শুক্রবার ● ৭ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » রাজনীতি » পাইকগাছায় চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা
পাইকগাছায় চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা
রাত পোহালে পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।ভয় ভীতিসহ নানা উত্তেজনার মধ্যদিয়ে প্রচার-প্রচারনা শেষ হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে মটর সাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শেখ কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ হয়। পাইকগাছায় উপজেলা নির্বাচনে চিংড়ি মাছ প্রতিকের চেয়ার প্রার্থী আনন্দ মোহন বিশ্বাসের কুরুচিপূর্ণ পোষ্টার বিলি করার সময় ৬ জুন বৃহস্পতিবার রাতে ৫ ব্যক্তিকে জনতা আটক করে। আটক ব্যক্তিরা হলেন, পৌরসভার ননীচরণ মন্ডলের ছেলে বঙ্গেশ্বর মন্ডল(৫৪), হাজারী লাল মন্ডলের ছেলে অরুন মন্ডল(৬৫), চন্ডি চরণ মন্ডলের ছেলে মান্দার মোড়ল, নলিনি নাথ মল্লিকের ছেলে অরবিন্দু মল্লিক, হোসেন আলীর ছেলে সামাদ। তাৎক্ষনিক থানাপুলিশের সহতায় তাদেরকে আটক করে।পরে ভ্রম্যমান আদালতের বিচারক মোঃ ইফতেখারুল ইসলাম শামীম ওই রাতেই তাদের প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে মোট ২৫০০ টাকা জরিমান আদায় করে ও মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে এ নির্বাচন নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই ভোটারদের মধ্যে। সবকটি পদে আওয়ামী লীগ ঘরনার লোকজন প্রার্থী হওয়ায় কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে পড়া দলীয় নেতাকর্মীর বাইরে সাধারণ লোকজনের ভোটের আমেজ দেখা যাচ্ছে না।
আসন্ন নির্বাচনে উপজেলা থেকে মোট ৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ দিন নিজের শারীরিক অসুস্থ্যতার কথা জানিয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার ইকবাল মন্টু। মূলত এরপর থেকে ভোটের নতুন সমীকরণ শুরু হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না আসায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এবার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কিংবা প্রতীক দেয়নি। বিধায়, আওয়ামীলীগ থেকে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ্বাস ছাড়াও সরকার দলের অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান টিপু (মোটরসাইকেল), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ (দোয়াত-কলম)। এছাড়া সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কৃষ্ণ পদ মন্ডল (আনারস), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. স.ম বাবর আলীর ছেলে স.ম শিবলী নোমানী রানা (কাপ পিরিচ ), মো: আসাদুল বিশ্বাস (হেলিকপ্টার)।
ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে মূলত লড়াই হবে ত্রিমুখী। আনন্দ মোহন বিশ্বাস, আবুল কালাম আজাদ ও শেখ কামরুল হাসান টিপুর মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতার আভাস দিচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররা। আর তারা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদে এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নজর কাড়ছেন আনন্দ মোহন বিশ্বাস। চিংড়ি মাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি। নিরহংকারী ও সদা হ্যাস্যোজ্জ্বল ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে তিনি দল-মত,ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সমাদর পাচ্ছেন। তাই নির্বাচনে তার জয়লাভের সম্ভাবনা বেশী।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনে প্রতীক মূল ফ্যাক্ট হলেও স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সেক্ষেত্রে আনন্দ মোহন বিশ্বাসকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক বোদ্দারা। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি গত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বিবেচনায় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটার উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত বেশি ছিল। সে হিসেবে তাদের পছন্দের প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন আনন্দ মোহন বিশ্বাস।
পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করছেন ৯ জন প্রার্থী। তারা হলেন মোঃ শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ বুলু (তালা) বজলুর রহমান ️ (টিয়া পাখি) শেখ ফরহাদ হোসেন ️ (টিউবওয়েল) মোঃ সিরাজুল ইসলাম (মাইক) এস. এম. হাবিবুর রহমান️ (চশমা) স. ম. আব্দুল ওয়াহাব বাবলু (পালকি) সুকুমার চন্দ্র ঢালী (উড়োজাহাজ) মিলন মোহন মন্ডল (আইসক্রিম) ও মোঃ বাবুল শরিফ (বই)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায করছেন ৪ প্রার্থী। তারা হলেন, লিপিকা ঢালী ️ (পদ্ম ফুল) অনিতা রানী মন্ডল ️ (ফুটবল) ময়না বেগম ️ (হাঁস) ও ইয়াসমিন বুশরা ️ (কলস)
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী পাইকগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সর্বশেষ ১৫ এপ্ৰিল পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্যানুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজার ৯৩৮জন। যার মধ্যে পুরুষ ১লাখ ১৬ হাজার ৮৭২ জন ও নারী ভোটারের সংখ্যা ১লাখ ১৫ হাজার ৬৭ জন। যার একটা বড় অংশ প্রায় ৭৬ হাজার ভোটার সনাতন ধর্মাবলম্বী। তবে পাইকগাছা বাসীর দাবি নির্বাচনে যেই বিজয়ী হোক, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু,অবাদ ও নিরপেক্ষ হয়।