বুধবার ● ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » পাইকগাছায় মৃতপ্রায় শিবসা নদী দখলের কবলে : দ্রুত খননের দাবি
পাইকগাছায় মৃতপ্রায় শিবসা নদী দখলের কবলে : দ্রুত খননের দাবি
উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছার এক সময়ের স্রোতস্বিনী শিবসা নদী কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। নদীটি আজ মৃতপ্রায়। নদী হারিয়েছে তার জীবন-যৌবন। জোয়ারের সময় নাম মাত্র পানি আসে নদীতে। একসময়ের বৃহৎ এই নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে নদীতে পলি জমে ভরাট হওয়ার ফলে জমি দখলবাজরা তাদের দখল অব্যহত রেখেছে। দখলবাজরা নদী দখল করতে করতে এখন নদীর পুরোটাই প্রায় গ্রাস করার উপক্রম করেছে। মাঝে মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই একটি অভিযান চললেও পরে আবার দখলবাজরা ঠিকই তাদের দখল কার্যক্রম অব্যহত রাখে। গতকাল মঙ্গলবার নদী দখলের খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীতে দেওয়া বিভিন্ন সময়ের বাঁধ অপসরণ করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক উপস্থিত লোকজন সাধুবাদও জানিয়েছেন প্রশাসনকে। এলাকাবাসী দ্রুত সময়ের মধ্যে শিবসা নদী খননের দাবি জানিয়ে বলেন, নদী খনন না করলে দখলবাজরা নদী দখল করতে থাকবে, অপরদিকে পৌর এলাকা পানিতে ডুবে যাবে।
জানা গেছে, পাইকগাছা পৌরসভার অবস্থান শিবসা নদীর উপকূলে। পৌরসভার তিন পাশ জুড়ে বয়ে গেছে নদীটি। কয়েক বছর আগেও এ নদী দিয়ে লঞ্চ চলাচল করতে দেখা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জেলা সদর খুলনায় যাতায়াত করত নদী পথে। পৌর সদরে যাবতীয় মালামাল খুলনা থেকে নদীপথে আসত। যদিও এখন আসে তার সামান্য একটা অংশ। পৌরসভার তিন দিকে ছিল তিনটি খেয়াঘাট। হাজার হাজার যাত্রীর পারাপারের মাধ্যম ছিল খেয়ার নৌকা। কিন্তু কালের বিবর্তনে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে নদীটিতে পলি জমে ভরাট হয়ে নৌকা চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। ভাটার সময় এলাকায় নদী একেবারেই শুকিয়ে যায়। তখন মানুষ নদী পার হয় হেঁটে। বর্তমানে সেখানে নৌকা চলাচলও দুরূহ হয়ে পড়েছে। নদীর তলদেশের তুলনায় পৌর সদরসহ নদীর দক্ষিণ পাশে সোলাদানা ও লস্কর ইউনিয়নের স্থলভূমি অনেক নিচু হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নিন্মঞ্চালের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এক সময়ের প্রমত্তা শিবসায় সামান্য জলোচ্ছ্স ও জোয়ারে উপচে পড়া পানিতে প্লাবিত হচ্ছে পৌর সদর। বর্ষা মৌসুমে বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বছরের একটা বড় সময় জুড়ে ওই সব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। শিববাটি ব্রিজ থেকে পৌর সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শিবসা নদীর হাড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা পরিণত হয়েছে চরাঞ্চলে। একই সময়ে পলির পাশাপাশি সুন্দরবনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বীজ ভেসে এসে জড়ো হয় জেগে ওঠা চরাঞ্চলে বীজগুলোর অঙ্কুরোদগম হয়ে এলাকাটি পরিণত হয়েছে সবুজ বনাঞ্চলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন সৌন্দর্য পিপাসুরা সুন্দরের স্পর্শ পেতে এসব এলাকায় ঘুরতে এসে হেঁটেই পার হন নদী। নদী উপকূলের মানুষের আশঙ্কা এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে পাইকগাছা পৌর সদরসহ উপজেলার নিন্মঞ্চালের স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে নদীতে পলি জমে অতি দ্রুত ভরাট হয়ে যাওয়ায় এক শ্রেণির ভূমিদস্যু একের পর এক নদীভরাটি জমির দখল করে নিচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে, আবার অনেকে ফসলের আবাদও করছেন। আবার অনেকে পাকা স্থাপনাও করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে অভিযান চললেও সেগুলি কিছুদিন পরে আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে যায় বলে জানা গেছে। নদী দখলের এ কাজে স্থানীয় অনেক জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে বলে জনশ্র“ত আছে। দখলকারী অনেকেই জানিয়েছেন, বর্তমানে তাদের নামে জমি রেকর্ড হয়েছে, সে কারনে তারা বাঁধ দিয়ে চরের জমি নিজের দখলে নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার সকালে নদী দখলের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেন থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সোলাদানার অংশে যান এবং সরজমিন দেখেন এস্কেভেটর দিয়ে নদী কেটে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। সাথে সাথে বাঁধ অপসারণ করে অন্যান্য দখলকৃত সকল বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দেন এবং নির্মিত ঘরও অপসারণ করে দেন। স্থানীয় লোকজন উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যহত না থাকলে আবারও কিছু দিন পরে এসব জায়গা দখল হয়ে যাবে। প্যানেল মেয়র শেখ মাহাবুবর রহমান রঞ্জু বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৬/৭ টি বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে আবার কার্যক্রম শুরু হবে। এ পর্যন্ত নদী যারা দখল করে বাঁধ দিয়ে রেখেছেন তাদের সকলকে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।