শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ২ অক্টোবর ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বিশ্বের সকল প্রাণীর সুরক্ষা নিশ্চিত হোক
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বিশ্বের সকল প্রাণীর সুরক্ষা নিশ্চিত হোক
২৫৫ বার পঠিত
সোমবার ● ২ অক্টোবর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিশ্বের সকল প্রাণীর সুরক্ষা নিশ্চিত হোক

প্র্রকাশ ঘোষ বিধান

৪ অক্টোবর  বিশ্ব প্রাণী দিবস। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রাণীদের কল্যাণের মাধ্যমে তাদের অবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্যে ৪ অক্টোবর দিবসটি বিশ্বে পালিত হয়। বিশ্ব প্রাণী দিবস সর্বপ্রথম হেনরিক জিম্মারমেন নামের একজন জার্মান লেখক ও প্রকাশক মেন্স উন্ড হুন্দ মানুষ ও কুকুর নামের একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি প্রথম ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ জার্মানির বার্লিন স্পোর্ট প্যালেসে এই দিবস উদযাপন করেন। সেখানে ৫ হাজারের অধিক মানুষ অংশ নেন। ১৯২৯ সালে প্রথমবারের মতো এই দিবসটি ৪ অক্টোবর পালন করা হয়। প্ৰথমদিকে তিনি কেবল এ দিবসে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড ও চেকোস্লোভাকিয়ার অনুসারী পেয়েছিলেন। বিশ্ব প্রাণী দিবস জনপ্রিয় করতে জিম্মারমেন নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। অবশেষে, ১৯৩১ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রাণী সুরক্ষা কংগ্রেসে তার উত্থাপন করা প্রস্তাব মতে, ৪ অক্টোবরকে বিশ্ব প্রাণী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সারা বিশ্বে দিবসটি পালন করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ন্যাচার ওয়াচ ফাউন্ডেশন’। এছাড়া দেশে দেশে প্রাণি কল্যাণমূলক সংস্থাও দিবসটি পালন করে থাকে।

এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রাণীদের কল্যাণের মাধ্যমে এদের অবস্থার উন্নতি করা। বিশ্ব প্রাণী দিবস উদযাপনের মাধ্যমে প্রাণী কল্যাণ আন্দোলনকে একত্রীত করা, একে আন্তর্জাতিকভাবে জোরদার করে পৃথিবীকে প্রতিটি জীবের জন্য উন্নততর বাসস্থান হিসেবে গড়ে তোলা।

প্রাণীদের কল্যাণে এবং তাদের অধিকার রক্ষার্থে জাতি, ধর্ম, বিশ্বাস বা রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে দিবসটিকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালন করা হয়। অধিক জনসচেতনতা এবং শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বকে গড়ে তুলি যেখানে প্রাণীদের সংবেদনশীল প্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের কল্যাণে প্রাপ্য মনোযোগ দেয়া হয়।

বিগত কয়েক বছর ধরে বনভূমির সংখ্যা কমতে থাকায় প্রাণীরা অজান্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।  ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বে এ পর্যন্ত বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। এভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে হারিয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির প্রাণী। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্তত ২১৯ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিপন্ন। এই তালিকার মধ্যে আছে উভচর সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণি।প্রাণীকুলের অধিকার রক্ষা ও তাদের কল্যাণার্থে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব প্রাণী দিবস। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ন্যাচার ওয়াচ ফাউন্ডেশন দিবসটি সারাবিশ্বে প্রাণীপ্রেমীদের নিয়ে পালন করে থাকে। এ ছাড়াও দেশে দেশে প্রাণী কল্যাণমূলক সংস্থা দিবসটি পালন করে থাকে।

দিনে দিনে বনাঞ্চল উজাড়, জলবায়ুর পরিবর্তন,  হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ। হারিয়ে যাচ্ছে প্রকুতির ঝাড়ুদার শকুন। আগের মতন রাতে শোনা যায় না শেয়ালের ডাক। মহাবিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় রয়েছে বেঙ্গল টাইগার, হাতি, ভোঁদড়, লামচিতা, চিতা, বনরুই, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, বনগরু, সাম্বার হরিণ, প্যারাইল্লা বানর, হিমালয়ান ডোরা কাঠবিড়ালি, কালো ভালুক ইত্যাদি।

পৃথিবীতে ছোট বড় নান প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রাণী হচ্ছে এমিবা। এরা এককোষী ক্ষুদ্র অণুজীব। আর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী হল নীল তিমি। অ্যান্টার্কটিক নীল তিমি বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী। এই প্রজাতির তিমি দৈর্ঘ্যে ৯৮ ফুট লম্বা হয়। এদের ওজন ১০০-২০০ টন। প্রসবের সময়ই বাচ্চার দৈর্ঘ্য হয় ২৩ ফুট। ওজন হয় প্রায় ৩ টন।

পৃথিবীতে আমাদের টিকে থাকার ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের পেছনে প্রাণীদের রয়েছে  অবদান। মানুষের পোষা প্রাণীসহ চারপাশের নানা প্রাণী দৈনন্দিন জীবনে আমাদের অনেক উপকার করে।  সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রাণী কুকুর। বাড়ি পাহারা দেয় কুকুর, গাভী দুধ দেয়। ঘোড়া, ভেড়া, ছাগল,মহিষ, বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী নানা কাজে লাগে। সেই অবদানকে মনে রাখা ও প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়াই হচ্ছে প্রাণী দিবসের উদ্দেশ্য। একথা অনস্বীকার্য যে অনেক উপকার করা সত্বেও  অনেক সময় এসব প্রাণীকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয না। যা সত্যিই অমানবিক।

মানুষ তার নিজের স্বার্থে বনজ সম্পদ ধ্বংস করছে। আর এর ফলে  প্রাণীরা  বাসস্থানই হারাচ্ছে তা নয়, এর সঙ্গে তারা চরম খাদ্য সংকটে মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।আর খাদ্যের সন্ধানে  লোকালয়ে প্রবেশ করে এ সমস্ত প্রাণীরা মানুষের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে। তাছাড়া কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে বন্যপ্রাণী  শিকার করছে।  জলবায়ু পরিবর্তন, বনের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেও প্রাণীরা বিলুপ্তির পথে। তাই এই বিশ্বকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীদের সমানভাবে মর্যাদা দিতে এবং তাদের সংরক্ষণ করার জন্য  দিনটি পালন করা অত্যন্ত জরুরি।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট---





আর্কাইভ