শনিবার ● ৪ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদে জাম
হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদে জাম
মানুষের কাছে জাম বেশ লোভনীয়। আর পাখির জন্যও উপাদেয় পাকা জাম। কচি অবস্থায় জাম ফল সবুজ থাকে আর পাকলে কালো ও বেগুনি আভার বর্ণ ধারণ করে। পাকা জাম ফল মিষ্টি হয়। তবে হালকা টকযুক্ত সুস্বাদু। জাম একটি রসালো ফল। জাম গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়া জাম ফলের জন্য উপযুক্ত কাল। জাম গাছ অতি সুন্দর এবং পরিবেশবান্ধব একটি দেশীয় প্রজাতির গাছ। আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে এই গাছের ফলটি নিবিড়ভাবে জড়িত।
জামগাছের পাতা বড় বড় হওয়াতে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন নির্গত করে বায়ুদূষণকে রোধ করে। বাতাস থেকে সে প্রচুর পরিমাণে কার্বণ গ্রহণ করে। এটাকে ব্রড লিফ অর্থাৎ বড়পাতার পা বলা হয়। যা প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড খেয়ে নেয় এবং প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন ছাড়ে যেটা পরিবেশকে অত্যন্ত সুন্দর করে। এর চকচকে পাতা হওয়ার জন্য এর ন্যান্সক্যাপ ভ্যালু রয়েছে। বড় জাম আকারে বড়, মাংসল, নরম ও বেশ রসালো। ক্ষুদে জাম আকারে ছোট, শক্ত ও অপেক্ষাকৃত কম মাংসল ও রসালো। আমাদের দেশে মার্চ মাসে জাম গাছে মুকুল ধরে এবং জুন-জুলাই মাসে জাম পরপিক্ক হয়। আষাঢ়ে মূলত জামের ভরা মৌসুম। এজন্য জামকে আবার আষাঢ়ে জামও বলে। বড় জাম (কালো জাম) আগাম পাকে তবে ক্ষুদে জাম মূলত আষাঢ়ে পাকে। কালো জাম গাছের আকার আকৃতি ও পাতা বড় হয় এবং ক্ষুদে জাম গাছের আকার আকৃতি ও পাতা অপেক্ষাকৃত ছোট হয়।
পাইকগাছার গদাইপুর বাজারে রাস্তার পাশে জন্ম নেওয়া ক্ষুদে জাম গাছটি ফুলে ভরে গেছে। গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা ফুলে শোভা ছড়াচ্ছে ক্ষুদে জাম গাছটি। দেশে সর্বত্রই জাম গাছের দেখা মেলে। তবে যশোর,খুলনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে উৎপাদন বেশি হয়। স্থানীয় ভালো জাতের বীজ নির্দিষ্ট স্থানে রোপণ করে বা একবছর বয়সের চারা রোপণ করে জামের আবাদ করা যায়। আজকাল জামের চাহিদা থাকায় বড় জাম গাছের চারা নার্সারিতে উৎপাদন হয়। তবে ক্ষুদে জামের কোন আবাদ নেই। অচাষকৃত ক্ষুদে জাম প্রকৃতিগতভাবেই পথেঘাটে জন্মে থাকে। ফলে তা পাখির জন্য আহারের সংস্থান করে। আবার গ্রাম্য শিশু কিশোরদের কাছে ক্ষুদে জাম লোভনীয়।
আমাদের দেশে ফলের আকার অনুযায়ী দু’ধরনের জাম দেখা চোখে পড়ে। বড় জামকে কালোজাম এবং ছোট জামকে ক্ষুদে জাম বলা হয়। অঞ্চলভেদে ক্ষুদে জামকে আবার লোয়াজাম অথবা লোয়াকরা জাম নামে পরিচিতি আছে। সচরাচর আমাদের চারপাশে বা বিভিন্ন বসতবাড়িতে খুদে জামই দেখা যায়। এই জাম ধরে বেশি এবং অনেক সময় ধরে ক্ষুদে জাম পাওয়া যায়। আর যশোর খুলনা অঞ্চলে পাওয়া যায় এক ধরণের জাম এটাকে হাড়ি জাম বা বড় জাম বলে। এটি অপেক্ষাকৃত বড় আকারের হয় এবং অল্প সময়ের জন্য ধরে।তবে আর এক প্রকার জাম দেখা যায়, ঠাকি জাম। লাউয়াছড়া, চকরিয়া প্রভৃতি ফরেস্টে এই পাহাড়ি ঠাকি জাম এর বড় বড় গাছ দেখা যায়।
জাম ওষুধি গাছ এবং ফলও বহুগুণে গুণান্বিত। সবচেয়ে বেশি আয়রন রয়েছে জামে। বাড়ন্ত ছেলে-মেয়ে, দুগ্ধপ্রদানকারী মা এবং রক্তশূন্যতা যাদের রয়েছে তাদের জন্য জাম অত্যন্ত উপকারী। আর জাম পাতার রস আমাশয়, পেটের পীড়া বা পেটে যত রকমের অসুস্থতা রয়েছে বদহজমসহ এসবের ক্ষেত্রে জামরস উপকারী। কারো যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে জামের একটা-দুটো বীজ খেলে সেই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
বসতবাড়ির আশপাশে পতিত জমিতে ক্ষুদে জাম গাছ জন্মে। ক্ষুদে জাম গাছ রোপন করা হয় না। রাস্তার পাশে ঝোপে-ঝাড়ে এমনিতে জন্ম নেয়। গরু, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি এর তেমন ক্ষতি করে না। এটা এক ধরনের কাউবয় ফুডস। রাস্তার ধারে ঝোপে-ঝাড়ে হওয়াতে রাখাল বালক-বালিকারা এর ফল খেলে শারীরিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। জামগাছ রাস্তার ধারে লাগালে মাটি আটকিয়ে ধরে রাখে। জাম গাছ ঝড়ে ভাঙে না এবং তীব্র রোদে স্নিগ্ধছায়া দান করে। জাম গাছ পশুপাখিদের আশ্রয় দেয়।
উপকারী এই জাম গাছ বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। আগে তো বিভিন্ন মহাসড়কের উপর জাম গাছ ছিল। রাস্তা সম্প্রসারণ করতে যেয়ে প্রায় নব্বইভাগ জামগাছ কেটে ফেলা হয়েছে।বিলুপ্ত প্রায় এই দেশি বন্য ক্ষুদে জাম। আমাদের বিদেশি ফলের পাশাপাশি দেশি ফল সংরক্ষণে বেশি মনোযোগী হওয়া জরুরী।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার অসিম কুমার দাশ বলেন, জাম ফল মানুষ ও পাখির খুব প্রিয়। এ ছাড়া ঔষধি গুণসমৃদ্ধ জাম মানব দেহের নানা রোগর উপশম করে। গ্রামের সড়কের পাশে, বাড়ির আশেপাশে, স্কুল কলেজের পাশে, পতিত জমিতে জামের আবাদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। জাম গাছ যাতে বিলুপ্তির দিকে না যায় এজন্য এর আবাদ সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।