শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে
প্রথম পাতা » মুক্তমত » পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে
২৪৪ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

২২ এপ্রিল  বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। ধরিত্রী শব্দটি এসেছে ধরনী বা ধরা থেকে, যার অর্থ হলো পৃথিবী। বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে ধরিত্রীকে টিকিয়ে রাখাই দিবসটির একমাত্র লক্ষ্য। পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বাসযোগ্য রাখতে জলবায়ু সংকট এবং পরিবেশ দূষণ রোধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশ্বের পরিবেশ সচেতন মানুষ আজ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। এমন প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বাসযোগ্য রাখতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজকের এই দিনটি পালন করা হয়। সারা বিশ্বে এ দিনটিকে বলা হয় আর্থ ডে বা ধরিত্রী দিবস।পরিবেশ রক্ষার কথা মাথায় রেখে ১৯৭০ সালের পর থেকে বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিভিন্ন আইন।

১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল প্রথমবার পালিত হয়েছিল এই দিবস। ১৯৬৯ সালে সান ফ্রান্সিসকো-তে ইউনেসকো সম্মেলনে শান্তি কর্মী জন ম্যাককনেল পৃথিবী মায়ের সম্মানে একটা দিন উৎসর্গ করতে প্রস্তাব করেন। তবে ১৯৭০-এর ২১ মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তের প্রথম দিনে এই দিনটি উদ্যাপিত হয়। পরবর্তীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর গেলর্ড নেলসন ১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল ‘আর্থ ডে’-এর প্রচলন করেন। কয়েক জন শিক্ষার্থীর সহায়তায় এ দিন আয়োজন করা হয় প্রথম ধরিত্রী দিবস। জলবায়ু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই কোটি মানুষ। তারা মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার প্রতিবাদ করেছিলো।  সেই থেকেই দিবসটির সূত্রপাত। এটিকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতেই জাতিসংঘ দিনটিকে ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ কারণে পরবর্তীকালে গেলর্ড নেলসনকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করা হয়।

আমাদের পৃথিবীকে সাধারণত গোল বলে বর্ণনা করা হয়, কিন্তু এটি আসলে পুরোপুরি গোলাকৃতির নয়। দুই মেরুর কাছে পৃথিবী কিছুটা চাপা, কাজেই আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে পৃথিবী আসলে উপ-বর্তুলাকার। আর সব গ্রহের মতোই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং নিজের অক্ষের উপর ঘূর্ণনের কারণে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে মেরু অঞ্চল কিছুটা চ্যাপ্টা, আর নিরক্ষীয় অঞ্চল কিছুটা চওড়া। এ কারণেই বিষুব রেখা বরাবর পৃথিবীর ব্যাস এক মেরু হতে অন্য মেরু বরাবর ব্যাসের চেয়ে ৪৩ কিলোমিটার বেশি।

পৃথিবীর ৭০ ভাগ পানি।পৃথিবীতে পানি আছে কঠিন, তরল এবং বায়বীয় এই তিনটি আকারে। এছাড়া বিশ্বের উপরিভাগের তিন চতুর্থাংশই পানিতে ঢাকা, যা আছে হিমবাহ, জলাভূমি, লেক, নদী, সাগর কিংবা মহাসাগরের আকারে। তবে বিশ্বের পানির ৯৭ ভাগই মহাসাগরের লবণাক্ত পানি। আর মিস্টি পানি মাত্র ৩ ভাগ।

জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে বিশ্বের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এই দিনটি পালন করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। তাই প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে, পৃথিবীকে সুরক্ষিত ও বাসযোগ্য রাখতে বিভিন্ন দেশে এই দিনটি পালন করা হয় এবং পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পরিবেশ ও জলবায়ুর গুরুত্ব কতখানি, সে সম্পর্কে জনসাধারণকে বার্তা দেওয়া হয়

তবুও আজ পৃথিবী সংকটের মুখে।ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে পৃথিবী। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে মাটির ক্ষয়। তাই আগামী দিনে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না।কৃষি কাজে সেচ হয় এমন জমির পরিমাণ বাড়ছে। মাটির ক্ষয় অনেক বেড়ে গেছে। যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে  আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। শুধু চাষ বেশি হওয়া নয়, ব্যাপক হারে গাছ কাটাও মাটির ওপরে চাপ তৈরি করছে। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে সারের ব্যাপক প্রয়োগ। এর ফলে মাটির স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়েছে। অন্যদিকে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে বিভিন্ন মৌসুমের ফসলের পরিমাণ কমছে।

বিভিন্ন দেশ এবং সরকার দূষণ কমানো এবং পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে দায় ঝেড়ে ফেলতে বেশি আগ্রহী। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলন এবং আলোচনা পৃথিবীজুড়েই চলছে। অনেক দেশ নিয়েছে অনেক কার্যকর উদ্যোগ। বিপরীতে উদাসীনতার দায়ে কোনো কোনো প্রভাবশালী দেশ হয়েছে সমালোচিত।

সমাজের সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক ওতপ্রোত। পরিবেশগত যে কোনও সিদ্ধান্তের অর্থনৈতিক প্রভাব থাকাই স্বাভাবিক। সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গাছ লাগাতে হবে, এই সত্যিটা সকলেই জানা, নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু পর্যাপ্ত গাছ  লাগানো হচ্ছে না। আর গাছ লাগানো হলে সেটা বাচনোর জন্য মাটি বুঝে লাগানো হচ্ছে না। করা হচ্ছে না গাছের পরিচর্চা।

দেশ বা সরকার নয়, বরং ব্যক্তিগত স্তরে কিছু বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যা পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা রোখার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।  পরিবেশ নিয়ে সবাইকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শুধুমাত্র বোঝানোর দিক থেকে খামতি থাকার জন্য কোনও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল প্লাস্টিকের ব্যবহার। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে চট বা অন্য কিছু ব্যবহার করার জন্য উদ্বুব্দ করা হচ্ছে না।

এশিয়ার ৪৮টি দেশের মধ্যে বর্তমানে ৩৮টি দেশে খরার প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে খরার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এর ফলে খাদ্যনিরাপত্তার অভাব অনেক বড় করে দেখা দিয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে  বাংলাদেশেসহ নানা দেশের সামনে যে সমূহ বিপদ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।  গোটা এশিয়ায় পরিবেশের বদলে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, লাওস ও চীনের মতো দেশের। উৎপাদন কমে যাওয়া, দুর্বল পরিকাঠামো, বন্যা, রোগের প্রাদুর্ভাব, পরজীবীর উৎপাতে ফসলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে খাদ্য সুরক্ষা ভালো করে হবে না। এর ফলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। বাতাসে যেভাবে কার্বনের পরিমাণ বাড়ছে, তাতে এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা আরও বেশি। পরিবেশ বদলের কারণে ফসলে প্রোটিন, পুষ্টি, ভিটামিন বি এর মতো উপাদান কমছে।

আমরা পৃথিবীকে যদি মানুষের বাসযোগ্য রাখতে চাই, তবে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। গাছকে ভালোবাসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।গাছ লাগালেই হবে না। গাছ বাঁচাতে হবে। আসছে বর্ষায় যদি আমরা সবাই কমপক্ষে দুটি করে গাছ লাগাই তবে আগামী ১০ বছরে তাপমাত্রা বাড়ার বদলে উল্টো সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে। এবং ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসও কমবে। আমাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হবে। সরকারিভাবে আরও গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করা উচিত আর সরকারের অনুমতি ছাড়া বড় গাছ কাটা নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তন এখন পুরো মানবজাতির বড় ইস্যু হয়ে গেছে। আমাদের বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে গেছে। তাই একটি  বসবাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী গড়তে নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি।

লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ