সোমবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » শিক্ষা » ৭ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, নেই কর্তৃপক্ষের নজরদারি !
৭ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, নেই কর্তৃপক্ষের নজরদারি !
নড়াইল প্রতিনিধি; বিদ্যালয় চলাকালীন সময় হঠাৎ করেই ধসে পড়ল ছাদের পলেস্তারা। মুহূর্তেই ছাদের বড় একটা অংশের দুর্বল রডগুলো বেরিয়ে পড়ল। আর ভেঙ্গেপড়া পলেস্তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল বেঞ্চের সবখানে। এ দৃশ্য নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। তবে ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পলেস্তারা ভেঙ্গেপড়া এ কক্ষটিতে নবম শ্রেণির পাঠদান হয়ে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ঘটনার সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কক্ষটিতে ছিলেন না। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী (টেস্ট পরীক্ষা) ফলাফল ঘোষণার সময় শিক্ষার্থীরা সেখানে (অন্য কক্ষ) থাকায় বড় ধরণের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। এরপর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর গত রোববার থেকে বিদ্যালয়টি চালু হলেও ওই শ্রেণিকক্ষে আর পাঠদান দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রায় সাত বছর ধরে ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবুও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত। এরপর ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে তিনরুম বিশিষ্ট একতলা ভবনটি নির্মিত হয়। এর মধ্যে একটি কক্ষে নবম শ্রেণির ক্লাস নেয়া হয়। যেটির পলেস্তারা ভেঙ্গে পড়েছে। এই শ্রেণিকক্ষের পাশেই প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের অফিস কক্ষ। তার পাশেই ছাত্রী মিলনায়তন। বর্তমানে তিনটি কক্ষের অবস্থা খুবই নাজুক। বছর দুয়েক আগে শিক্ষকদের অফিস কক্ষের পলেস্তারাও ভেঙ্গে পড়েছিল। এছাড়া কক্ষগুলোর ফ্লোরও ভেঙ্গে দেবে গেছে। সবমিলে ভবনটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবুও নিরুপায় হয়ে ভবনটি ব্যবহার করতে হচ্ছে। কারণ, বিদ্যালয়টিতে এ ভবন ছাড়া আর কোনো পাকা ভবন নেই। এছাড়া দু’টি টিনশেডের ঘর থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এখানে চারটি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও প্রয়োজন রয়েছে সাতটির। আর টিনের ঘরে প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের অফিস করার মতো ভালো ব্যবস্থা নেই।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া ও মাহফুজ শেখ বলে, বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে জরাজীর্ণ ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। ওই কক্ষে আর পাঠদান হচ্ছে না, ঢুকতেও ভয় পাচ্ছি। কর্তৃপক্ষ এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন একটি ভবন দিবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও নতুন ভবন পাচ্ছি না। ভগ্নদশা ভবনটিতে পাঠদান দেয়াসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের অফিস করতে ভয় করছে। যে কোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছি। কখন কী হয়, সেই আতঙ্কের মধ্যেই থাকতে হয়। আমাদের দাবি, নতুন একটি ভবন চাই।
প্রধান শিক্ষক নির্মল কুমার কুন্ডু জানান, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে একটি মাত্র পাকা ভবন থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে খুব সমস্যা হচ্ছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। আমাদের একটাই দাবি, নতুন একটি ভবন চাই। আশা করছি সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে নতুন ভবন অনুমোদনের জন্য যে ধরণের প্রক্রিয়া রয়েছে, সে ব্যাপারে তাদেরকে সহযোগিতা করব। এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভূমিকা রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুনাভ রায়ের মোবাইল ফোনে গতকাল (রোববার) বিকেল ৪টা ৩৪ মিনিট থেকে ৫৬ মিনিট পর্যন্ত তিনবার ফোন দেয়া হয়। শেষবার ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বলেন, ভাই আপনি একের পর এক ফোন দিচ্ছেন কেন ? ব্যস্ত আছি। আধাঘণ্টা পর কথা বলবেন। এরপর আর তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অথচ তাকে (অরুনাভ রায়) প্রথমবার ফোন দেয়ার ১৮ মিনিট পর দ্বিতীয়বার ফোন দেয়া হয়। এর চার মিনিট পর তৃতীয়বার ফোন দেয়া হয়েছে।