রহ বাড়ানো এবং বিশ্বের যেকোন ধরনের তথ্য নিমিষেই হাতের নাগালে পাওয়া সম্ভব। এটি হচ্ছে কোন স্থান ছাড়া বিশাল একটি সংগ্রহ ভান্ডার। উন্নত বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশও ডিজিটাল ও ভার্চুয়াল লাইব্রেরির যুগে প্রবেশ করেছে। সারা দেশে সরকারি ৭১টি গণগ্রন্থাগার আছে। সেগুলো ডিজিটালাইজেশনের কাজ চলছে। এর ফলে সকল লাইব্রেরির তথ্য একটি জায়গাতেই পাওয়া যাবে।

পৃথিবী, রাষ্ট্র, সমাজ তথা ব্যক্তিমানুষের জীবনে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রন্থাগার থেকেই মানুষ লাভ করে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। পৃথিবীর যেকোন গবেষণায় বহুমুখী বিভিন্ন তথ্যের প্রয়োজন হয়। সেই সকল তথ্যের একত্র আকর ভান্ডার হলো গ্রন্থাগার। কোন মানুষ যদি সার্বিকভাবে তার অতীতকে চিনতে চায় তার জন্যেও সাহায্য নিতে হবে গ্রন্থাগারের। কোন মানুষের চিন্তার পথে কোন প্রতিকূল স্রোত যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেই বাধা অতিক্রম করতেও সাহায্য করে গ্রন্থাগারই। প্রমথ চৌধুরীর মতে, ‘লাইব্রেরি হচ্ছে এক ধরনের মনের হাসপাতাল। পাঠাগার শুধু ভালো ছাত্রই নয়, ভালো মানুষও হতে শেখায়। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া জাতীয় চেতনার জাগরণ হয় না। আর তাই গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্রমবর্ধমানতার যুগে মানুষের কাছে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল বিপ্লবের কালেও গ্রন্থাগারের প্রাসঙ্গিকতাকে তাই কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। সেজন্য বর্তমান যুগে প্রযুক্তি এবং জ্ঞান চর্চার ঐতিহ্যের মধ্যে সেতুবন্ধন ঘটানোর ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের তাৎপর্য অপরিসীম। জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান হিসেবে ভবিষ্যতেও গ্রন্থাগারের প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব অক্ষুন্ন থাকবে। আর সেই জ্ঞান মানুষের সভ্যতাকে সত্য এবং সুন্দরের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

লেখকঃ সাংবাদিক





আর্কাইভ