শুক্রবার ● ৮ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » ব্যবসা-বাণিজ্য » কোরবানি ঈদে চুইঝালের দাম ও চাহিদা বেড়েছে
কোরবানি ঈদে চুইঝালের দাম ও চাহিদা বেড়েছে
প্রকাশ ঘোষ বিধান,পাইকগাছা; কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাইকগাছায় চুইঝালের দাম ও চাহিদা বেড়েছে। মাংসের সাদ বাড়াতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যুগ যুগ ধরে অন্যান্য মশলার সাথে চুইঝাল ব্যবহার করে আসছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে মশলাটি অনেক প্রিয়।চুই ঝালের কাণ্ড মাংসের মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। খুলনা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট যশোর এলাকায় বিখ্যাত মসলা এই চুই ঝাল। চুইঝালের শিকড় , পাতা ও ফুল ,ফলে ঔষধি গুণ আছে। চুইঝাল মাছ ও মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের জেলা খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এ সব এলাকায় চুইঝাল মসলা খুব জনপ্রিয়। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও ঝাল হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
খুলনা অঞ্চলে চুইঝালের কাণ্ড, শিকড় বা লতাকে ছোট ছোট টুকরো করে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেকোনো ধরনের মাংস : গরুর বা খাসির মাংস রান্না করা হয়। যা এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এবং খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তবে চুই এর শিকড়ের মধ্যে কাণ্ডের তুলনায় কড়া সুঘ্রাণ ও ঝাঁঝালো স্বাদ বেশি থাকার কারণে এটি কাণ্ডের তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। চুইঝাল দিয়ে রান্না করলে মাংসে একধরনের কড়া সুঘ্রাণ এবং ঝাল প্রকৃতির, ঝাঁঝালো ও টক স্বাদ যুক্ত হয় যা মাংসের মধ্যে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের স্বাদ এনে দেয়।
সারাবছরই চাহিদা ও দামের দিক থেকে উপরে থাকে মশলাটি। তবে ঈদ আসলেই চুইঝালের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা পকেট কাটেন ভোক্তাদের। কুরবানির সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাইকগাছায় চুইঝালের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চুইঝালের দোকান নিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দোকানগুলোতে ভীড়ও বাড়ছে ক্রেতাদের। সাধারণ সময়ে চুইঝাল কেজি প্রতি ৪০০ থেকে হাজার টাকা থাকালেও বর্তমানে আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা,নড়াইল এলাকায় চুইঝালের চাষ হয়। মশলাটি এসব জেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও মশলা হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। চুই লতা জাতীয় গাছ। এর কান্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মতো, দেখতে সবুজ রংয়ের। চুইঝাল খেতে ঝাল হলেও এর রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ঔষধি গুণ। চুইলতার শিকড়, কান্ড, পাতা, সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। এছাড়াও মসলা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে ঝাল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাঁসের মাংস ও গরুর মাংস রান্না করতে। রান্নার জন্যে চুইঝালের কান্ড ব্যবহার করা হয়। চুইঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সিজামিন, পিপলাস্টেরল।
গদাইপুর বাজারে চুইঝাল বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, চুইঝাল সারাবছর মোটামুটি ভালোই বিক্রি হয়। তবে কোরবানির উৎসবে চুইয়ের বিক্রি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন,তাই ক্রেতাদের কাছে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।
শহিদুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, আগে চুইঝাল চিকন (আকারে ছোট) ৪ শত থেকে ৬শ টাকায় ও কিছুটা বড় চুইঝাল ৮শত টাকা কেজিতে বিক্রি করতাম। কোরবানি উপলক্ষে বাজারে চাহিদা বাড়ায় পাইকারী দরে কিনতেই বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে। তাই চুইঝালের সাইজ অনুযায়ী কেজি প্রতি ৮শত থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। চুইঝাল কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, সারা বছর মাঝে মাঝে চুইঝাল খাই মাংসের সাথে। কিন্তু কুরবানির সময় গরুর মাংসের সাথে চুইঝাল না হলে চলে না।
গদাইপুর বাজারে চুইঝাল ক্রেতা মিজানুর বলেন, চুইঝালের দাম ঈদের আগে আরো বাড়তে পারে। তাই ভিড় এড়াতে আগেভাগেই চুইঝাল কিনতে এসেছি। আমরা শুধু গরুর মাংস না, সব ধরণের মাংস,বড় মাছ ও মজাদার খাবারেই চুইঝাল খাই। তবে কুরবানি উপলক্ষে দাম কিছুটা বেড়েছে।ঈদের সময় চুইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস অতিথিদের খুবই পছন্দের। দাম একটু বৃদ্ধি পেলেও, মাংস খেতে চুইঝাল লাগবেই।