রবিবার ● ১৫ অক্টোবর ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বিশ্ব খাদ্য দিবস ও বাংলাদেশ
বিশ্ব খাদ্য দিবস ও বাংলাদেশ
প্রকাশ ঘোষ বিধান
১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস। বিশ্বব্যাপী সচেতনতা, ক্ষুধার মোকাবিলা এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করার সংকল্পকে সামনে রেখে প্রতি বছর দিনটি পালন হয়। মানুষের মৌলিক চাহিদা হিসেবে বিবেচিত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মধ্যে অন্ন জোগানের একমাত্র মাধ্যম কৃষি, কিন্তু জনসংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকা বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ এখনও খাদ্যের অভাবে ধুঁকছে। সারা বিশ্বে ক্ষুধার সঙ্গে স্থুলতা ও অপুষ্টিজনিত সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এফএও প্রতিষ্ঠার এ দিনটিতে নতুন নতুন থিম নিয়ে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশ নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে ।
জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৮১ সাল থেকে পৃথিবীর দেশে দেশে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের মানুষের খাদ্য চাহিদা ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলো এদিন আলোচিত হয়। চেষ্টা করা হয় খাদ্য ঘাটতি ও বুভুক্ষু মানুষের সংখ্যা কমাতে। মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার দারিদ্র্য-পীড়িত দেশের মানুষেরা এই তালিকার শীর্ষে আছেন, যেখানে খরা বা দুর্ভিক্ষ কিংবা সংঘাত চলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্নহীন মানুষের মতোই অনাহারে আছেন শরণার্থী শিবিরের কোটি মানুষ, যারা স্বদেশ থেকে বিতাড়িত ও গৃহহীন এবং ছিন্নমূল হওয়ায় চাষাবাদ করে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন না।
১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবসে মানুষের খাদ্যের সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে যেমন আলাপ-আলোচনা হয়, তেমনি খেতে না পারা বুভুক্ষু মানুষদের কথাও জানা যায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) যে হিসাব দিয়েছে, তাতে বিশ্বের প্রায় ৭.৬ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ১১ থেকে ১২ শতাংশ মানুষ খাদ্যহীন, যাদের মোট সংখ্যা আনুমানিকভাবে ৮৩০ থেকে ৮৫০ মিলিয়ন। চরম দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত মানুষেরাও প্রয়োজনীয় খাদ্য পাচ্ছেন না। বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ার কুফল ভোগ করছেন তারা মানবেতন জীবন-যাপন করে। গ্রামীণ দরিদ্রের সঙ্গে সঙ্গে শহুরে বা আরবান দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছেন বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল মানুষ। পৃথিবীর আধুনিক ও অগ্রসর শহরের ঝলমলে আলোর রোশনাই থেকে দূরে, প্রদীপের নীচে অন্ধকারে এইসব নিরন্ন মানুষের বাস। খাদ্যহীনতার প্রকোপে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। পুষ্টিহীনতা, রোগ ও বিকলাঙ্গতায় তারা বিশ্বের দেশে দেশে জর্জরিত হচ্ছে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে।
এও (১৯৯৬) মতে, খাদ্য নিরাপত্তা হচ্ছে, সব মানুষের কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদার বিপরীতে পছন্দ মতো পর্যাপ্ত নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির বাস্তব ও আর্থিক ক্ষমতা থাকা। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জিত হয়েছে কিনা বোঝার উপায় হচ্ছেÑ জাতীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ থাকবে, সময় ও অঞ্চলভেদে সরবরাহ স্থিতিশীল থাকবে, সবাই খাদ্য ক্রয় বা সংগ্রহ করতে পারবে, পুষ্টিকর ও নিরাপদ স্বাস্থ্যকর খাদ্য সহজলভ্য থাকবে। অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তার মূল বিষয় তিনটি এক খাদ্যের সহজ লভ্যতা, দুই- সহনশীল খাদ্য-দব্য মূল্য আর তিন হলো দারিদ্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে চরম খাদ্য সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, যুদ্ধ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় দাঁড়িয়েছে। ইউরোপের প্রায় সব দেশ, চীন, কানাডাসহ সব রাষ্ট্রেই মূল্যস্ফীতি বেড়ছে। আরও বাড়বে বলে শঙ্কার কথা শোনাচ্ছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা। দেশে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।
গত কয়েক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বনায়ন, আন্তর্জাতিক উন্নয়নের মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো; বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যস্ত হয়ে আছে বিশ্বের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
কৃষিকে কেন্দ্র করে বিশ্বের মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান, দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতা দূর করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৪৫ সালের ১৬ অক্টোবর জন্ম নেয় জাতিসংঘের সংস্থাটি। লাতিন ভাষায় এর স্লোগান ফিয়াত পানিস তথা সবার জন্য রুটি। বর্তমানে ১৯৮টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে পরিচালিত এফএও। আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থা গঠনের ধারণাটি সর্বপ্রথম দেন আমেরিকান কৃষিবিদ ডেভিড লুবিন। ১৯৪৫ সালের ১৬ অক্টোবর কানাডার কুইবেক শহরে আন্তর্জাতিক কৃষি ইনস্টিটিউট গঠন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংগঠনের ইতি ঘটে। পরে এটি খাদ্য ও কৃষি সংস্থা নামে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. প্যাল রোমানি এফএওর জন্মদিনটি বিশ্বব্যাপী উদযাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটি ১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫ দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিবৃত্তির লক্ষ্যে এবং বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে গুরুত্বের সঙ্গে পালন হয়ে আসছে।
১৯৮১ সালেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিটি দেশের সরকার ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে যুক্ত করার প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন শুরু হয়। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা, কৃষির উন্নতিতে মনোযোগ দেয়া, কৃষিভিত্তিক উৎপাদনে উৎসাহদান, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা গ্রহণে উৎসাহদান, গ্রামীণ জনগণ, মূলত নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষের অবদানে উৎসাহ দান এবং প্রযুক্তির সমৃদ্ধিকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে আধুনিক ও উন্নত কৃষি, প্রাণী, বনায়ন ও মৎস্য চাষে সহায়তা করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। তাই বিভিন্ন দেশে কৃষি ও খাদ্যের সঙ্গে জড়িত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এফএও বিশ্বের অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে মিলে একসঙ্গে নানা প্রকল্প হাতে নিয়ে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেয়, যাতে করে সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তার সুযোগ তৈরি হয়।
সংস্থাটির নিরলস প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী যে সাফল্যগুলো অর্জন হয়েছে, তার অন্যতম ৩০টিরও বেশি দেশের সাংবিধানিক কাঠামোতে জনগণের জন্য খাদ্য লাভের অধিকারকে প্রধান মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি ও নিশ্চিতকরণ, সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিয়াস তৈরি, অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়ন, গবাদিপশুর প্লেগ নির্মূলকরণ, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা, খাদ্য ও কৃষিতে বিশ্বের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক বিস্তৃত পরিসংখ্যানীয় ডেটাবেজ বজায় রাখা। এ ছাড়া ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে গরিবের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে জাতিসংঘ প্রণীত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ফলপ্রসূ সহযোগিতা করছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ে কৃষি ও পরিবেশের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গৃহীত কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের ধারাবহিকতায় সরকার কৃষিবান্ধব ও বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় এনে রুপকল্প-২০৪১ -এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮, নিরাপদ খাদ্য আইন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০সহ উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে।
দেশে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভাসমান চাষ, বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন, ট্রান্সজেনিক জাত উদ্ভাবন, পাটের জেনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন ও মেধাস্বত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কৃষির উন্নয়নে সরকার কৃষকদের জন্য সার, বীজসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্যহ্রাস, কৃষকদের সহজ শর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগসহ তাদের নগদ সহায়তা প্রদান করছে। কৃষি, শিক্ষা-গবেষণা খাতে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে যার ধারাবাহিকতায় কৃষি আজ উৎপাদনমুখী ও বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
সরকারের গৃহীত কৃষিবান্ধব নীতি ও কার্যক্রমে দানাদার খাদ্য, মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে। ধান, পাট, আম, পেয়ারা আলু প্রভৃতি ফসল ও ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ আটটি দেশের মধ্যে রয়েছে। কৃষির উন্নয়নে এ সাফল্য সারা বিশ্বে বহুলভাবে প্রশংসিত ও নন্দিত হচ্ছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতসহ কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব ও আধুনিক প্যাকিং হাউজ। দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে সরবার। এতে কৃষিনির্ভর শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ ব্যাপক কর্মসংস্হান সৃষ্টি হবে।
রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ষ ভূমিকা রাথছে। এ সেতুর মাধ্যমে নদীবিধৌত উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্যসম্পদ আহরণ এবং সারা দেশে দ্রুত বাজারজাতকরণের ফলে এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাস ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কৃষিই অন্যতম প্রধান নিয়ামক। কৃষি জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ, কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের কাঁচামাল সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
কৃষির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্যস্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি কৃষির উন্নয়নে কৃষকদের মাঝে খাস জমি বিতরণ, ভর্তুকি মূল্যে সার, কীটনাশক, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের যুগোপযোগী নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ফসলের পাশাপাশি প্রাণিজ আমিষ খাতেও ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রভাবের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তঃসংযুক্ত হয়ে উঠছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ দরিদ্র ও খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষ তাদের জীবনযাত্রার জন্য কৃষি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করে।
বর্তমানে মহামারি, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি খাদ্যপণ্য উচ্চমূল্যে বিশ্ববাজারে রপ্তানির মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। একই সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজি, প্রাণিজ আমিষ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাকে টেকসই করতে ফসলের পুষ্টিসমৃদ্ধ নতুন নতুন জাত ও লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং তা সম্প্রসারণে কৃষিবিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলে নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। সরকারের পাশাপাশি সকলের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে সুখী,সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভাব।
লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট