মঙ্গলবার ● ২ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু আহরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু আহরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়ার একটি গরান গাছের মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে চলতি মৌসুমের মধু আহরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
১ এপ্রিল সোমবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে মধু আহরণের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগীয় বনকর্মতা ড. আবু নাসের মোহসীন। ৩১ মে পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। ১হাজার ৫০০ কুইন্টাল মধু ও সাড়ে ৪ কুইন্টাল মোম সংগ্রহ হবে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এ থেকে সরকারের রাজস্ব আসবে ৩০ লাখ টাকা। গত বছরের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে।
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এমকেএম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, নৌকায় সর্বোচ্চ ১০ জন মৌয়ালি অবস্থান করতে পারবেন। একজন মৌয়ালি ১৫দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৫০কেজি মধু ও ১৫কেজি মোম আহরণ করতে পারবেন। ১৫দিনের বেশি কোনো মৌয়াল সুন্দরবনে অবস্থান করতে পারবেন না। এ বছর ১হাজার ৫০০কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম পাওয়ার আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ হয়েছিল ১৪১৯ দশমিক ৫০ কুইন্টাল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয়েছিল ২০০৬ দশমিক ৬০ কুইন্টাল। ২০২০-২১ অর্থবছরে মধু সংগ্রহ হয়েছিল ২১৫৯ দশমিক ১৫ কুইন্টাল। ২০২১ সালের মধু ও মোম আহরণের জন্য ১হাজার ১২টি অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। ২০২২ সালে ৪১১টি পাস নিয়ে ২ হাজার ৮৯৮ জন মৌয়াল ১ হাজার ৪৪৯ কুইন্টাল মধু এবং ৩৩৪ দশমিক ৭০ কুইন্টাল মোম আহরণ করেন। এ থেকে রাজস্ব আয় হয় ৩২ লাখ ৭৪ হাজার ৭০০ টাকা। ২০২৩ সালের মধু ও মোম আহরণের জন্য ৩৬৫টি অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া হয়। এসব অনুমতিপত্রের বিপরীতে ২ হাজার ৪৫০ জন মৌয়াল সুন্দরবনে যান। তারা ১ হাজার ২২৫ কুইন্টাল মধু ও ৩৬৭ দশমিক পাঁচ কুইন্টাল মোম আহরণ করেন। আর এ থেকে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা সরকারের রাজস্ব আসে। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় বনকর্মতা ড. আবু নাসের মোহসীন বলেন, সুন্দরবন থেকে আহরণ করা মধুর অধিকাংশই সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে সংগ্রহ করা হয়। খলিসা ফুলের মধু শুধুমাত্র সাতক্ষীরা রেঞ্জই পাওয়া যায়। এই মধু সবচেয়ে দাবী। মধু আল্লাহর নেয়ামত এবং এটি সংগ্রহ করে এই অঞ্চলের অনেক জীবন জীবিকা চলে। কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে সবার বদনাম হয়ে থাকে। সুন্দরবন নিজেদের সম্পদ মনে করে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সাতক্ষীরার সুন্দরবনের মধুর সুনাম নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এরআগে দুপুরে বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট সরকারি স্কুলে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের আয়োজনে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগীয় বনকর্মতা ড. আবু নাসের মোহসীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম আতাউল হক দোলন।
ফরেস্ট অফিসার জামিউল হকের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্যামনগর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আইয়ুব ডলি, পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এমকেএম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী, বুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন মৌয়াল ও মধু ব্যবসায়ী উপস্থিতি ছিলেন।
এসময় বক্তরা বলেন, সাতক্ষীরা সুন্দরবনে যে মধু পাওয়া যায়। এটি আর কোথায় পাওয়া যায় না। হাতে গোনা দুই একজন অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে এই এলাকার মৌয়ালদের দুর্নাম হয়েছে। সুন্দরবনের সিংহভাগ বাংলাদেশেও হলেও প্রচারে ভারতীয় অংশ। এটি কাটিয়ে উঠতে হবে। তবে সুন্দরবনের আগে তুলনায় সংরক্ষণ করা গেছে। আমাদের বন বাচিয়ে রাখতে হবে। তা নাহলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে আগামী ১০০বছর বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাবে। সড়ক পথে সুন্দরবনের দেখতে চাইলে সাতক্ষীরায় আসতে হবে। সেজন্য সাতক্ষীরা কৈখালিতে মৌমাছি জাদুঘর করা হয়েছে। আগামীতে সুন্দরবনের অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র করা হয়েছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন পশুপাখি, গাছ, মৌমাছি দেখি উপার্জন করতে পারবে এই অঞ্চলের মানুষ। আর আপনাদের মাছ কাঁকড়া ধরা লাগবে না, সুন্দরবনের গাছ কাটা লাগবে না। ট্যুরিজম শিল্প যতবেশি বিকশিত হবে। ট্যুরিজম শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। যারা হরিণ শিকার করতো। বিষ দিয়ে মাছ শিকার করতো তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে ঘৃণিত কাজ না করার অঙ্গীকার করেছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জে ৯৫০ কুইন্টাল মধু ও ২৮৬ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম দিনে ৬৪জন মৌয়াল পাশ নিয়ে সুন্দরবনের প্রবেশ করেছে। মধু পরীক্ষা নিরিক্ষা নিরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করা হবে। ১০জন হরিণ শিকারী ও বিষ দিয়ে মাছ শিকারী আত্মসমর্পণ করেন।