মঙ্গলবার ● ৫ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » জনবল সংকটে অরক্ষিত সুন্দরবন
জনবল সংকটে অরক্ষিত সুন্দরবন
জনবল সংকটে অরক্ষিত সুন্দরবনে অপরাধ বাড়ছে। সুন্দরবন সুরক্ষিত করতে হলে প্রয়োজনীয় জনবল দরকার। জনবল সংকটের কারণে সুরক্ষা পাচ্ছে না ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন।সুন্দরবন বিভাগের চোখ ফাকি দিয়ে বাঘ, হরিণ, মাছ শিকারসহ নানা অপরাধ ঘটাচ্ছে। জনবল অপ্রতুল হলেও নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা অপরাধ দমনে চেষ্টা করছেন বলে বন কর্মকর্তারা জানান।
খুলনা অঞ্চলের সুন্দরবন বিভাগে জনবলের চিত্র হতাশাজনক। ১ হাজার ১৯০টি মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৩২৩টি। সবচেয়ে বেশি শূন্য রয়েছে ফরেস্ট ও ডেপুটি রেঞ্জার, ফরেস্টার, সারেং, নৌকাচালক ও ইঞ্জিনম্যান পদ। ফরেস্ট রেঞ্জার ৩০ জনের ২৭ জন থাকলেও ডেপুটি রেঞ্জার পদে ৪৫ জনের একজনও নেই।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির মধ্যে উপবন সংরক্ষকের ৩টি পদের মধ্যে ১টি ও সহকারী বন সংরক্ষকের ৮টি পদের মধ্যে ৩টি শূন্য রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির মধ্যে ফরেস্ট রেঞ্জারের ৩০টি পদের ২৭টিই শূন্য। তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে মেকানিক্যাল সুপারভাইজারের ১টি পদের ১টি, ফোরম্যানের ২টি পদের মধ্যে ২টি, ইঞ্জিন ড্রাইভারের ৩১টি পদের ১৪টি, হিসাবরক্ষকের ৩টি পদের ১টি, ডেপুটি রেঞ্জারের ৪৫টি পদের ৪৫টি, উচ্চমান সহকারীর ৩টি পদের ১টি, ফরেস্টারের ১০৮টি পদের ৪৩টি, সারেংয়ের ১৭টি পদের ১৩টি, ড্রাফটম্যানের ২টি পদের ২টি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ১৭টি পদের ৫টি, টার্নারের ২টি পদের ১টি, কার্পেন্টারের ৩টি পদের ৩টি, ড্রাইভারের ৫টি পদের ১টি ও কর্মকারের ২টি পদের ১টি খালি রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির মধ্যে ক্যাশ সরকারের ১টি পদের ১টি, সুকানির ৬টি পদের ৬টি, ডেসপাস রাইডারের ২টি পদের ১টি, বন প্রহরীর ১৯৫টি পদের ৭টি, অফিস সহায়ক ২৮টি পদের ৫টি, নিরাপত্তা প্রহরীর ৫টি পদের ১টি, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ৫টি পদের ২টি, নৌকাচালক ৫৪৬টি পদের ১২৩টি, টেন্ডলের ৫টি পদের ১টি, ডেক ক্যাশবের ৩টি পদের ১টি, টেন্ডল স্টোকারের ২টি পদের ১টি, খালাসির ৪৩টি পদের ৭টি ও বাবুর্চির ২টি পদের ১টি শূন্য রয়েছে।
বন সংশ্লিষ্টরা জানান, জনবল সংকটের কারণে বাঘ, হরিণ ও মাছ শিকারসহ নানা অপরাধ ঘটছে। বন্যপ্রাণী পাচার, অবৈধভাবে বনে প্রবেশ, চোরাচালান, আগুন লাগানো ও বনজ সম্পদ ধ্বংস ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বন বিভাগ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে শিকারিদের কবল থেকে ৪৬ কেজি হরিণের মাংস, চারটি চামড়া, হরিণ ধরার ফাঁদ ও বন্দুকের গুলি উদ্ধার করেন বনরক্ষীরা। ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টার দিকে কোবাদক স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে বনরক্ষিরা আড়পাঙ্গাশীয় নদীতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া ধরার অপরাধে ৩ জেলেকে আটক করেছে। এ সময় তাদের নিকট থেকে ১ টি নৌকা হরিণ ধরার ফাঁদ, অবৈধ কাঁকড়া উদ্ধার করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ও বন সংশ্লিষ্টদের অভিমত, সুন্দরবন সুরক্ষায় জনবল গুরুত্বপূর্ণ। জনবল কম থাকলে অনেক সময় অপরাধ নিয়ন্ত্রন করা যায় না। বনের পাশের মানুষ অবৈধভাবে বনে প্রবেশ করে চোরাচালানসহ নানা অপরাধে লিপ্ত হয়। তবে অপরাধ কমাতে জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি লজিস্টিক সাপোর্টও প্রয়োজন। সুন্দরবন সংলগ্ন জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বাড়লে বনের অপরাধ প্রবনতা কমবে ।
সুন্দরবনের অপরাধ সম্পর্কে পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে স্মার্ট প্যাট্রলিং কার্যক্রম চলছে। সুন্দরবন সংলগ্ন জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অপরাধ উদঘাটনকারী ও তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে বাঘ, হরিণ, মাছ শিকার ও চোরাচালানের ঘটনা আগের তুলনায় কমে গেছে।