শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ১১ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মধুকবি মাইকেল
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মধুকবি মাইকেল
২০৪ বার পঠিত
সোমবার ● ১১ ডিসেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মধুকবি মাইকেল

                                                                        ---প্রকাশ ঘোষ বিধান

বাংলা সাহিত্যের অমর একটি নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত।ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি  কবি এবং নাট্যকার ও প্রহসন রচয়িতা। তিনি বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা। তিনি বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর প্রবর্তক। বাংলা কাব্য সাহিত্যে আধুনিতকার সূচনায় তার অবদান সবচেয়ে বড়। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়নের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ নামক মহাকাব্য।

বাংলা ভাষায় প্রথম সফল মহাকাব্য মেঘনাদবধ কাব্য লিখেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মহাকাব্য ছাড়াও গীতিকাব্য, সনেট, পত্রকাব্য, নাটক, প্রহসন ইত্যাদি রচনা করেছেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি হলো দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ ইত্যাদি।

১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলা প্রেসিডেন্সির যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে মধুসূদন দত্ত জন্ম গ্রহন করেন।তিনি   ছিলেন পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল।

মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তার মা জাহ্নবী দেবীর কাছে। জাহ্নবী দেবীই তাকে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতির সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলেন। সাগরদাঁড়ির পাশের গ্রামের শেখপুরা মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। বিদ্বান ইমামের কাছে তিনি বাংলা, ফারসি ও আরবি পড়েছেন। সাগরদাঁড়িতেই মধুসূদনের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। তেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর ১৮৩৩ সালে  তিনি তদনীন্তন হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত হিন্দু কলেজে বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন। হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালেই মধুসূদনের প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৮৩৪ সালে মধুসূদন দত্ত কলেজের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ইংরেজি নাট্য-বিষয়ক প্রস্তাব আবৃত্তি করে উপস্থিত সকলের মনে জায়গা করে নেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন।

মধুসূদন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাই অচিরেই কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি. এল. রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। রিচার্ডসন মধুসূদনের মনে কাব্যপ্রীতি সঞ্চারিত করেছিলেন। হিন্দু কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ডিরোজিওর স্বদেশানুরাগের স্মৃতিও তাকে বিশেষ উদ্বুদ্ধ করত। আঠারো বছর বয়সেই মহাকবি হওয়ার ও বিলাতে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার মনে বদ্ধমূল হয়ে যায়। সাহিত্য সাধনার পর থেকেই মধুসূদনের এক সময় মহাকবি হওয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগে। বিলেত যাওয়ার জন্য তিনি তখন মরিয়া হয়ে ওঠেন। মধুসূদন দত্ত ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি টান থেকেই  বিলেত যাওয়ার সুবিধা হবে এই ভেবে তিনি ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়া হিন্দুধর্ম পরিত্যাগ করে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহন করেন।আর নামের আগে যোগ করেন মাইকেল। হিন্দু কলেজে খ্রিষ্টানদের অধ্যয়ন নিষিদ্ধ ছিল  তাই মধুসূদনকে কলেজ ত্যাগ করতে হয়। ১৮৪৪ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিশপ্স কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৪৭ পর্যন্ত ওই কলেজে অধ্যয়ন করেন। বিশপ্স কলেজে মধুসূদন ইংরেজি ছাড়াও গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখার সুযোগ পান।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত খৃষ্টান ধর্মগ্রহণের পর তার মা শোকে দুঃখে শয্যা নিলেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত খৃষ্টান ধর্মগ্রহনের পরও বাবা চেষ্টা করেছিলেন মধুকে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য। মধুসূদন বাবার মুখের ওপর বললেন, যদি আকাশের চন্দ্র সূর্য না ওঠে যদি পূর্বের বদলে পশ্চিমে সূর্যের উদয় হয় তবু আমি খৃষ্টান ধর্ম পরিত্যাগ করব না। ধর্মান্তরিত হওয়ার ফলে পিতার রোষানলে পড়ে তাজ্য পুত্র হলেন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের একগুঁয়েমি এবং বেধর্মী খৃষ্টান হওয়ার উচিত শিক্ষা দেওয়ার নিমিত্তে পিতা রাজনারায়ণ দত্ত পুত্রকে ত্যাজ্য করার জন্য আর একটি পুত্র সন্তান আশা করেছিলেন। এজন্য তিনি শিব সুন্দরী, প্রসন্নময়ী ও হরকামিনি নামে পরপর তিনজন স্ত্রী গ্রহণ করেছিলেন। কিন্ত পুত্র সন্তানের জনক হতে পারেননি।

ধর্মান্তরের কারণে মধুসূদন তাঁর আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাঁর পিতাও এক সময় অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেন। অগত্যা মধুসূদন ভাগ্যান্বেষণে ১৮৪৮ সালে মাদ্রাজ গমন করেন। মধুসূদন মাদ্রাজেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেন নি। স্থানীয় খ্রিষ্টান ও ইংরেজদের সহায়তায় তিনি একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি পান। প্রথমে মাদ্রাজ মেইল অরফ্যান অ্যাসাইলাম স্কুলে (১৮৪৮-১৮৫২) এবং পরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষকতা (১৮৫২-১৮৫৬) করেন। তবে বেতন যা পেতেন, তাতে তার ব্যয়সংকুলান হত না। তাই তিনি ইংরেজি পত্রপত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। মাদ্রাজ ক্রনিকল পত্রিকায় ছদ্মনামে তার কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। হিন্দু ক্রনিকল নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই অর্থাভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে হয়। পঁচিশ বছর বয়সে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যেই তিনি দ্য ক্যাপটিভ লেডি তার প্রথম কাব্যটির রচনা করেন। মাদ্রাজে বসবাসের সময় থেকেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাংবাদিক, কবি ও দক্ষ ইংরেজি লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মাদ্রাজে বসেই তিনি হিব্রু, ফরাসি, জার্মান, ইটালিয়ান, তামিল ও তেলেগু ভাষা শিক্ষা করেন।

মাদ্রাজে অবস্থানকালেই মাইকেল মধুসূদন প্রথম ও দ্বিতীয় বিবাহ করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম  রেবেকা ও দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম হেনরিয়েটা। পিতা ও মাতার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ১৮৫৬ সালে মধুসূদন দত্ত দ্বিতীয় স্ত্রী হেনরিয়েটাকে নিয়ে কলকাতায় আসেন। কলকাতায় আসার পরে প্রথমে পুলিশ কোর্টের কেরানি এবং পরে দোভাষীর কাজ করেন। এ সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেও তিনি প্রচুর অর্থোপার্জন করেন।

১৮৬২ সালের ৯ জুন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে বিলেত যান এবং গ্রেজ-ইন-এ যোগদান করেন। সেখান থেকে ১৮৬৩ সালে মধুসূদন প্যারিস হয়ে ভার্সাই নগরীতে যান এবং সেখানে প্রায় দুবছর অবস্থান করেন। মধুকবির ভার্সাই নগরিতে অবস্থানকালে তাঁর জীবনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে।মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার গুরুত্ব ও টান বুঝতে পারেন। ভার্সাই থেকেই তিনি যেন মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে নতুনভাবে এবং একান্ত আপনভাবে দেখতে ও বুঝতে পারেন। ইতালিয় কবি পেত্রার্কের  অনুকরণে বাংলায় সনেট লিখতে শুরু করেন। ভার্সাই নগরিতে দুই বছর থাকার পর মধুসূদন ১৮৬৫ সালে পুনরায় ইংল্যান্ড যান এবং ১৮৬৬ সালে গ্রেজ-ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন।

ইংরেজদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রচনা করেন দ্য ক্যাপটিভ লেডি এর মতো বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এই গ্রন্থটি তৎকালীন ইংরেজ সাহিত্যিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। মধুসূদন থাকলে তাদের সাহিত্যকর্ম স্থান পাবে না এই সংশয় তাদের মাঝে প্রকটভাবে দানা বাধতে থাকে। অন্যদিকে তিনি এ গ্রন্থটি বন্ধু গৌরীদাসের মাধ্যমে বেথুন সাহেবকে উপহার পাঠিয়েছিলেন। বেথুন সাহেব গ্রন্থটি পড়ে বিমোহিত হয়ে তাকে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার পরামর্শ দেন। ইংরেজি সাহিত্যে তার কীর্তির যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় তিনি মনক্ষুন্ন হয়ে পড়েন। তখনই বুঝতে পারেন শেকড় ভোলার জ্বালা। ইংরেজি সাহিত্য থেকে ছিটকে পড়ে বন্ধু মহলের পরামর্শে মধুসূদন বাংলাভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। ফলে বাংলা সাহিত্য পেল- শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য, কৃষ্ণকুমারী, মেঘনাদবদ কাব্য,  ব্রজঙ্গনা কাব্য, বীরঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশদপদী কবিতাবলী, হেক্টরবধ এর মতো বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম।

ফ্রান্সের ভার্সাই নগরিতে বসে রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট বঙ্গভাষা। মধুসূদনই প্রথম বাংলা সাহিত্যে সনেট  নিয়ে আসেন। তিনি না থাকলে হয়তো আমরা সনেটের সংজ্ঞার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতাম। মধুসূদন ফ্রান্সের ভার্সাই নগরে থেকেও ভোলেননি স্বদেশভূমিকে। শৈশব স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে। এই নদকে উদ্দেশ্য করে তাই লিখেছেন- “সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে, সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে” এছাড়া তিনি আরও কিছু সনেট লেখেন এই সময়ে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের সনেটগুলি ১৮৬৬ সালে চতুর্দশপদী কবিতাবলী  নামে প্রকাশিত হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন, তাই তাকে বাংলা সনেটের জনক বলা হয়।

১৮৬৭ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। কিন্তু ওকালতিতে খুব একটা সুবিধে করতে পারেননি।  তাই ১৮৭০ সালের জুন মাসে মাসিক এক হাজার টাকা বেতনে হাইকোর্টের অনুবাদ বিভাগে যোগদান করেন।

হাইকোর্টের অনুবাদ বিভাগে যোগদানের দুই বছরের মাথায় এ চাকরি ছেড়ে দেন। ১৮৭২ সালে মধুসূদন কিছুদিন পঞ্চকোটের রাজা নীলমণি সিংহ দেও-এর ম্যানেজার  ছিলেন। তিনি পুনরায় আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং সফল হন। কিন্তু অমিতব্যয়িতার কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অমিতব্যয়িতার ব্যাপারটি ছিল তাঁর স্বভাবগত। অমিতব্যয়ীতার কারণে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদেশে অবস্থানকালেও একবার বিপদগ্রস্ত হয়েছিলেন এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আনুকূল্যে সেবার উদ্ধার পান। বিপদে এগিয়ে আসার কারণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর   কে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘করুণাসাগর’ নামে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। এ নিয়ে মাইকেল-বিদ্যাসাগর সংবাদ শিরোনামে গান রচনা করেছেন ভারতের অনুপম রায়।

বাংলার এই মহান কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের শেষজীবন অত্যন্ত দুঃখ-দারিদ্রের মধ্যে কেটেছে। ঋণের দায়, অর্থাভাব, অসুস্থতা, চিকিৎসাহীনতা ইত্যাদি কারণে তাঁর জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। মাইকেল মধুসূদন দত্তের শেষজীবন সুখের ছিল না। অত্যন্ত দুঃখ-দারিদ্রের মাঝে কেটেছে শেষ কয়েকটা বছর। থাকার যায়গা ছিল না, শেষজীবনে তিনি উত্তরপাড়ার জমিদারদের লাইব্রেরি ঘরে বসবাস করতেন। স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর তিনদিন পরে ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বাংলার প্রথম মহাকবি কপর্দকহীন অবস্থায় জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে একটি মহাকব্যিক অধ্যায়ের শেষ হয় ।

বাংলা ভাষায় প্রকাশিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের মৌলিক গ্রন্থ ১২ টি এবং ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থ ৫টি। এছাড়া অন্যান্য গ্রন্থ রয়েছে।  মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যকর্ম বাংলা রচনা ;নাটক ও প্রহসন শর্মিষ্ঠা নাটক (১৮৫৯) একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০) বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০) পদ্মাবতী নাটক (১৮৬০) কৃষ্ণকুমারী নাটক (১৮৬১) মায়া-কানন (১৮৭৪) কাব্য; তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৬০) ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১) বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২) চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৫) মহাকাব্য ;মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১) ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ গ্রন্থ ;হেক্টর-বধ (১৮৭১)  ইংরেজি রচনা কাব্য; কালেক্টেড পোয়েমস,  দি অপ্সরি: আ স্টোরি ফ্রম হিন্দু মিথোলজি,  দ্য ক্যাপটিভ লেডি, ১৮৪৯  ভিশনস অব দ্য পাস্ট, ১৮৪৯  কাব্য নাট্য রিজিয়া: ইমপ্রেস অফ ইন্ডে।ইংরেজিতে অনুবাদ নাটক রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘রত্নাবলী’, দি ইন্ডিগো প্ল্যান্টিং মিরর মধুসূদন (দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’-এর অনুবাদ) প্রবন্ধ সাহিত্য  দি অ্যাংলো-স্যাক্সন অ্যান্ড দ্য হিন্দু, অন পোয়েট্রি এটসেট্রা,অ্যান এসে।অন্যান্য রচনা,আ সাইনপসিস অফ দ্য রুক্মিণী হরণ নাটক।

মধুসূদন ছিলেন বাংলা সাহিত্যের যুগপ্রবর্তক কবি। তিনি তাঁর কাব্যের বিষয় সংগ্রহ করেছিলেন প্রধানত সংস্কৃত কাব্য থেকে, কিন্তু পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ অনুযায়ী সমকালীন ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালির জীবনদর্শন ও রুচির উপযোগী করে তিনি তা কাব্যে রূপায়িত করেন এবং তার মধ্য দিয়েই বাংলা সাহিত্যে এক নবযুগের সূচনা হয়। উনিশ শতকের বাঙালি নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ মধুসূদন তাঁর অনন্যসাধারণ প্রতিভার দ্বারা বাংলা ভাষার অন্তর্নিহিত শক্তি আবিষ্কার করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যে উৎকর্ষ সাধন করেন, এর ফলেই তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনি মধুকবি নামে পরিচিত।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ