মঙ্গলবার ● ১২ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » কৃষি » পাইকগাছায় বোরো ধান ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক
পাইকগাছায় বোরো ধান ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছিলেন পাইকগাছার উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু ধানের ব্লাস্ট রোগ কৃষকের সে আশা কেড়ে নিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে অত্র উপজেলায় ৪ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিছু কিছু এলাকায় এ বছর লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ থাকায় বোরো আবাদ বৃদ্ধি পায়। ফলে লক্ষামাত্রার স্থলে ৫ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়।
চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। যার মধ্যে ২ হাজার ৪১২ হেক্টর ব্রি ধান-২৮, ১ হাজার ১৩৪ হেক্টর ব্রি ধান-৬৭, ১৯০ হেক্টর ব্রি ধান-৫৮, ৭৫ হেক্টর ব্রি ধান-৫০, ২৩ হেক্টর ব্রি ধান-৮৮, ৩০ হেক্টর ব্রি ধান-৭৪, ৫০ হেক্টর ব্রি ধান-৮১, ২১ হেক্টর ব্রি ধান-৭৭, ১২ হেক্টর ব্রি ধান-৭৮, ১০ হেক্টর ব্রি ধান-৯৯, ৩ হেক্টর ব্রি ধান-১০০, ৩০ হেক্টর ব্রি ধান-৬৩, ১৫ হেক্টর ব্রি ধান-৯২, ১৫ হেক্টর বিনাধান-১০, ১৫ হেক্টর বিনাধান-১৪, ১৫ হেক্টর বিনাধান-২৪। উন্নত জাতগুলোর মধ্যে হাইব্রিড হিরা ১৪১ হেক্টর, শক্তি-২-৮৬ হেক্টর, তেজগোল্ড ১৪৩ হেক্টর, সিনজেন্টা-১২০৩- ২২২ হেক্টর, এসএল ৮ এইচ ২৯৫ হেক্টর, এম এস-১- ৩২৫ হেক্টর ও এসিআই-১- ৩৬০ হেক্টর। ইতোমধ্যে উফশি জাতের ধান কৃষকরা কাটতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা গদাইপুর, মটবাটি, তকিয়া, মালত, চরমলই, সোলুয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ধানক্ষেতে এই রোগটি দেখা দিয়েছে। কিছুদিন আগেও চোখ জুড়ানো ধানের শীষ দুলছিল ক্ষেতগুলোতে। কিন্তু হঠাৎ করে অধিকাংশ জমিতে ধানের শীষ বাদামী হয়ে গেছে, দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে ধান পেকে গেছে। এই ধানের শীষ ভিতরে পঁচে যাচ্ছে। ক্ষেতে গেলে মনে হচ্ছে আগুনে ঝরসে গেছে ধান। আক্রান্ত ধানের শীষ গাছ থেকে লুটিয়ে পড়ছে।
উপজেলার তকিয়া, মটবাটি, গদাইপুর ব্লকের কৃষক মোঃ দিদারুল ইসলাম, কোনাই সরদার, ধোনাই সরদার বলেন, ধানের চারা রোপণের শুরুতে উপজেলায় ধানের ক্ষেতে বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ কোনক্রমে সামলানো সম্ভব হয়। তবে ব্রিধান ২৮ জাতের কিছু কিছু ক্ষেতে ধান পাকার সময় ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে তারা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। ফিলিয়া, দিঘাসহ বিভিন্ন কীটনাশক ক্ষেতে প্রয়োগ করে কোন কাজ হয়নি।
এলাকার কৃষকরা আরও জানান, এবার মৌসুমে প্রথমে বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ করলেও সেটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ধানের ফলনের সময় এই ব্লাস্ট রোগ ধারণ করছে। এত যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে উঠা সম্ভব হবে না বলে মনে হচ্ছে।
কৃষকরা আরও বলেন, বোর ধানের ব্লাস্ট রোগ হতে মুক্তি পেতে কীটনাশক স্প্রে করছি। তবে এই রোগকে পুঁজি করে কিছু অসাধু কীটনাশন সার ব্যাবসায়ীরা বিভিন্ন কোম্পানী নিন্মমানের কীটনাশক বিক্রি করেছে কৃষকদের কাছে। সে ঔষধ ক্ষেতে প্রয়োগ করে কোন কাজ হচ্ছে না।
উপজলো কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহঙ্গীর আলম বলেন, বোরো আবাদের শেষের দিকে কিছু ধানক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছিলো। কৃষকরা পরামর্শ না নিয়ে সঠিক কীটনাশক ক্ষেতে ব্যবহার না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিধান-২৮ জাতের ক্ষেতগুলি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষকদের ২৮ আবাদ না করার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করায় ভালো ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।