শনিবার ● ২৫ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » উপকূল » ঘূর্ণিঝড় আইলা’র ১৫ বছর ; উপকূলবাসীকে আজও কাঁদায়
ঘূর্ণিঝড় আইলা’র ১৫ বছর ; উপকূলবাসীকে আজও কাঁদায়
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ ২০০৯ সালের ২৫ মে আজকের দিনে সর্বনাশা আয়লাই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় কয়রা ও পাইকগাছাসহ উপকূলীয় জনপদ। প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাত হানার ১৫ বছর আজ ।উপকূল দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলা। ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অনেকে। সে দিনটির কথাও ভুলতে পারেনি উপকূলের মানুষ। ঝড়ে স্বজন হারানো মানুষের কান্না যেনো আজও শোনা যায়। বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সে কথা মনে করে আজও আতকে উঠেন। মুহূর্তের মধ্যেই বিস্তীর্ণ জনপদ যেন লন্ডভন্ড হয়ে ধ্বংস লীলায় পরিণত হয়। কাঁদায় স্বজন হারা মানুষকে।
২১ মে ২০০৯ তারিখে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় আইলার এবং উপকূলভাগে আঘাত হানে ২৫ মে । এর ব্যাস ছিলো প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে, তবে পরে বাতাসের বেগ ৮০-১০০ কিলোমিটার হয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি, সিডরের তুলনায় কম হয়েছে।
মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা এর নাম আইলা দেন। আইলা’ শব্দের অর্থ ডলফিন বা শুশুকজাতীয় জলচর প্রাণী। নামটি এই ঘূর্ণিঝড়ের জন্য নির্ধারণ করেন জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা ‘ইউএন এস্কেপ’-এর বিজ্ঞানীরা।
ঘূর্ণিঝড় আইলা পটুয়াখালি, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। আইলার প্রভাবে নিঝুম দ্বীপ এলাকার সকল পুকুরের পানিও লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। খুলনা ও সাতক্ষীরায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়েছে। ফলে তলিয়ে যায় খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। ৭৬ কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি এবং ৩৬২ কিলোমিটার বাঁধ আংশিকভাবে ধ্বসে পড়ে। এই দুই অঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছে মোট ১৯৩ জন।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, আইলায় প্রায় দুই লাখ একর কৃষিজমি নোনা পানিতে তলিয়ে যায়। আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পানীয় জলের উৎস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় ২,০০,০০০ একর কৃষিজমি লোনা পানিতে তলিয়ে যায় (৯৭ হাজার একরের আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়) কাজ হারায় ৭৩,০০০ কৃষক ও কৃষি-মজুর। আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পানীয় জলের উৎস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। জলোচ্ছাস ও লোনা পানির প্রভাবে, গবাদি পশুর মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ গরু ও ১,৫০০ ছাগল মারা যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কয়েক মাস পর থেকে এলাকাগুলোয় গাছপালা মরতে শুরু করে ও বিরানভূমিতে পরিণত হয়। কমপক্ষে ৩,০০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় (২,৪৩,০০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়)। দুই লাখ ৪৩ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়।
আইলা-পরবর্তী সময়ে উপকূল ভাগের মানুষের জীবনযাত্রায় আমুল পরিবর্তন এসেছে। কারণ ঘূর্ণিঝড় আইলার রেশ কেটে গেলেও তার ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক এলাকায়।অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছে আবার অনেকের পেশা বদলে গেছে।জীবীকার তাগিতে। পুকুরে মিঠা পানির বদলে নোনা পানি। ফলে পানীয় জলের সংকট নিত্যদিনের ঘটনা। নোনা জলের আগ্রাসনে জমিতে উৎপাদন কমে যায়। উপকূল এলাকায় লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের ধানের বীজ সরবরাহ করছেন কৃষি অফিসে।
আইলার ১৫ বছর পরও বিভিন্ন বাঁধের ভাঙন মেরামত না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে উপকূলবাসী। সামান্য ঝড়ে জলবন্দী হয়ে পড়েছে উপকূলের মানুষ। কোনো কোনো গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কপোতাক্ষ আর খোলপেটুয়া নদীর জল। লোনা জলের আগ্রাসনে খাবার পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে অনেক এলাকায়। এমনকি মানুষ অনুপাতে নলকূপের সংখ্যাও নিতান্ত কম।