রবিবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাস্তায় হাঁটার নিয়ম জানা জরুরি; পাঠ্য বইয়ে অন্তভুক্ত প্রয়োজন
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাস্তায় হাঁটার নিয়ম জানা জরুরি; পাঠ্য বইয়ে অন্তভুক্ত প্রয়োজন
প্রকাশ ঘোষ বিধান=
রাস্তা দিয়ে হাটর নিয়ম জানিনা তাই যে যার ইচ্ছা মত রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। নিয়ম জানিনা তাই মানিনা। রাস্তা দিয়ে হাটতে গেলে ফুটপাত দিয়ে হাটতে হয় ৷ ফুটপাত না থাকলে নিজের ডান পাশ দিয়ে হাটতে হয় ৷ এটাই রাস্তায় চলার সঠিক নিয়ম ৷ কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জানে না বলে বাম পাশ দিয়ে হাটে ৷ আমাদের দেশে গাড়িগুলো সাধারণত রাস্তার বাম দিক দিয়ে চলে তাই ডানপাশ দিয়ে হাঁটুন ।
পথচারী হিসাবে সড়ক দিয়ে হাঁটার নিয়ম হলো- সব সময় রাস্তার ডান পার্শ্ব দিয়ে হাটতে হবে। কারণ আমাদের দেশের নিয়ম অনুযায়ী গাড়ি বাম পার্শ্ব দিয়ে চলে। পথচারীও যদি বাম পার্শ্ব দিয়ে চলে তাহলে পিছন থেকে আগত গাড়িগুলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঘাত করতে পারে। ডান পার্শ্ব দিয়ে হাটলে আপনার সামনের গাড়িগুলো দেখে নির্বিঘেœ রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে পথচারীকে পিছন থেকে কোন গাড়ি আঘাত করার সম্ভাবনা থাকে না। এই পথ চলার নিয়ম না জানার কারণে প্রতি বছর অনেকেই দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন। এই পথ চলার নিয়ম প্রাইমারি স্কুল থেকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন ।
আমাদের দেশে সড়ক দূর্ঘটনার সংখ্যাটি যেন প্রতিদিনই বেড়ে চলছে। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। আর আহত হয়ে দুর্বিসহ জীবন বয়ে বেড়ান আরও অসংখ্য মানুষ। দুর্ঘটনায় একটি মৃত্যু পবিরার ও দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। দূর্ঘটনাগুলোর জন্য আমরা অনেকাংশেই দায়ী করে থাকি গাড়ী চালক বা পরিবহন চালকদের। কিন্তু সড়ক দূর্ঘটনার জন্য শুধু চালক নয়, দায়ী অসচেতন নাগরিকও। সড়কে চলাচলের জন্য প্রত্যেকের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। এই নিয়মগুলো না মানার ফলেই অনেক সময় পথচারির বিভিন্ন ধরণের ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়। সড়কে চলার সময় সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চললে অনেকাংশেই দূর্ঘটনা রোধ করা যায়।
ট্রাফিক সাইন ও ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে চালক ও পথচারির জন্য জানা খুব প্রয়োজন। রোড় সাইন রাস্তার উপরে দাগ ও রাস্তার পাশে বিভিন্ন নির্দেশনা মূলক চিহ্নযুক্ত সাইন বোর্ড স্থাপন করা। ট্রাফিক সিগন্যাল দুই প্রকার: বাতির সাহায্যে সংক্রীয় ভাবে আর হাতের সাহায্যে ট্রাফিক পুলিশ দ্বারা। প্রথমেই আমাদের দেশের প্রচলিত ট্রাফিক সাইন সম্পর্কে ধারনা থাকা দরকার। অর্থাৎ কোন সাইনটির কী ‘অর্থ’, কোথায় কোন সাইনটি থাকলে তা রাস্তা চলাচলের ক্ষেত্রে কি বোঝায়, ইত্যাদি।
রাস্তায় চলাচলের কিছু নিয়ম রয়েছে যা মেনে চললে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো সম্ভব। আমাদের দেশের বেশির ভাগ চালক তেমন লেখাপড়া জানে না। তাদের রোড সাইন সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই। গাড়ি চালনার সময় কোথায় ওভারটেক করা যাবে এবং কোথায় যাবে না সে বিষয়ে তাদের কোন ধারনা নেই। রাস্তায় গাড়ী চালাতে রোড সাইন রোড সিগন্যাল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা খুব জরুরি। আমাদের দেশে রাস্তার মাঝে সাধারণত চার ধরণের ডিভাইডার লেন দেখা যায়। ১। সাদা কিন্তু মাঝে মাঝে কাটা লেন, ২। একটানা সাদা রেখার লেন, ৩। একটানা ডাবল (সাদা/হলুদ) রেখার লেন, ৪। একটানা হলুদ রেখার পাশে কাটা হলুদ রেখার লেন। এই চার ধরণের লেনের অর্থ চার রকম। একজন ড্রাইভার যখন গাড়ি ড্রাইভ করবেন, তখন তার অবশ্যই এই চার ধরণের লেনের অর্থ জেনে গাড়ি ড্রাইভ করা উচিৎ। চারটি সাইন, একটি হলো- রাস্তার মাঝখানে ফাকা ফাকা সাদা দাগ। এখানে একজন চালক ইচ্ছা করলে সুবিধামতো সময়ে ওভারটেক করতে পারবে। এ ধরনের সাইন সাধারণত সোজা রাস্তায় দেখা যায়। দ্বিতীয়টি হলো- রাস্তার মাঝখান দিয়ে সাদা দাগ যাহা লম্বালম্বিভাবে চলে গিয়েছে। এটাকে বলা হয় অভারটেকিং নিষিদ্ধ সাইন। এখানে কোন অবস্থায় ওভারটেক করা যাবে না। এধরনের সাইন সাধারনত রাস্তার টার্নিং পয়েন্টে, কোন ব্রীজের আগে বা বাজার এলাকাই দেখা যায়।
তৃতীয়টি হলো- ডাবল হলুদ রেখার একটানা ডিভাইডার লেনের মানে হচ্ছে এই রাস্তায় কখনোই ইউটার্ন বা ওভারটেক করা যাবে না। লেন পরিবর্তন করা যাবে না। কিছু সময়ের জন্য হয়ত পার্কিং করতে পারবেন। কিন্তু পার্কিং করলেও রাস্তার একবারে বাম দিক ঘেঁসে গাড়ি পার্ক করবেন। সামনে তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকলে লেন পরিবর্তন করা যাবে না।
চতুর্থটি হলো- কখনো কখনো রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় এমন ডিভাইডার লেন দেখতে পাওয়া যায় যার একটা দাগ একটানা হলুদ রঙের। তার পাশেই আরেকটা হলুদ রেখা কিন্তু কাটা কাটা। এই বিশেষ ধরণের ডিভাইডার লেন এর অর্থ ভিন্ন। যে পাশে একটানা হলুদ রেখা সে পাশের গাড়িগুলোর জন্য এই রকম ডিভাইডার যুক্ত রাস্তায় লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেক ও ইউটার্ন নিষেধ। কিন্তু যে পাশে কাটা কাটা হলুদ রেখা, সে পাশের গাড়িগুলো চাইলে দরকার অনুযায়ী লেন পরিবর্তন এবং ওভারটেক করতে পারবে। তবে অবশ্যই ডিভাইডার লেন চেঞ্জ করার আগে ও ওভারটেকিং এর আগে লুকিং গ্লাসে পেছনের গাড়ি দেখে সতর্ক থকতে হবে। হাই ওয়েতে চলার সময় এ চারটি সাইন জানা খুবই জরুরী।
মহাসড়কগুলেতে সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে। আহত ও নিহত লোকের মধ্যে একটা বড় অংশ পথচারী। ভাবতে অবাক লাগে, অনেক শিক্ষিত লোকও ট্রাফিক আইনে পথ চলার নিয়মটা জানেন না। জেব্রা ক্রসিং না থাকলে সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে দেখে পার হোন। লাল বাতি মানে থামুন, হলুদ বাতিতে তৈরি হও, সবুজে সামনে চলতে শুরু করতে হবে। আর গ্রামের নিরক্ষর লোকের কথা তো বাদই রইল। কারন তারা তো রাস্তা পারাপার হয় রাস্তার একদিকে তাকিয়ে অথবা দৌড় দিয়ে। রাস্তা পারাপার হওয়ার নিয়ম হলো প্রথমে ডানে তাকাতে হবে, তারপর বামে এবং সর্বশেষ ডানে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তা পার হতে হলে আপনাকে ডানে তাকাতে হবে কারণ ডান দিকের গাড়ি আপনাকে প্রথমে আঘাত করবে। এরপর বামে তাকাতে হবে কারণ উল্টো দিক থেকে যে কোন সময় গাড়ি আসতে পারে। সর্বশেষ ডানে তাকাতে হবে কারণ এই সময়ের মধ্যে যে কোন গাড়ি চলে আসতে পারে।
সড়ক দুর্ঘটনার অনেক কারণ রয়েছে। যেমন চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, রোড সাইন না বুঝে যেখানে সেখানে ওভারটেক করা, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, রাস্তার ক্রটি, ক্রটি যুক্ত গাড়ী ব্যবহার, পথচারীদের পথ চলার নিয়ম না জানা, মহাসড়কে নছিমন, করিমন ইঞ্জিন চালিত গাড়ী চালনা, বিশ্রাম ব্যতীত একটানা গাড়ী চালনা, গাড়ীর ইঞ্জিন এবং চাকা চেক না করে গাড়ি বের করা। রাত্রিকালীন সময়ে বড় গাড়িগুলো নিয়ম না মেনে হাইভিম ব্যবহার করা,
দেশের রাস্তাগুলো যেন মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ। তবে একটু সচেতন থাকলে এবং কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে ঠেকানো যেতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা। রাস্তায় চলাচলের কিছু নিয়ম রয়েছে যা মেনে চললে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো সম্ভব। রাস্তায় চলাচলের ১১ টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম যা আপনার আমার সকলের জানা উচিৎ। রাস্তায় চলার সময় যে বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে- রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ি দেখে পার হবেন। ফোনে কথা বলবেন না। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করুন। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করুন। জেব্রা ক্রসিং না থাকলে সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে দেখে পার হন । রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণের লাইটের সংকেত দেখে নিতে হবে। লাল বাতি মানে থামুন, হলুদ বাতিতে তৈরি হও, সবুজে সামনে চলতে শুরু করতে হবে। পাবলিক বাসে ওঠানামার সময় সতর্ক থাকুন। আমাদের দেশে গাড়িগুলো সাধারণত রাস্তার বাম দিক দিয়ে চলে তাই ডানপাশ দিয়ে হাঁটুন। বাইক চালানোর সময় ফুটপাতে ওঠাবেন না । গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখুন, সতর্ক থাকুন ও রাস্তায় নিরাপদে থাকতে, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন।
রাস্তায় হাটার নিয়ম ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মূল্যবোধ শানিত করতে হয়। তাই ছোট থাকতেই যদি তাদের ট্রাফিকে এই নিয়ম কানুন সর্ম্পকে জানানো হয়, তাহলে সচেতনতা তার মগজে ঢুকে যাবে। নিজে জানতে হবে আর সন্তানকে শিখাতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয়, যদি সন্তানকে নিজে রাস্তায় চলাচলের সময় হতে কলমে দেখিয়ে দিয়া হয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর আইন প্রয়োগ করাটা এক্ষেত্রে আরও বেশি কাজে দেবে। যারা শহরের মধ্যে ইচ্ছামত গাড়ি চালাচ্ছে, রাস্তা পার হচ্ছে তারাই কিন্তু ক্যাটনমেন্ট এলাকায় আইন মেনে চলে। কারণ সেখানে নিয়ম ভাঙলে শাস্তি পেতে হয়। কঠোর আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ আরও বেশি জরুরি ।
রাস্তায় হাটার নিয়ম ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান সবার কাছে পৌঁছাতে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক-সংক্রান্ত নিয়ম-কানুনগুলো সংযোজন করা জরুরি।
লেখকঃ সাংবাদিক