শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

SW News24
শনিবার ● ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » লাইফস্টাইল » ৫০ বছর ধরে হুক্কোর সাথে সংগ্রাম সাত্তারের
প্রথম পাতা » লাইফস্টাইল » ৫০ বছর ধরে হুক্কোর সাথে সংগ্রাম সাত্তারের
১৮ বার পঠিত
শনিবার ● ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

৫০ বছর ধরে হুক্কোর সাথে সংগ্রাম সাত্তারের

---
শাহীন আলম তুহিন.মাগুরা থেকে : নারকেলের আচা থেকে হুক্কো তৈরি করে প্রায় ৫০ বছর জীবিকা নির্বাহ করছেন শ্রীপুরের নাকোল গ্রামের খান পাড়ার আব্দুস সাত্তার (৬৫) । বাপ-দাদার এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে আব্দুর সাত্তারের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে । নিজের কোন জমি না থাকাতে নানা আর্থিক সংকটের মধ্যে থেকে তাকে এ পেশা বাঁচিয়ে রাখতে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে । নিজের বাড়ি সাড়ে ৫ শতকের উপর । সেখানে বৃদ্ধ মা জরিনা খাতুন (৭২) ,৪ মেয়ে ও ৩ ছেলেকে নিয়ে তার সংসার । অতীতে গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা এই হুক্কো খেত । সারাদিন কাজের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ,কৃষক,শ্রমিকসহ নানা বয়সি মানুষ এ হুক্কো খেয়ে শান্তি পেত । প্রাচীনকালে রাজা বাদশারাও এ হুক্কো খেত । হুক্কো শরীরের জন্য খুবই উপকার । হুক্কোর ধোয়া শরীরে প্রবেশ করে না ফলে এটি শরীরের জন্য ভালো বলে অনেকে বলে থাকেন।
হুক্কোর কারিগর আব্দুর সাত্তার জানান,এটা আমার বাপ দাদার পেশা । এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে আমাকে এখনো অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে । হুক্কোর মুল উপকরণ নারকেলের আচা । বর্তমানে গ্রামাঞ্চলেরও নাররেল সংকট থাকার কারণে  হুক্কো তৈরি করতে সংকট দেখা দিচ্ছে । বর্তমানে ১ শত নারকেলের দাম ৭ হাজার টাকা । পূর্বে আমরা ১শ’ নারকেল ৪-৫ হাজার টাকায় কিনতাম । কিন্তু বর্তমানে নারকেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় হুক্কো তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে । নারকেল আমি বিভিন্ন গ্রামের গিয়ে সংগ্রহ করি । নারকেলে সংগ্রহের পর নারকেল ভেঙে আচা বের করা হয় তারপর আচাটি ভালো করে চেচে তা রোদে শুকাতে হয় । হুক্কোর মাথার যে কাঠের নৈচে লাগানো হয় সেটা ২০ টাকা কওে প্রতি পিচ কেনা হয় । হুক্কো তৈরিতে প্রথমে আচার সাহায্যে মাটির কোলকে তার মাথায় মাটির নৈচে লাগানো হয় । এভাবে তৈরি হয় হুক্কো । তারা হুক্কো খায় তারা প্রথমে হুক্কোর ভিতর পানি দেওয়া হয় । তারপর কোলকের মধ্যে খেজুরের ঝোল গুড় দিয়ে তামাক তৈরি হয় । তারপর হুক্কো আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে টেনে খেতে হয় ।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ টি হুক্কো তৈরি করতে পারি । এ হুক্কো মাগুরাসহ নড়াইল,ঝিনাইদহ,কুষ্টিয়ার লালনের আকড়া,ফরিদপুর,রাজবাড়ির মহাজন কাছে বিক্রি করি । ১শ’পিচ হুক্কো পাইকেরি বিক্রি হয় ১২ হাজার থেকে ১৩ হ্জার টাকায় । প্রতি পিচ হুক্কো ২শ’ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয় । ১৯৭৪,৭৫ সালে আমি এ হুক্কো বিক্রি করেছিলাম ১ টাকা দেড় টাকায় । তার ৮০ সালের পর ৫ টাকায় । ৯০ সালের পর তা বেড়ে ২৫ টাকা ৩০ টাকায়,২ হাজার সালে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় ও বর্তমানে ২শ’ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি । এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের অনেক পুঁিজ প্রয়োজন কিন্তু আমরা কোন পুঁজি নেই । ফলে প্রাচীন এ শিল্পটি যদি হারিয়ে যায় তাহলে আমাদেও অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে । তাই বর্তমান সরকারের প্রতি আহবান আমাদের লোন দিয়ে এ প্রাচীন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে জোর দাবী রাখছি ।
স্থানীয় নাকোল গ্রামের ইকবাল খান জানান,সাত্তার চাচা হুক্কোর সাথে প্রায় ৫০ বছর ধওে সংগ্রাম করছেন । এ শিল্প এখন হারিয়ে যাচ্ছে । জেলায় এ পেশার সাথে খুবই কম লোক জড়িত । সারাদেশে হাতে গোনা অল্প সংখক শ্রমিকই এ পেশার সাথে জড়িত। তাই শিল্পকে বাঁিচয়ে রাখতে হবে ।
এ গ্রামের রফিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় লেঅক বলেন,সাত্তার ভাই দীর্ঘদিন ধরে এ পেশার সাথে জড়িত । এ পেশায় বর্তমানে তেমন মানুষ দেখা যায় না । তার সংসাওে নানা অভাব অনাটন। বৃদ্ধ মা ও তার সন্তানদেও নিয়ে তার সংসার। হুক্কো এ শিল্পটি অতি প্রাচীন। আগে রাজা-বাদশাসহ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের একমাত্র অবলম্বন ছিল এ হুক্কো। তার শিল্পকে বাচিঁয়ে রাখতে হবে। এ জন্য যথাযথ কতৃপক্ষকে এগিয়ে আসা খুবই জরুরি।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)