শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১৩ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » দুর্লভ ভেষজ লতাকস্তুরী
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » দুর্লভ ভেষজ লতাকস্তুরী
৬৪ বার পঠিত
রবিবার ● ১৩ অক্টোবর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দুর্লভ ভেষজ লতাকস্তুরী

---

ভেষজ উদ্ভিদ লতাকস্তূরী। লতাকস্তুরী বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। লতা কস্তুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জন্মে থাকে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সহ অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বার্মা এবং আফ্রিকার দেশসমূহে দেখতে পাওয়া যায় লতা কস্তুরী। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে এটি বেশি পাওয়া যায়। জঙ্গলের ধারে জন্মে। লতা কস্তুরী দুষ্প্রাপ্য। অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন নামে এ উদ্ভিদের পরিচিতি আছে লতা কস্তুরীর।  স্থানভেদে লতাকস্তুরী, কালাকস্তুরী, মুসকদানা, জটাকস্তুরি, বেন্ডা, কসুক, বনঢেঁড়শ নামে পরিচিত। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এর নাম লতাকস্তুরী, ইউনানি মতে এর নাম হাব্ব-উল-মুশক এবং ইংরেরি নাম আমব্রেট।

কস্তুরীর নাম শুনলে বিশেষ প্রজাতির হরিণের নাভির সুগন্ধিকে বোঝায়। মৃগনাভী কস্তুরীর যে সুগন্ধ, লতাকস্তুরীর সুগন্ধও তেমনই। লতাকস্তুরী আসলে হরিণের নাভি নয়, এটি একটি মূল্যবান ঔষধি গাছ। লতাকস্তুরীর বীজের স্বাদ, গন্ধ এবং এর সৌরভ মোহনীয় করে তোলে সবাইকে। এর বীজে কস্তুরীর ঘ্রাণের মিল থাকায় হয়তো  লতা কস্তুরী নাম হয়েছে। লতাকস্তুরীর ভেষজগুণ অকল্পনীয়।---

লতা কস্তুরী বর্ষজীবী উদ্ভিদ। আকারে খুব ছোট। নরম লোমযুক্ত কাণ্ড এক-দুই মিটার উঁচু হতে পারে, পাতাগুলো সাধারণত পাঁচ-সাত ভাগ করা ত্রিভুজাকার। বোটা পাতা থেকে লম্বা হয়। পাতা দেখতে ঠিক হৃদপিন্ডের মত, মোট তিন থেকে পাঁচটি অংশে বিভক্ত। পাতার আগার দিকটা সরু, কিনারা করাতের দাঁতের মতো খাঁজকাটা। পাতার উভয় দিক লোমে ঢাকা। আকাশে হলুদ রঙের ফুল ফোটে উল্টে দেখতে খুবই সুন্দর অবিরাম দেখতে ইচ্ছে করে ।এই গোষ্ঠীর পরিচিত নাম লতা কস্তুরী বা মুসুকদানা লতা কস্তুরী গ্রামাঞ্চলে খুব বেশি দেখতে পাওয়া যায় না উঁচু এবং সমতল জমিতে লতাকস্তুরি জন্মে, কোন কোন সময় পথের ধারে বন জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। এই গ্রাম অঞ্চলে গাছটি বনঢেড়স নামে পরিচিত। লতা কস্তুরী বীজ মাছ ধরার চারের এর জন্য বিখ্যাত। শহরের বাজারের দোকানে লতা কস্তুরী বীজ কিনতে পাওয়া যায়। বীজে প্রচুর পরিমাণে সৌরভ সুগন্ধি আছে। লতা কস্তুরী বীজের সুগন্ধির কারণে একসময় মৃগনাভির বিকল্প হিসেবে কাজ করতো এবং ব্যবহৃত হতো এবং এ কারণেই এর কস্তুরী নাম হয়েছে ।
লতা কস্তুরীর  ফল অনেকটা ঢেড়সের মত দেখতে, বীজ খেতে মিষ্টি স্বাদ যুক্ত। ফুলের রঙ হলুদ, মাঝে বেগুনী। ফুল তিন-চার ইঞ্চি বড় হয় উজ্জ্বল হলুদ রঙের ওপর বেগুনি আভা। ফল লম্বায় ছয় সেন্টিমিটার, ডগা সূচালো ও রোমযুক্ত। ফলের মধ্যে কালো রঙের বীজ হয়। কার্তিক মাসে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং বৈশাখ মাসে শেষ হয়। লতাকস্তূরীতে সাধারণত বর্ষকাল থেকে শীতকাল পর্যন্ত ফুল ও ফল পাওয়া যায়। লতা কস্তুরী বিভিন্ন রোগে ঔষধি রুপে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ভেষজশিল্পে এর ফল, বীজ, শিকড়, পাতা ও কাণ্ডের বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে।

আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসায় লতাকস্তুরীর বীজ হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়া, গনোরিয়া, হিস্টিরিয়াসহ ইউরোজেনিটাল সমস্যার মতো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বীজের বাতজ্বর, স্নায়বিক ব্যাধি, গলা ব্যথা এবং হিস্টিরিয়া নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। লতাকস্তুরীর ফুল গর্ভনিরোধক হিসেবেও ব্যবহার হয়। মুখের আলসার, মাড়ির রক্তপাত, আলগা দাঁত এবং মুখের দুর্গন্ধের মতো সমস্যা সারাতে কোমল ফল চিবিয়ে খেতে দেওয়া হয়। এর কচি ফল সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। অপরিমেয় ঔষধি গুণ সম্পন্ন এই ভেষজ উদ্ভিদটির প্রায় প্রতিটি অংশ কোনো না কোনোভাবে ব্যবহৃত হয়। অজ্ঞতা আর অবহেলায় লতা কস্তুরী বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।





আর্কাইভ