সোমবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » সংস্কৃতি ও বিনোদন » কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীতে মহা ধুমধামের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘বনবিবি’র মেলা
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীতে মহা ধুমধামের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘বনবিবি’র মেলা
অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ ১৬ জানুয়ারী, সোমবার খুলনার কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর চরামুখা গ্রামে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো মহা ধুমধামের সাথে শুরু হয়েছে প্রায় শত বর্ষের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের তীরে উদযাপিত হচ্ছে ঐতিহাসিক ‘বনবিবি’র মেলা। যা “মুধো মাঝি”র মেলা নামে পরিচিত।
কত সাল থেকে যে এ মেলা শুরু হয়েছিলো নির্দিষ্ট করে তা কেউ বলতে পারেনা। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে প্রতি বাংলা বছরের ‘১লা মাঘে’ এ মেলা উদযাপিত হয়। সেই সময়ে চরামুখা গ্রামে মহাদেব মাঝি ও সহাদেব মাঝি নামে ২ভাই বাস করতেন। তারা কাঠ কাটতে জঙ্গলে যেতেন। তখন স্বপ্ন প্রাপ্ত হয়ে মহাদেব মাঝি ছোট ভাই সহাদেব মাঝিকে সাথে নিয়ে স্বল্প পরিসরে বনবিবি পূজা শুরু করেন। পরবর্তীতে ঐ এলাকার হাজোতিরা ঐ পূজায় এসে পূজা-অর্চনা করতেন ও হাজোত দিতেন বিধায় পূজাটি মেলায় রূপ নেয়। পূর্বে মেলাটি ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত উদযাপিত হতো। কিন্তু কালের পরিবর্তনে এখন মেলাটি ১বা ২দিন ধরে উদযাপিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবছরও মেলাটি ২ দিন ধরে উদযাপিত হচ্ছে।
কালক্রমে প্রয়াতঃ মহাদেব মাঝির নামেই এক সময় মেলার নাম হয় ‘মুধো মাঝি’র মেলা। আজো মেলাটি ‘মুধো মাঝি’র মেলা নামে সমোধিক পরিচিত। মেলাটি ভোর বেলা শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে। মেলা ঘুরে দেখা যায় এ উপলক্ষে এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা- অঞ্চলের ব্যাবসায়ী ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমবেত হতে দেখা গেছে। মেলায় কসমেটি· সামগ্রী, পোশাক, খেলনা, বই, বাঁশের তৈরী শিল্প সামগ্রী, গৃহাস্থলীর বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী, শাক-সব্জী, বিভিন্ন ধরনের ফল, ভাঝা, চটপটি, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির দোকান, বিশেষ করে মাটির তৈরী বিভিন্ন ধরনের হাঁড়ী-পাতিল ও বিভিন্ন ধরনের খেলনা মেলার শোভা বর্ধন করে।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীর ভীড়ে বিভিন্ন ধরনের খোশ গল্প জমে উঠেছে। ছোট ছোট ছেলে- মেয়ের ছোটাছুটি, বাঁশির সুর, মাইকের শব্দ, চোরকি ঘোরানো ও নাগোর দোলার কোঁকানি ও জন কোলাহলে মন মেতে ওঠে। বিনোদন হিসেবে মেলায় আয়োজন ছিলো ৮ দলীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সহ বিভিন্ন ধরনের খেলা-ধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় ও অতিথী শিল্পীদের নাচে-গানে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার পরিবেশ।
মহাদেব মাঝি ও সাহাদেব মাঝি মারা যাওয়ার পর তারই ভ্রাতুস্পুত্র ভোলানাথ মাঝি অদ্যাবধি সুনামের সাথে মেলাটি পরিচালনা করে আসছেন। মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মোজাফ্ফর আহমেদ বলেন, মেলাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আয়োজক কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও কয়রা থানা প্রশাসনিক বাহিনী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।