বুধবার ● ২২ মার্চ ২০২৩
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » কয়রায় মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে পুকুর থেকে সংগ্রহ করতে খাওয়ার পানি
কয়রায় মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে পুকুর থেকে সংগ্রহ করতে খাওয়ার পানি
অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনা ঃ খুলনার কয়রায় চারপাশে সুবিশাল জলরাশি। কিন্তু এর মধ্যে খাওয়ার জন্য এক ফোটাও পানি নেই। সবই লোনা পানি। অনেক স্থানে গভীর নলকূপ থাকলেও পানিতে আয়রণ ও লবণযুক্ত। যার ফলে পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। এক ফোটা সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরা পর্যন্ত মাইলের পর মাইল রাস্তা পাড়ি জমাচ্ছেন। অনেকে পুকুরের কাদামিশ্রিত ও লবণযুক্ত পানি পান করতেও বাধ্য হচ্ছেন।
গত রবিবার সরেজমিনে উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর বটতলা সরকারি পুকুরে দেখা গেছে, খাওয়ার পানি সংগ্রহের জন্য পড়ন্ত বিকেলে দূর দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে পানি নিতে এসেছেন কয়েকটি গ্রাম থেকে। অনেকেই কাঁকে কলসি নিয়ে দলবদ্ধ ভাবে আসছেন পানি নিতে। কেউবা ব্যাস্ত কলসিতে পানি ভরতে। আবার অনেকেই কলসিতে পানি ভরে ফিরে যাচ্ছেন আপন ঠিকানায়। কালিকাপুর বটতলা সরকারি পুকুরপাড়ে মহেশ্বরীপুর গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পানি নিতে এসেছেন ষাটোর্দ্ধো হালিমা খাতুন। বয়সের ভারে অনেক পথ হেঁটে আসায় হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। ক্লান্তি দূর করতে কলসি রেখে বিশ্রামে বসে পড়েছেন ঘাটে। বিশ্রামের সময় কথা হয় এ সময় তিনি বলেন, পানির অনেক কষ্ট আমাদের। প্রতিদিন চার কলস পানি লাগে আমার। একবারে চার কলস পানি নিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে দুইবার আসতে হয় এখানে। পানি নিতে আমি আর আমার মেয়ে আসি। দুজন দু’কলস করে পানি নিয়ে যাই। তিনি আরো বলেন, বয়স হয়ে গেছে এখন আর আগেরমতো হাঁটতে পারি না। দুইবার পানি আনতে দিনের আধা বেলা লেগে যায়। আমাদের আশপাশে আর কোথাও মিষ্টি পানি না থাকায় এই পানি দিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজ করতে হয়। সাতহালিয়া গ্রামের নাসির মোড়ল বলেন, আমার বয়স ৭৭ বছর। এই জীবন পার করলাম পুকুরের পানি খেয়ে। কারণ আমাদের এখানে টিউবওয়েলের পানি ভালো হয় না।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের মাধ্যেমে একবার টিউবওয়েল বসানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তিন হাজার ফুট গিয়েও মিষ্টি পানি পাইনি। কালিকাপুর গ্রামের চন্দনা সানা বলেন, জলের কষ্ট দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ষাকালে একটু ভালো থাকি তারপর বাকি সময় ধরে খুবই কষ্ট হয় আমাদের। পুকুরের জল খেয়ে প্রায় কোনো না কোনো পেটের রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে আমাদের। ৬নং কয়রা গ্রামের আদিবাসী সদস্য বাসন্তী মুন্ডা বলেন, আমাদের কয়েক কিলোমিটার দূর হতে পুকুরের পানি এনে খেতে হয়। এ রকম সমস্যা অধিকাংশ জায়গায়। ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। পানি সংকট সমাধানের দাবী নিয়ে বিশ্বজুড়ে পালিত হবে দিবসটি। সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন কয়রাবাসী। তবেই পানি দিবস সার্থক হবে বলে সুশীল সমাজ অভিমত প্রকাশ করেছেন।
কয়রা উপজেলার ৫নং কয়রা, ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রা, পাথরখালী, মঠবাড়ি,তেঁতুলতলার চর, সাতানি ,চৌকুনী, গাঁতিরঘেরীঈ সহ অধিকাংশ এলাকায় তীব্র খাবার পানির সংকট রয়েছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, কয়রা উপজেলাটি সুন্দরবনের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলের অর্ধেক মানুষ পুকুরের পানি পান করে থাকেন। লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় গ্রীষ্মকালে পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় খাবার পানির সংকট থাকে। তবে সরকারিভাবে ট্যাংক সরবরাহ করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মমিনুর রহমান বলেন, কয়রার মানুষের খাবার পানি সংকট নিরশনে সরকারী পুকুরগুলো সংস্কারের পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষনে পলিমার ট্যাংকি বিতরণ সহ পানি সংরক্ষণে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
কযরা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, কয়রার মানুষের খাবার পানি সংকটের বিষয়টি চিন্তা করে প্রচুর ট্যাংকি বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পিএসএফ বসানো সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খাবার পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।